গাড়ি দুর্ঘটনা এবং আমি

তাজুল ইসলাম নয়ন॥ মহান রাব্বুল আল আমীনের কৃপায় বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলাম। গত দুই সপ্তাহে দুই দুইটি এক্সিডেন্ট মোকাবেলা করতে হয়েছে। প্রথমটিতে মোটামোটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে; আনুমানিক ১০ হাজার টাকা, আর যে এক্সিসিডেন্ট আজ হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এই হলো আমার জীবনের হালহকিকত। তবে আমি ভাল আছি; শুধু গাড়ি এবং অর্থ এই দুইটির অবস্থা ভাল নয়। car
প্রথম দুর্ঘটনাটি ছিল ভাষানটেক থানার সামনে। সেদিন আমি নিজে ড্রাইভ করে বাসায় ফিরছি। জ্যামে আটকে দাঁড়িয়ে; ঠিক তখনই পিছনে বিকট শব্দে আঘাত করলো এক সিএনজি। নেমে গিয়ে দেখি ব্যাকডালা মচকে ভ্যাটকানো অবস্থায়। কলিজাটা জ্বলে পূরে ছাড়খার হলো কিন্তু কাজের কাজ কিছু হলো না। সিএনজি ড্রাইভারকে কিছু না বলে বললাম ক্ষতিপূরণ দিয়ে চলে যাও। অনেক প্যাচাল হলো; পথিক জমা হলো ড্রাইভারের পক্ষ নিয়ে ক্ষমা চাইলো কিন্তু ক্ষতিপুরন দেয়াতে অনিহা এবং কারসাজির আশ্রয় নিলো। অনেক সময় ব্যায় হলো কিন্তু কি লাভ? ২০০০টাকা দিতে রাজি হলো। তখন আমি আমার বড় ভাই আদাবর থানার ওছি সাহেবের সাহায্যে ভাষানটেক থানার ওছি সাহেবের ফোন নম্বরটি নিয়ে ফোন দিয়ে ঘটনা বলি। তখন তিনি পুলিশ পাঠিয়ে অনেক চেষ্টা করেও কোন ফায়দা হয়নি। শেষ মেষ ঐ দুই হাজার টাকা জরিমানা নিয়েই বাসাই ফিরি। যা দেখে বাসায় সবাই হাসাহাসি করে এবং বলে তুমি কেন পুরোটা আনলে না এমনকি কেনই বা ঐ দুষ্টদের ক্ষমা করলে? আমি বললাম ক্ষমা করা আমার বিশ্বাসের একটি অ্শং তাই ক্ষমা ঐ অংগ সঠিক অবস্থানে রেখেছি।
যাক সেই ঘাঁ না শুকাতেই আজ আবার হলো একটু বড় ধরণের দুর্ঘটনা। আমি পিছনে বসে ফোনে কথা বলছি দেশের বাইরে। গাড়িটি জ্যামে ক্যান্টনমেন্ট ফ্লাই ওভারে দাড়ানো; ঠিক তখনই পেছন থেকে আবার স্বজোরে এক ধাক্কা এবং বিকট শব্দ। ঝাকুনি খেয়ে কিছুক্ষণ দম নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি পিছনের বাম্পার একেবাড়ে ভেঙ্গে তিন টুকরো হয়েছে। পিছনের লাইট ভেঙ্গে শেষ হয়েছে। তখন আমি দেখলাম সি এনজির ভেতরে একটি বাচ্ছা কান্না করছে। তখন আমি ঐ বাচ্চার খবর নিলাম এবং বাচ্চার মাকে বললাম; আপা নিজের এবং বাচ্চার জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে কিন্তু ড্রাইভারকে নিয়ন্ত্রণে গাড়ি চালাতে পরামর্শ দিতে পারতেন। যাক সেই কথা কোন সমস্যা হয়নি তো। তখন সে বললো মেয়েটা এবং আমি ব্যাথা পেয়েছি ও মেয়েটা ভয় পেয়েছে। আমি তাদেরকে সান্তনা ও সাহস দিলাম। তারপর বললাম আপা বলেনতো কি কারণে ড্রাইভার আমার ঐ ক্ষতিটা করলো; তখন তিনি বলেন সব দোষ ড্রাইভারের। সে ইচ্ছা করেই এই কাজ করেছে। ফ্লাই ওভারে কেউ এতগতিতে গাড়ি চালায়? আমি বারন করা সত্ত্বেও সে এই গতিতে গাড়ি চালিয়েছে। বামপাশে পুরো রাস্তাটিই খালি কেন ডান পাশে জামে দাড়ানো গাড়িটির পিছনে আসবে বুঝে উঠতে পারতেছিনা। তাকে শাস্তি দিন এবং বড় অংকের জরিমানা করুন। আমি স্বাক্ষীদিব। আমার ফোন নাম্বারটি নেন। যাক অনেক কথা….
