প্রশান্তি ডেক্স॥ সৈয়দ আলমাস কবীর- আগামী দশকের মধ্যেই রোবটিক্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠবে। স্বাস্থ্যসেবা, গ্রাহকসেবা, পরিবহন, গৃহস্থালি কার্যকলাপ ও রক্ষণা-বেক্ষণ, ব্যাংকিং ইত্যাদিতে এই নতুন প্রযুক্তির উপস্থিতি হয়ে উঠবে সুস্পষ্ট ও সর্বব্যাপী। ফলে অর্থনীতিতে এর বিশাল প্রভাব পড়বে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিশিষ্ট স্বচালিত গাড়ি, মানুষের বদলে কাজ করতে পারে এমন বুদ্ধিমান ডিজিটাল এজেন্ট এবং রোবট নিয়ে এখন প্রচুর গবেষণা চলছে এবং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এগুলো খুব দ্রুত ঢুকে পড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই এখন প্রশ্ন উঠছে যে, এই নেটওয়ার্ক করা, স্বয়ংক্রিয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সম্পন্ন অ্যাপ্লিকেশন এবং রোবোটিক্স ডিভাইসগুলো কি কর্মসংস্থানের সুযোগ কমিয়ে দেবে?
বিশেষজ্ঞদের এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী মত রয়েছে। একদল মনে করেন যে, এই রোবট ও ডিজিটাল এজেন্টগুলোর প্রভাবে শ্রমিক ও কর্মচারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে এবং আয়-বৈষম্য বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বেকারত্ব তো বাড়বেই, কাজে অনুপযুক্ত লোকের সংখ্যাও বেড়ে যাবে। পরিণতিতে সামাজিক ভাঙনও দেখা যেতে পারে।
অপর দল মনে করেন যে, এ আশঙ্কা একেবারেই অমূলক। তারা বলেন, প্রযুক্তি কখনোই নেট কর্মসংস্থান কমায় না। অর্থাৎ, প্রযুক্তি ব্যবহারে যতটা না চাকরির সুযোগ কমে, তার চেয়ে অনেক বেশি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। শিল্প বিপ্লবের সময় থেকেই তা হয়ে আসছে এবং মানুষ ঠিকই তার উদ্ভাবনী দক্ষতা ব্যবহার করে নতুন নতুন কাজ ও জীবিকা তৈরি করে নেবে।
রোবটিক্স ও এআই কর্মসংস্থানের ওপর একটি ইতিবাচক বা অন্তত নিরপেক্ষ প্রভাব ফেলবে বলে যারা মনে করেন, তারা বলেন, শিক্ষা এবং প্রযুক্তিতে আমূল পরিবর্তন এনে কাজের প্রকৃতি পরিবর্তন করে ফেলা হবে। কিছু শ্রেণীর কাজ এআই এবং রোবটিক্স দ্বারা পরিচালিত হবে ঠিকই, তবে সেসব কাজের পরিসেবার মান বাড়ানোর জন্য সৃজনশীল জনশক্তির প্রয়োজন হবে। কাউকে না কাউকে তো এসব এআই সম্পন্ন উন্নত যন্ত্রগুলোকে তৈরি করতে হবে এবং পরবর্তীতে তা কাজ না করলে সারাতে হবে! প্রযুক্তির ব্যবহার কাজের ধরন পাল্টে দেবে, এতে সন্দেহ নেই, কিন্তু কাজের সংখ্যা কমাবে না। স্বচালিত ট্যাক্সিতে হয়তো ট্যাক্সি-ড্রাইভারের প্রয়োজন থাকবে না, কিন্তু সেই ট্যাক্সিগুলোকে পরিচালনা করা ও সার্ভিস করার জন্য অনেক কর্মচারীর প্রয়োজন হবে। একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র শুধুমাত্র সেটাই করতে পারে, যার জন্য যন্ত্রটিকে বানানো হয়েছে। গতানুগতিক কাজের বাইরে অন্য কিছু করতে গেলেই মানুষের দরকার হবে। সংযোজন, প্যাকেজিং, বিপণন, ইত্যাদি কাজের জন্য মানুষের বিকল্প তৈরি এখনও অনেক দূরের কথা। এআই সম্পন্ন যন্ত্রাদি এবং রোবটের জন্য প্রচুর দক্ষ প্রোগ্রামারের প্রয়োজন হবে।
