নয়ন॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আগুন, গাড়ীতে আগুন, বাসভবনের আসবাবপত্র ভাঙচুর, তছনছ করা হয়েছে-অফিস কক্ষের নথিপত্রে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এটি কোনও আন্দোলন হতে পারে না। এটা আন্দোলনের ভাষা নয়। চারুকলায় বর্ষবরণ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির বিভিন্ন শিল্পকর্মে হামলাও কখনোই ছাত্ররা করবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
এটি সন্ত্রাস, এটি নাশকতা। বড় পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে একটি উত্তেজিত হওয়ার মতো ইস্যূ এনে- সাধারন ছাত্রদের উষ্কে, পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটানো হলো কি? ভাবা দরকার। ছাত্র আন্দোলনের একজন নগন্য প্রাক্তন কর্মী হিসাবে আমার যে শিক্ষা, সেই শিক্ষা বলে সাধারণ ছাত্ররা কখনোই এই অপকর্ম ঘটাতে পারে না- এগুলো পরিকল্পিত নাশকতা। এর পেছনে নিশ্চিত গভীর কোনও ষড়যন্ত্র আছে।
ভিডিও ফুটেজ দেখলেই চিহ্নিত করা সম্ভব- এরা সাধারন আন্দোলনকারী নাকি পরিকল্পিত এজেন্ডার বাস্তবায়নে পথে নামার দল? এই পৈশাচিক আক্রমন ও ভাংচুরে তছনছ অবস্থা যেন সেই পাকিস্তানী অক্রমন এবং ভয়াল কালো রাতের কথাই মনে করিয়ে দেয়। গভীরে গেলে বোঝা যায় ঐ পেতাত্মারা এখন জীবিত। তাদের দোসর রা এখন উম্মাদ সেই কালো থাবার নেশায়। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষে আরো বড় ধরনের কিছু করার অভিপ্রায়ে এবং অভিালাশে এখন নেশাগ্রস্ত দেশ ও বিদেশ বিভুই থেকে হুংকার, গর্জন এমনকি গোপন ষড়যন্ত্রে। যাই হউক সচেতন বিবেকবান মানুষ যারা এখনও জিবীত ও সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত জ্ঞানের ব্যবহারে অভ্যস্ত শুধু তারাই চিন্তা করুন এবং আশু করনীয় নিয়ে এগিয়ে যান।
বিচার হয় আবার হয় না কিন্তু এতেই কি সকল অনাচারের সমাপ্তি ঘটে? না অতিতের ইতিহাস তাই বলে; তবে এবার সমাপ্তীর প্রয়োজনে একট্টা হয়ে কিছু একটা করে দেখানা যা আগামী দিনে দৃষ্টান্ত হয়ে দৃশ্যমান থাকনে। এর থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ তাদের কর্মের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। আর কোন পাকি কায়দায় এমনকি কালো রাতের আদলে ন্যাক্কারজন ঐ পৈষাচিকতা দেখতে হবে আমাদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের। জয় হউক শুভ বুদ্ধির এবং এগিয়ে যাক উন্নয়ন অগ্রগতির ধারক ও বাহকরা।
শিক্ষক এবং ছাত্রের মধ্যে যে সম্পর্ক তা কিন্ত ঐ আক্রমনে অনুপস্থিত ছিল। পিতা মাতার তুল্য শিক্ষককে অশ্রদ্ধা করার সাহস আসলে প্রকৃত ছাত্রদের কাছে আশা করা যায় না। ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষককে শ্রদ্ধা করবে এবং শিক্ষকের আদর্শ নিয়ে সামনের জীবনে অগ্রসর হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঐদিনের ভাংচুর এবং তছনছ এর মধ্যে ছাত্রসুলভ আচরনের বৈপরীত্ব পরিলক্ষিত হয়েছিল। আমরা একটি ছোট গল্প মনে পড়ে যা আমার প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক শুনিয়েছিলেন এমনকি উদাহরণ দিয়ে বোর্ডে লিখেও বুঝিয়েছিলেন। যেমন ধরুন; ছাত্র আর মাষ্টার এই দুইটি বানান শুদ্ধ কিন্তু যদি আকার দুটির বাদ দেয়া হয় তাহলে কি দাড়ায় দেখুন। ছত্র এবং মষ্টর। এই দুইটিই উদাহরণ দিয়ে সেদিন শিখিয়েছিলেন আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বলেছিলেন তোমরা যদি ছত্র হউ তখন আমি হব মষ্টর। আর তোমরা যদি ছাত্র হও তখন আমি হবো মাষ্টার। আজ আমার সেই শিক্ষার কথাই মনে পড়ে। ঐ দিনের আচরণে পরিলক্ষিত হয়েছিল ছত্র সুলভ উদাহরণের। আর শিক্ষকের ভুমিকা পরিপূর্ণ ছিলো। যদি মষ্টর ভুমিকা পালন হতো তাহলে হয়ত ঐ আক্রমন করার সাহস পেতো না। তবে শিক্ষক আজিবনই আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে থাকবে। এই বিশ্বাস বুকে ধারন করে ছাত্রদের ছত্র না হওয়ার পরামর্শ রইলো।