সবশেষে আমি সিএনজি ড্রাইভারের কাছে আসি এবং বলি ভাই আমি আপনার কি ক্ষতি করেছিলাম বলতে পারেন দয়া করে। তখন তিনি বলেন আমার গাড়িটি ব্র্যাক ফেল করেছে। আমি চেষ্টা করেছি বাঁচাতে পারিনি। তারপর বলে আমার কাছে ২০০টাকা আছে নিয়ে নিন। আমিতো ইচ্ছা করে করিনি আরো অনেক কথা… ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই কি করবো বুঝে উঠতে না পেরে দাঁড়িয়ে আছি। তখন এক পথিক হোন্ডা চালক বলে ভাই কোন একটি গ্যারেজে গিয়ে ক্ষতির পরিমান জানুন, আর ঐ ড্রাইভারকে বলে তুমি কম-কিছুরি দিয়ে চলে যাও। তখন আমি বললাম হ্যা চলেতো যাবেনই আগে আমার ক্ষতিপুরণ দিয়ে যান। নতুবা সামনের গ্যারেজে আসেন কথা বলি এবং চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিই। তখন দোষি ড্রাইভারকে নিয়ে একটি গ্যারেজে আসি এবং গ্যারেজ মালিক দ্বারা ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হয় ১৭৫০০টাকা যা ড্রাইভার দিবে। ঠিক তখনই সিএনজি ড্রাইভার দুই হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। এমতাবস্থায় আমি গাড়ির চাবি ও কাগজপত্র নিয়ে আমার কাজে চলে যায়। কিন্তু কোন লাভ হয়েছে বলে মনে হয়নি। ঐ ড্রাইভার দিনের শেষে ৬ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি নিয়ে গেল। কিন্তু আমার ক্ষতি হলো অপুরনীয়। তারপরও বলি এই ক্ষতির ধারাবাহিকতা মেটাতে এখন আমি খিমশীম খাচ্ছি। সবাই একটি বিষয় আশা করে, আর তা করতে গিয়ে আমি নিজেও দিশেহারা। বিষয়টি হলো ক্ষমা। ক্ষমা করা ও ধৈয্য ধরা বিষম কঠিন; তারপরও সেই কঠিন কাজটি করে যেতে হচ্ছে এবং হবে। এটাই বিধাতার নিয়ম আমার জন্য নির্ধারিত।
এখানে আরো একটি বিষয় জড়িত যে, এই গাড়িটির আবার ১ম পক্ষের ইনসিওরেন্স আছে। কিন্তু ঐ কোম্পানীর ক্ষেত্রে আনিছ স্বভাব বিরাজমান। কিন্তু দানিছ স্বভাবের ঘাটতি পরিক্ষিত হয়ে দৃশ্যমান। তিনমান পুর্বে একবার বাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ইন্সুরেন্স কোম্পানীর দারস্থ হয় কিন্তু ঐ কোম্পানী টাকা না জন্যে বিভিন্ন টালবাহানা করে; যা ইন্সুরেন্স আইনের পরিপন্থি। শেষতক সময়ের অভাবে ঐ বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স কোম্পানীর ছলনায় আর নিজের সময় জরাতে চাইনি। তদ্রুপ আজও ইন্সুরেন্সের আশা ছেড়ে দিয়ে তকদিরের দিকেই দৃষ্টিদিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে আমার ড্রাইভার ঐ কোম্পানীতে ফোন দিল তখন ঐ পুব্যের বুলিই ম্যানেজার আওরালো। যা শুনে মামলা করতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু ঐ যে ক্ষমা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে? কি আর করা বেচার ক্ষমা….।
সৃষ্টিকর্তা আমাকে আরো ধৈর্য্য দিন এবং ক্ষমা করার তৌফিক দিন। আপনার ইচ্ছাই আমার জীবনে বাস্তবায়িত হউক। শয়তান পরাজিত হউক এবং সত্যের জয় হউক। দোয়া করবেন যাতে সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদ বয়ে নিয়ে যেতে পারি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। সবার দোয়া ও ভালবাসা অব্যাহত থাকুক আমার ইহকাল ও পরকালীন জীবনে। সবাই ভাল থাকুন এবং খোদার ইচ্ছায় নিজেদেরকে সাজিয়ে অগ্রসর হউন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.