এছাড়া এমন কিছু কাজ আছে যা কেবল মানুষই করতে পারে। অনেক কাজ আছে, যেখানে সহানুভূতি, সৃজনশীলতা, বিচার-ক্ষমতা বা সমালোচনামূলক চিন্তা ইত্যাদি মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো প্রয়োজন। এই ধরনের কাজে যত বুদ্ধিমান রোবটই ব্যবহার করা হোক না কেন, মানুষকে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে না। পুনরাবৃত্তিমূলক কাজে প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে কিন্তু যেখানে চিন্তাশক্তি, সৃজনশীলতা, সমন্বয়, সমস্যা সমাধান কিংবা উদ্ভাবনের প্রয়োজন, সেখানে মানুষের হস্তক্ষেপ লাগবেই।
আগামী এক দশকে এআই বা রোবটিক্স-এর খুব বেশি উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সেবাভিত্তিক কাজে-কর্মে এআই আরো বেশি করে ব্যবহৃত হতে থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই এবং এর ফলে স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের কাজের সুযোগ কমে আসবে ঠিকই, তবে নতুন দক্ষতার চাহিদা বারবে। কারণ ‘স্বয়ংক্রিয়’ যন্ত্রগুলো সত্যিকার অর্থেই স্বয়ংক্রিয় হতে আরো অনেকদিন সময় লাগবে এবং ততদিন পর্যন্ত এ যন্ত্রগুলো চালানোর জন্য মানব-কর্মীর প্রয়োজন থেকেই যাবে।
সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন যে, বিভিন্ন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক কারণে খুব তাড়াতাড়ি কর্মসংস্থানের সুযোগ কমার সম্ভাবনা নেই। বেকারের সংখ্যা বেড়ে গেলে একটি দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে, যা কোনো রাষ্ট্রেরই কাম্য নয়। ক্রয় ক্ষমতাই যদি না থাকে, তাহলে বাড়তি উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তাও তো থাকবে না।
তবে এটা ঠিক যে, আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য প্রস্তুত নয়। অদূর ভবিষ্যতে রোবটিক্স-কেন্দ্রিক কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতার আবশ্যিক শর্ত হবে কর্মদক্ষতা। এর জন্য এখন থেকেই যদি আমরা শিক্ষা-ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন না নিয়ে আসতে পারি, তাহলে বেকারের সংখ্যা বারবেই। আর তা মোকাবেলা করার জন্য দরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই শিল্পে নতুন নতুন প্রযুক্তির অবতারণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাতে শিক্ষাক্রমে তার অন্তর্ভূক্তি হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা প্রাথমিক পর্যায় থেকেই যদি শুরু করা যায়, তাহলে প্রযুক্তি-সচেতন এক জাতি তৈরি হবে এবং ভবিষ্যতের এআই ও রোবটিক্স নির্ভর কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হতে কোনো সমস্যা হবে না। লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)।
আগামী নির্বাচন নিয়ে তিনি ও তার প্যানেল জয়ী হতে পারলে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করবেন। কিন্তু তিনি বলেই বেড়াচ্ছেন মেম্বারদের জন্য প্রাথামিক ও প্রথমে প্রায়োরিটি বজায় রাখবেন। জনাব আলমাস কবীরের টিম হরাইজন এর মুটো হলো: কানেক্ট, কোলাবরেশন এন্ড গ্রো; গ্রুইন টুগেদার। Team Moto : Connect,Collaborate and Grow #Growing Together.
আগামী দিনের সকল কর্মকান্ড যদি পরিচালিত হই এই লক্ষে তাহলে বেসিস আরো অনেকদুর এগিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস মেম্বারদের।