পুলিশ ভ্যারিফিকেশন এবং কিছু সংযোজন

তাজুল ইসলাম নয়ন॥ পুলিশ ভ্যারিফিকেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং সর্বোত্তম কাজ। যার মাধ্যমে একটি মানুষ (দেশী/বিদেশী) সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানা যাবে এবং সেই আলোকে ঐ ব্যক্তিটিকে সুযোগ সুবিধা এবং প্রয়োজনে দেশ ত্যাগ সহ যাবতীয় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু এই কার্যটুকু সম্পাদন করতে গিয়েই হয় যতসব হয়রানী এমনকি দুর্নাম সৃষ্টির মত নানা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এই দায়িত্বটি যাদের হাতে দেয়া হয় তারা কিন্তু যথেষ্ট সততায় পূর্ণ নয়। সরকার তাদের বেতন থেকে শুরু করে সম্মান বৃদ্ধিসহ নানান পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়িত করেছেন কিন্তু অন্তরের স্বভাব পরিবর্তন না হয়ে পুর্বের নেতিবাচক স্বভাবের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। tajul Islam kutubpalong
গভেষনায় উঠে আসে যে কোন চাকুরী প্রার্থীদের ভ্যারিফিকেশন এবং বিদেশ যাত্রী ও নতুন পাসপোর্টসহ নানাহ কাজে প্রয়োজনীয় ভ্যারিফিকেশন শেষ করতে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। যদি কেউ ঐ টাকা খরচ করতে না চায় তাহলেই রিপোর্ট বিপত্তি ঘটে। প্রকারান্তরে চাহিদা ও দাবী হিসেবেই ঐ টাকা আদায় করা হয়। অপরদিকে এনজিও, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত বিদেশী পরামর্শক, কর্মী, উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রয়োজন হয় এমনিক তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের ভিসার প্রয়োজনেও ভ্যারিফিকেশন রিপোর্ট প্রয়োজন হয়। সেখানেও এই একই কাহিনীর অবতারনা ঘটে। এই কাহিনীর ফলে বিদেশী সংস্থা বা বিদেশীদের কাছে আমাদের ঘুষ খাওয়া বা দুর্নিতীগ্রস্ত দেশ হিসেবে প্রমানীত হওয়ার আরেকটি উপকরণ বা উপাদান হিসেবে স্বাক্ষীস্বরূপ দৃশ্যমান।
সরকার কি না করেছে এই বাহিনীর জন্য। কেন তাদের স্বভাবের পরিবর্তন হয়নি? আরো কি কি করলে ঐসকল দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের স্বভাবের পরিবর্তন ঘটবে? দেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের দুর্নামের সহিত যে সকল প্রমান পাওয়া যায় তার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। মাঝে মাঝে অফিসারদের আফসোস করে বলতে শুনা যায় যে, টেলিফোন বিল কে দিবে, যাতায়াত কে দিবে, অফিস খরচ কে দিবে? কথাগুলো সত্যিই যুক্তিযুক্ত। সরকার কি ঐ তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তের প্রয়োজনে কোন প্রকার খরচ: যথা যাতায়ত, ফোন বিল, ও অফিস খরচ (কম্পোজ, ফটোকপি ইত্যাদি) বহন করে না। বা ঐ তদন্তের প্রয়োজনে কোন টিএ / ডিএ এর কোন ব্যবস্থা নেই? যদি না থাকে তাহলে আমার প্রশ্ন হলো, স্বচ্ছতার জন্য বা জবাবদিহীতার জন্য এমনকি প্রতিষ্ঠান বা বাহিনীর ভাবমূর্তী উজ্জ্বল তথা দেশের ভাবমূর্তী উজ্জ্বল করার জন্য কিছু একটা করা প্রয়োজন। যদি এই ধরনের ব্যবস্থা থেকে থাকে তাহলে আমি কোন প্রশ্ন বা নতুন করে কোন সংযোজন বা বিয়োজন করতে চাই না; কিন্তু যদি না থাকে তাহলে যুক্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহবান জানাই। আমি যতটুকু জানি এবং দেশের আইন যতটুকু তা হলো ঐ তদন্তের প্রয়োজনে সবকিছুই সরকার করে থাকে। আমি এই বিষয়ে পুলিশ প্রধানের সঙ্গেও কথা বলেছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীমহোদয়ের সঙ্গেও কথা বলেছি এমনকি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলে যা জেনেছি তা কিন্তু দেশের মুখ উজ্জ্বল করারই কথা কিন্তু চুনকালি পড়ার কথা নয়।
