খানাখন্দ ও খুড়া-খুড়িতেই যেন স্থবির হয়ে আছে সুয়ারেজ এবং পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা। সারাদেশের রাস্তার বেহাল দশার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের চলমান ধারাবাহিকতা। যার কবলে জনগণ। তবে পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে এগুলে হয়তো কিছুটা স্বস্থি পাওয়া যেত। আগামী দিনের যত মনুষ্য ও প্রাকৃতিক জঞ্জাল সৃষ্টিহবে বিশেষ করে এই বর্ষা মৌসুমে তা কিন্তু সরকারের ঘারে দায় হিসেবে বর্তাবে। যখনই কোন রাস্তা সংস্কার কাজ শেষ হয় এবং স্বস্থির নি:শ্বাস নেয়া শুরু হয় তখনই আবার নতুন কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনগণ এবং সরকার উভয়কেই লড়াদশায় পড়তে হয়। এখানে আমার প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা এই দায় কি জনগণের না সরকারের? তবে দায় কেউই এড়াতে পারবে না বলে মনে হয়। যেখানে জনগণ দ্বারা সরকার নির্বাচিত এবং সরকার দ্বারা পরিকল্পনাকারীদের নির্বাচন ও স্বপদে নিয়োগ দেয়া হয় এমনকি তাদের পরিকল্পনাকে কার্যে পরিণত করার জন্য অনুমতিসহ কার্যাদেশ দেয়া হয় সেখানে ঐ পরিকল্পকদের দোষারুপ না করে সরকার এবং জনগণকেই দায় নিয়ে ওদের রেহাই দিতে হবে।
আমাদের একটি প্রস্তাব এক্ষেত্রে বিবেচনায় আনার জন্য সরকারের মাধ্যমে ঐ পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠান এবং পরিকল্পনাকারীদের প্রতি রাখতেই পারি। তবে তার এখতিয়ার সাংবিধানিকভাবে আছে কিনা তা হয়তো অজানাই থাকেব। কারণ ইদানিং বেশী ব্যবহৃত হচ্ছে সাংবিধানিক অধিকার এবং অনধিকার এর বিষয়টি। আমি মানবিক দিক ও সামাজিক, জনঅসন্তোষ এমনকি জনদুর্ভোগের বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলতে চাই পরিকল্পনা যেন আর স্বল্পমেয়াদি না হয়। দুই বছর, পাঁচ বছর বা ১০ বছর নয়। পরিকল্পনা অন্তত ৫০ অথবা ৭০ অথবা সামর্থ থাকলে আগামী ১০০ বছরের করা হউক। সেই অনুযায়ী বাস্তবায়ন করলে দেখা যাবে, জনদুর্ভোগ এবং অর্থ উভয় সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। যেখানে আমাদের দেশের মানুষ একটি লক্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পিছনে সংঘবদ্ধ সেখানে কেন আমরা স্বল্পমেয়াদী খুড়াখুড়িতে আমাদের উজ্জ্বল অর্থনীতি এবং ভাগ্যকে মাটির নীচে পুতে দেব? না এখান থেকে মুক্তির পথ খুবই সহজ এবং যৌক্তিক। যেখানে একটি পরিকল্পনা গ্রহনে এক, দুই বছর সময় ব্যায় হয় এবং তা বাস্তবায়নে আরো এক, দুই বছর বা কম অথবা বেশী ব্যায় হয় সেখানে কিভাবে স্থায়ীত্ব এবং টেকসই নিশ্চিত করা যাবে? পরিক্ষীত ও প্রমানীত যে, উন্নয়ন দৃশ্যমান এবং জনস্বস্থি ফিরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের দেখতে হয় নুতন এক উন্নয়ন অথবা কাজের গাফিলতির চিত্র। আর এর যাতাকলে আমাদের স্বস্থি বিলীন হয়ে দিশেহারা অশ্বস্তির উপায়-অন্তরহীন অবস্থার স্বীকারে পরিণত হয়।
