ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ধর্ষনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বাল্য বিয়ে পড়ানোর অপরাধ মামলায় ইউপি বায়েক ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, কসবা মহিলা কলেজের প্রভাষকসহ ১০ আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ ব্যুরো ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই তদন্তে সকল আসামীর বিরুদ্ধে অপরাধের সাথে জড়িত থাকার সত্যতা খুঁজে পেয়ে এ চার্জশিট দাখিল করে।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী। ওই ছাত্রী গত ৮ জুলাই ২০১৭ ইং বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরছিলো। পথে ওই গ্রামের মোসলেম মিয়ার বাড়ির পাশে পাহাড়ের কাছে পৌছলে ওৎ পেতে থাকা একই গ্রামের মামুন মিয়ার লম্পট ছেলে শাকিবুল পেছন থেকে ঝাপটে ধরে মুখে ওড়না পেচিয়ে কাঠ বাগানের ভিতর নিয়ে যায়। সেখানে জোরপূর্বক ধর্ষন করে শাকিবুল এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেয়। ওই ছাত্রী বাড়িতে গিয়ে মাকে জানায় এবং মা ধর্ষকের বড়িতে গিয়ে এ ঘটনা জানালে উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে শাকিবুলদের বাড়ি থেকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। পরদিন থানায় মামলা করতে আসলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল মামুন ভূইয়া লোক পাঠিয়ে এ ঘটনা সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দেয়। ধর্ষকের বাবা মামুন মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার কতিপয় সাহেব সর্দারগন মিলে ধর্ষন ঘটনা ধামা চাপা দিতে ধর্ষিতার মাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ের নাটক সাজিয়ে বিয়ে পড়ায়। বাল্য বিবাহ হওয়ার কারনে ২ বছর পর বালিকা বধুকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ছেলের বাড়িতে তুলে দেয়ার অজুহাতে ধর্ষিতা বালিকার বাড়িতে মেয়েসহ ছেলেকে থাকতে বাধ্য করে ইউপি চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্ট আসামীগন। ১৮দিন পর ধর্ষক শাকিবুলকে পরিকল্পিতভাবে লুকিয়ে রেখে শাকিবুলের বাবা মামুন মিয়া ও গ্রাম্য সর্দারগন এবং ধর্ষিতার মায়ের বিরুদ্ধে গুমের রটনা করে থানায় অভিযোগ দায়ের করে। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের লোকজন প্রতিবাদ মুখর হলে আসামীরা পিছু হটে। পরে উপায়ন্তর না পেয়ে ধর্ষিতার মা পারভীন আক্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করেন । আদালত মামলাটির তদন্তভার দেন পিবিআইকে। পিবিআই তদন্তকারী কর্মকর্তা মো.শাহ ফজলে আজম পাটোয়ারী ব্যাপক তদন্ত করে পুঙ্খানুভাবে সকল আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এবং স্বাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। চার্জশিটভ’ক্ত আসামীরা হলেন ধর্ষক শাকিবুল হাসান (২২), মো.মামুন মিয়া (৫০), মো.মশিউর রহমান(৪০), জসিম উদ্দিন (৩৫), এমরান মিয়া (২২),মো.আবুল কাশেম (৪২), খোদেজা বেগম (৪৫), বায়েক ইউপি চেয়ারম্যান ও শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল মামুন ভূইয়া (৫৭) ও বায়েক ইউপি সদস্য মো.নিজাম উদ্দিন (৩৪), কসবা মহিলা কলেজের প্রভাষক মো.নজরুল ইসলাম (৪০)। খোঁজ নিয়ে জানা যায় চার্জশিটটি ২০১৭ সালে ১৮ ডিসেম্বর আদালতে দাখিল করা হলেও জিআরও মামলাটি বিজ্ঞ বিচারকের কাছে পেশ করেননি। এ ঘটনায় নির্যাতিত পরিবারটির মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।