তারপরও বলি আমার দেশের সোনার ছেলেরা দায়িত্ব পালনের সময় যেন আরো উদার এবং প্রফেশনালিজম ও সততা নির্ভর কর্ম সম্পাদন করেন। যা ডিপার্টমেন্ট এবং দেশমার্তৃকার মুখোজ্জ্বল হয়। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সরকার এই ভ্যারিফিকেশন এর ক্ষেত্রে একটি ফি ধার্য করে দিতে পারে যা ঐ কাজের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পেতে পারে একটি ইনসেন্টিভ হিসেবে। ঐ ফি এর মধ্যেই যাবতীয় খরচ অন্তর্ভূক্ত থাকবে। তাহলে ঘুষ বা দুর্নীতির বদনাম যেমন ঘুচবে তেমনি সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে পাশাপাশি ব্যক্তি সততার ভীত মজবুত হবে। যেহেতে এই সেবার প্রয়োজন সেহেতু এই সেবা নিতে প্রয়োজনীয় ফি দিতে কারো আপত্তিও থাকার কথা নয়। আমি আশা করি এই ভ্যারিফিকেশন’র ক্ষেত্রে একটি সন্তোষজনক সমাধান খুব তাড়াতাড়িই জনসম্মুখ্যে উপস্থিত হবে। যাতে করে উভয়ের ভুলবোঝাবোঝি ঘুচে যাবে। উভয়েই দায়িত্বশীল হয়ে ইতিবাচক ন্যায় ও নীতি আদর্শ নিয়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে মুখোজ্জ্বল করে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করবে।
ভ্যারিফিকেশন রিপোর্টকে বৃদ্ধঙ্গুলি দেখিয়ে অনেকেই চাকুরীতে স্বপদে বহাল রয়েছে এমন অনেক নজির প্রমানসহ আমাদের হাতে রয়েছে। একটিই শুধু এইবার বলব যাতে সরকার আরো কঠোরভাবে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে এই দুর্বলতাগুলোকে সবলতায় কাজে পরিণত করে। যেমন সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে বিবাহিত এবং অবিবাহিত একটি জটিল ফ্যাক্টর। কেউ চাকুরীর আবেদনে অবিবাহিত উল্লেখ করে চাকুরীতে যোগদান করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে বিবাহিত এবং বাচ্ছাও রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে ভ্যারিফিকেশন রিপোর্টও পুলিশ কর্তৃক প্রদত্ত হলো বিবাহিত ও সন্তান রয়েছে মর্মে। কিন্তু বাহিনীর রিপোর্ট গুজামিল দিয়ে উল্টোটা যা মিথ্যা তা দেখানো হলো । আর ঐ মিথ্যাবাদি ব্যক্তিটি চাকুরীর শুরুতেই মিথ্যার যাত্রা শুরু করে প্রতারণার আশ্রয় ও প্রশ্রয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাঁর সাহস এবং দৃঢ়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে আগামীতে আরো বড় ধরনের কোন প্রতারনা করার লক্ষ্যে। যেহেতু পুলিশ সত্যিকার রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল সেইহেতু সরকার ঐ রিপোর্টকে গুরুত্ব দিয়ে একটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা যদি গ্রহণ করতো তাহলে হয়ত ভবিষ্যতে আর কেউ ঐ জালিয়াতীর সুযোগ এবং সাহস পেত না। তাই সরকারের নিকট আবেদন নৌ, বিমান, আর্মীসহ সরকারী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পুলিশ ভ্যারিফিকেশন এর ক্ষেত্রে আরো গুরুত্ব দেয়া এবং সঠিক তদন্ত রিপোর্ট উদঘাটন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আমি নাম, তারিখ, ও ডিপার্টমেন্ট উল্লেখ করে দৃষ্টান্ত দেয়ার আশায় রইলাম। যাতে করে নৈতিকতা এবং দায়িত্ব স্বচ্ছতার পরিধী বৃদ্ধি করা যায় এবং ঈমান আমল সঠিক করে পারকালের নিশ্চয়তার বিধানে তৎপর হওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.