যাক আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এত বড় কথা বা উপদেশ মানায় না; তারপরও বলতে চাই আপনারা জ্ঞান ও গুণী এবং আপনাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা সুযোগ দিয়েছেন; তাই জ্ঞান ও গুণের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আমাদেরকে স্বস্থিদায়ক জিবনের নিশ্চয়তা উপভোগের সুযোগ দিন। আমরা জনগণ আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকচে চাই, মর্যাদার আসনে আপনাদেরকে রাখতে চাই। সবই মায়া এবং ছায়া। এই পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী তাই এরই মধ্যে কিছুটা অন্তত জীবদ্দশানুযায়ী স্থায়ী হওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।
আসন্ন বর্ষকালে কি পরিণতির স্বীকারে হাবুডুবু খাব তা আঁচ করতেই ঘ্যা শিহরে উঠে। একজন দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে জবাবদিহি করার অধিকার আমার আছে ঠিক তেমনি আপনারও আছে। কিন্তু সেই জবাবদিহীতা নিয়ে যে দ্বন্ধের দোলনচলে আবদ্ধ তা কি করে ঘোচানো যায়। গত বর্ষা মৌসুমে ঢাকাবাসী পানিতে নাকাল ছিলো এবং আগামীর প্রশ্নে জর্জরিত ছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ। কেউ কেউ আশ্বাসও দিয়েছিল এই বর্ষাকাল অন্তত গতবারের মত হবে না। উন্নতি হবে এবং ঢাকাকে পানিতে আচ্ছন্ন করানো যাবে না। জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে অনেক পদক্ষেপ নিয়ে ঢাকা বাসীকে নিরবচ্ছিন্ন সেবার নিশ্চয়তা দেয়া হবে। সুফল ভোগ করে শুকরিয়া আদায়ের চেষ্টারত থাকার সুযোগ পাবে। কিন্তু কি তাই? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সকল উন্নয়ন কাজের যাতাকলে এখন আগাম জলবদ্ধতার অশনি শংকেত বেজে যাচ্ছে। দৃশ্যত কোন উন্নয়ন কাজের লক্ষণ দেখা যায় না বা চোখে পড়ে না। যার থেকে নিশ্চিত হয়ে আগামীর পথ চলতে আশান্বিত হবো। তবে চোখে পড়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের খুড়া-খুড়ি ও খানাখন্দ এবং রাস্তা ব্লকের দৃশ্য। মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, ড্রেনেজ ও সুয়ারেজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাস্তা মেরামত এর কাজ। এই সবই আগামীর জন্য ভাল এবং স্বস্তির কিন্তু এবারের জন্য জনদুর্ভোগের চরম পর্যায়ের ভোগান্তি।
সকল কাজ একসঙ্গে শুরু হওয়া ও দীর্ঘসূত্রীতার কারনে আসন্ন বর্ষায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার আশায় মানুষ। কারণ ড্রেনেজ ব্যবস্থায় সুশৃঙ্খল কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি বরং প্রতিবদ্ধকতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় যে, পরিচ্ছন্নতা কাজেরও কোন সুত্রপাত দেখা যায়নি। পানি সরানোর রাস্তায় যে নতুন এক পয়নিষ্কাশন ও স্যুয়ারেজ ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হয়েছে তা কিন্তু অশুভ। এমনিতে ট্র্যাফিক জামে আমরা অতিষ্ট। ময়লা ও বালি নামক নতুন ট্র্যাফিক জ্যামে এখন ঢাকাবাসীকে জোয়ারে আচ্ছন্ন হওয়া দেখা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। অনেকের আশ্বাসের প্রতিফল দেখতে পাওয়া যায় যে, কার্যাদেশ এবং মালামাল ও খুড়াখুড়ি এমনকি রাস্তা বন্ধের মাধ্যমে। কিন্তু পরিকল্পনা এবং সুশৃঙ্খল বাস্তবায়ন অদৃশ্য। কাজের ক্ষেত্রে তদারকির অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং উত্তম টেকসই কাজের অনুপস্থিত দৃশ্যমান। যেহেতু জনগনের টাকা এবং সরকারের জনবান্ধব সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা সেইহেতু স্বচ্ছ এবং কঠোর বা আপস এবং অন্যায়ের এমনকি দীর্ঘসূত্রীতার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ ও বাস্তবায়নকল্পে পদক্ষেপ নেয়া আশু প্রয়োজন। নতুবা নির্বাচনের বছরে সরকারকে শুনতে ও গুনতে খারাপ/ মাশুল দিতে হবে।
