প্রশান্তি নিউজ ডেস্ক॥ গত ২৮ মার্চ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়া হাজির হতে না পারার পর হতেই তার অসুস্থতা নিয়ে মিডিয়ায় ধূম্রজাল তৈরি হয়। বিএনপির পক্ষ হতে বেগম জিয়াকে গুরুতর অসুস্থ দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি করেন। এরপর হতেই বেগম জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি “টক অব দ্যা কান্ট্রি” তে পরিণত হয়।
ঘটনার ডালপালা বহুদূর বিস্তৃত হলেও বিএনপি সমর্থকরা মানতে নারাজ যে, বেগম জিয়া দেশ ছাড়তে পারেন। কিন্তু রাজনীতিতে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। বিএনপি শাসনামলের দোদর্ন্ড প্রতাপশালী কথিত যুবরাজ তারেক রহমানও শাস্তির হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে চিকিৎসার উসিলায় বিদেশে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। বেগম জিয়াও মামলার যে বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন তাতে এই বৃদ্ধ বয়সে কারাভ্যন্তরে নিঃসঙ্গ, একাকী জীবনের ভার বইতে পারার শারীরিক ও মানসিক শক্তির কোনটাই তার নেই।
জানা যায়, কারাগারে যাবার আগে থেকেই বেগম জিয়া পায়ের ব্যথাসহ কিছু রোগে ভুগলেও গুরুতর কোনো শারীরিক সমস্যা তার নেই। কিন্তু বার্ধক্যজনিত সমস্যা ও কারাগারে বিলাসী জীবন যাপনের অভাবজনিত পরিবেশে তার দীর্ঘদিন বসবাস প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন তিনি। এছাড়া পরবর্তীতে আরো মামলায় সাজাপ্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকায় সব মিলিয়ে মানসিকভাবেও ভীষণ মুষড়ে পড়েছেন বেগম জিয়া। অন্যদিকে আইনগতভাবে বা আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করাও যে সুদূর পরাহত সে কথা বুঝতেও বাকি নেই তার। তাই ইচ্ছে না থাকলেও কারাগারে বাকি জীবন কাটানোর চাইতে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে হলেও বিদেশে চলে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করছেন তিনি।
আর এক্ষেত্রে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী তিনি চিকিৎসার জন্য মনোনীত হলেই কেবল সরকার তার চিকিৎসা করাতে বাধ্য। কিন্তু কারাগারে নিয়োজিত ডাক্তার বা ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের দ্বারা গঠিত মেডিকেল বোর্ড বেগম জিয়ার অসুস্থতাকে গুরুতর বা বিদেশ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে না করায় তিনি বারবার তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছাড়া চিকিৎসা নেবেন না বলে জানান। এই লিংকের ভিডিওটিতে বিস্তারিত দেখুন ও শুনুন। https://youtu.be/J-fg4txiH8M?t=9
জানা যায়, মির্জা ফখরুলসহ দলের সিনিয়র অনেক নেতাও বেগম জিয়ার সাথে একমত। তাই বেগম জিয়ার অত্মীয়-স্বজনরা বেশ কয়েকবার তার সঙ্গে দেখা করলেও তারা কেউই বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তেমন কিছু না বললেও বিএনপির পক্ষ হতে তার অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর প্রচার করা হচ্ছে যাতে বিদেশ চলে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত গ্রাউন্ড তৈরি করা যায়।
এদিকে বিএনপির দাবি অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য ৭ মার্চ বেগম জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। জানা যায়, সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার পছন্দের চিকিৎসকদের দিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডে আছেন মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী, অর্থপেডিকস এর অবসরে যাওয়া চিকিৎসক ডা. এম আলী এবং নিউরোলজীর ডা. ফিরোজ আহমেদ কোরেশী। বেগম জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা এই চিকিৎসকদের তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। এরা তিনজনই বিএনপিপন্থী চিকিৎসক হিসেবেও পরিচিত। সূত্রমতে, মেডিকেল বোর্ড সুপারিশ করলেই বেগম জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারবেন।