লোকাল মার্কেটকে বিদেশি কোম্পানির আগ্রাসন থেকে রক্ষা করবো: ফারুক

তাজুল ইসলাম নয়ন॥ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাণিজ্য সংগঠন বেসিস নির্বাহী কমিটির ২০১৮-২০২০ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তরুণ তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও রেডিসন ডিজিটাল টেকনোলজিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ফারুক। নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি নতুন উদ্যোক্তাদেরকে ইএফ ও গভমেন্ট ফান্ড পেতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।faeq in jugantor
তিনি বেসিসে অল্প সময়ে পরিচালনা পর্ষদে যাওয়ার পর নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য নানামুখি পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। তিনি এবার বেসিস নির্বাচনে বিজয়ী হলে অসমাপ্ত কাজ শেষ করবেন। তিনি মনে করছেন, এর মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তাদের আর কখনই অর্থ সংকট হবে না।
একই সঙ্গে তিনি নির্বাচিত হলে বেসিস মেম্বারস ক্লাব, ওয়েলফেয়ার ফান্ড, বেসিস সদস্য ফি কমানো এবং বেসিস সচিবালয়কে সদস্য বান্ধব সচিবালয় বানানো হবে বলেও তিনি জানান।
বেসিসের মেম্বারস্ ওয়েলফোর স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজের উদ্যোগে আইটি স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছেন।
ফারুক বলেন, লোকাল মার্কেটকে বিদেশি কোম্পানিগুলোর আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারের পলিসি তৈরিতে সহয়তা করবো। এর ফলে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় সফটওয়্যার খাত দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করবে।
তিনি জানান, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংকের সাথে একটি চুক্তি করার ফলে এখন আইটি স্টার্টআপগুলো জামানত ছাড়াই ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন পাচ্ছেন। এছাড়াও ইস্টার্ন ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে লোকাল ও আন্তর্জাতিক মার্কেটে নানান সুবিধা, বেসিস সদস্যদের জন্য বিনামবন্দর, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছাড় ও সুবিধা পেতে বিশেষ স্মার্টকার্ড চালু করা হয়েছে।
দেশের তরুণদের মেধা ও উদ্ভাবনী সম্পর্কে ফারুক বলেন, আমাদের তরুণদের মেধা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা অসাধারণ। সম্মিলিত সহযোগিতা পেলেই তারা অনেকখানি এগিয়ে যেতে পারবে।
দেশে একটি স্টার্টআপ কালচার গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যেই স্টার্টআপ বাংলাদেশ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তরুণ উদ্ভাবকদের উৎসাহিত করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আইডিয়া তথা উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় স্টার্টআপের আর্থিক সহায়তা ছাড়াও কো-ওয়ার্কিং স্পেস, মেন্টরিং, স্টার্টআপ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
এ ছাড়া দেশের নির্মীয়মাণ ২৮টি হাইটেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে স্টার্টআপদের জন্য ডেডিকেটেড ফ্লোরও ব্যবস্থা করে দেয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এসব তরুণদের ব্যবসাগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে বিশ্ব স্টার্টআপ মানচিত্রে বাংলাদেশ অচিরেই জায়গা করে নেবে বলেও তিনি মনে করেন।
বেসিসের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সম্পর্কে তিনি জানান, যতটুকু সময় পেয়েছি সে সময়ে মন মতো কাজ করতে পারিনি। তাই এবারের নির্বাচনে বেসিসের উন্নয়নে কাজ করার আবারো সুযোগ চাই। সে সুযোগ তৈরি করে দিবেন বেসিস সম্মানিত সদস্যরা। যাদের ভালোবাসা আর মূল্যবান ভোট আমাকে তাদের পাশে থাকার সুযোগ দিবে। দেশে প্রযুক্তি খাতগুলোর সম্ভাবনা নিয়ে ফারুক বলেন, বেসিস তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত সংগঠন।
বেসিস নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গন সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ অনেক। বেসিস তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।
বেসিস হচ্ছে দেশীয় সফটওয়্যার, ই-কমার্স এবং তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা (আইটিএস) খাতের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র সংগঠন। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সফটওয়্যার, ই-কমার্স এবং আইটিএস খাতের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এই খাতে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজার তৈরি হয়েছে। দেশে ভালো মানের সফটওয়্যার নির্মাতাদের যদি প্রমোট করা যায় তবে গার্মেন্টের পরেই বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে অন্যতম খাত হতে পারে এটি।
এছাড়া ই-কমার্সেও আমাদের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে আইটিএস খাতের কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে। আর এই তিনটি সম্ভাবনাময় খাতের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হচ্ছে বেসিস। ফলে এই শিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে হলে বেসিসই হতে পারে কাঙ্খিত লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণেই আমি এবারও বেসিস নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে তার পথচলা প্রায় ১৪ বছর। পেশাগত জীবনে রেডিসন ডিজিটাল টেকনোলজিস লিমিটেড ও সফট্ পার্ক নামের দুটি আইটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তরুণ এ উদ্যোক্তা। তার প্রতিষ্ঠান ইআরপি, হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট, স্কুল ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করে। তিনি ‘আমাদের কাগজ’ নামের একটি দৈনিক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা।
ফারুক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গেও জড়িত। লাকসামে আতাকরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং কুমিল্লায় একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে স্থানীয় তরুণদেরকে আইটি শিক্ষায় শিক্ষিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেন তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিস শেষ সময়ে পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া পরিবর্তন ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিওর মাধ্যমে বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকান্ডে যুক্ত আছেন ফারুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.