প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং ভালকাজ করতে গিয়ে খারাপ ফল ঘরে তুলতে আমি রাজি বা পক্ষপাতি নয়। বরং ভালোর মাধ্যমে আরো ভাল করার সুযোগ ও সুফল ঘরে তুলতে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি। গ্রামে গঞ্জে, শহরে নগরে বলতে গেলেই সমগ্র দেশেই এখন পুকুর, জলাশয়, খাল বিল ও নালা ভরাট কার্যক্রম তুমুল প্রতিযোগীতায় এগিয়ে যাচ্ছে। যা আসলে আগামীর জন্য বিষম খুমকীর। আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা ভালো কিছু রেখে যেতে চাই কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে খুমকী ও ঝুকি রেখে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করে যেতে চাচ্ছি না। সরকার হয়তো চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু বাস্তবায়নকারীরা এমনকি আমরা সেই চেষ্টায় সহযোগীতা না করে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যাচ্ছি। যেখানে আইন রয়েছে খাল-বিল, জলাশয়, নালা এবং পুকুর ভরাট করা যাবে না সেখানে কিভাবে ঐ আইনকে আমরা অমান্য করে যাচ্ছি তা বোধগম্য নয়। তবে সরকারের বর্তমান কঠোর মনোভাবকে শ্রদ্ধায় এবং জাগ্রত বিবেকে কিছু একটা ইতিবাচক কাজ করা আমাদের কাছে যুগের ও সময়ের দাবি। আমরা এই সময়ের ও যুগের দাবিকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। তাহলেই অভিষ্ট লক্ষ্যে দেখানো পথে এগিয়ে যেতে পারবো। পয়নিষ্কাশন, জলাবদ্দতা এবং আকস্মিক বন্যার পানি ধারনে অপারগতা প্রকাশের যে লক্ষ্যনগুলো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তা থেকে উত্তরনের কোন উপায় আর অবশিষ্ট থাকবে না যদি না এখনই আইন বিরোধী কাজগুলো বন্ধ না করি। সেই ক্ষেত্রে সরকার এবং জনগণের মধ্যে আইনের সচেতনতা বৃদ্ধি দরকার।
সবশেষে এইটুকুই বলব যে, বিবেক, আইন, শ্রদ্ধা এবং সরকারের সিদ্ধান্ত যেন একসঙ্গে কাজ করে এবং তদারকিতে যেন নতুনত্ব আনয়ন করা হয়। স্বচ্চ এবং সৎ মানুষদের দিয়ে এই সকল কাজগুলো করালে হয়ত আগামীর প্রজন্ম এবং নিজেরাও স্বস্তির নি:শ্বাস নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারব। আসুন স্ব স্ব অবস্থান থেকে সকলেই সচেতন হই, ওয়াদা রক্ষা ও বাস্তবায়নে তৎপর হই, সরকারের চলমান কর্মকান্ডকে সহযোগীতা করি; কথা ও কাজের সমন্বয় রাখি। সরকারের ভাবমুর্তীকে সমুজ্জ্বল রাখতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। দলীয় ক্ষমতা এবং পেশী শক্তির অপব্যবহার বন্ধ করি। আগামী দিনের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করি। খানাখন্দ এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে সময়, নিয়ম শৃঙ্খলা এবং গুরুত্ব ও মজবুত অবস্থান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাজে লাগাই।