ইদানিং দেখা যায় আমাদের সংযত জীবনের পরিবর্তে বেপরোয়া জীবনই বেশী দৃশ্যমান। কথায়, চলনে/বলনে, আচরণে, চিন্তায় এবং এর বাস্তবায়নে অহরহ প্রতিয়মান হয় বেপরোয়া জীবন যাপন। যা সমাজের জন্য এখন একটি ভয়ঙ্কর নেতিবাচক দৃষ্টান্ত বহন করে। আগামীর জন্য শুভতো নয়ই বরং অশুভ এবং ভয়ংকর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। যদি এখনই এর লাগাম টেনে ধরা না যায় তাহলে ভবিষ্যতের নিশ্চিত শান্তি, আনন্দ এবং স্থিতিশীলতা গিয়ে ভংগুর দশায় পরিণত হবে। একটি ব্যক্তি জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে তার পরিবার এবং পরিবেশ আর এই পরিবেশকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে সমাজ। সমাজ ব্যবস্থাকে ঘিরেই তেরী হয় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কাঠামো। এখন দেখা যাচ্ছে সবাই ক্ষমতার মালিক এবং ক্ষমতার বাহ্যিক শক্তির প্রয়োগকারী। তাই এই ক্লেশ দূর করা দরকার। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড মেনে চলা উচিত। নতুবা ধ্বংসের বেড়াজালে আবদ্ধ এই ভঙ্গুর ব্যবস্থা থেকে মুক্তির কোন উপায় আর অবশিষ্ট থাকবে না। সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালবাসা, ক্ষমা এবং হিংসা বিদ্ধেষ ভুলে সাম্যের গীত রচনা করাই এখন সময়ের মুখ্য এবং উত্তম ও অতীব জরুরী দাবী।
সমাজের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে ভঙ্গুর অবস্থার ছাপ পাওয়া যাবে না; জানেন কেন? আমরা সবাই এখন হামছে বড়া কন হে ভাব নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। আর এই অগ্রসরে ইন্দন যুগিয়ে যাচ্ছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল; যারা ঘাপটি মেরে বসে আছে আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিতে। তাদের লাভ এবং উদ্দেশ্য একটাই। তা হলো বর্তমান উন্নয়ন গতিকে স্বদ্ধ করে দিয়ে অচলায়তনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরে আসা। আর এই আসাটাই সাধন করতে চাচ্ছেন আপনাকে ও আমাকে ফান্দে ফেলে তাদের লুকানো স্বার্থের জন্য ব্যবহার করে। ঐ চিহ্নীত জনগোষ্ঠি সংখ্যায় কম এবং দৃষ্টিসীমার বাইরে। কিন্তু বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে তৎপর। এই তৎপরতার সঙ্গে আবার কতিপয় অন্ধকারে সুযোগ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে বিদেশী রাষ্ট্রের কুটচালও দৃশ্যমান।
ইদানিং ঘটে যাওয়া কতিপয় দৃষ্টান্ত দেয়া যায়, কোটা বিরোধী আন্দোলনে ঘি এবং পানি মিশাতে ব্যবহার করা হয়েছিল পুলিশের গুলিতে ছাত্রের মৃত্যু এবং পায়ের রগ কাটা নামক নাটকীয় কাহিনী। কিন্তু পরে জানা গেল সবই মিথ্যা এবং গুজব। আর ঐ গুজবে কান দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল আমাদের সমাজের প্রতিষ্ঠীত মেধাবী শ্রেণী। গ্রামে প্রায়ই শুনা যেত দাদা ও নানাদের কাছে “চিলে কান নিয়েছে তাই চিলের পিছনে ছুটছে”। এখন দেখি সেই গ্রামের কথা আজও বাস্তব সত্য হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। দাদা নানারা ব্যাখ্যা সহকারে বুঝাতো যে, চিলে কান নিয়েছে শুনলে আগে তোমার কানে হাত দিয়ে দেখবে কান আছে কিনা তারপর দৌঁড় দিবে। কানে হাত না দিয়ে ঐ বোকা হাবাগোবাদের মতো দৌঁড়াতে যেয়ো না। এতে তোমার ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। আসলে এখন তাহ হচ্ছে আমাদের ঐ মেধাবী তরুনদের । মুখ্যদের ফাঁদে পড়ে নিজের ক্ষতিটাই করতে বসেছে। এখন দেখা যায় কিছু না কিছু বিষয় নিয়ে আন্দোলন এবং সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ছে মেধাবীরা। তারা মেধার স্বাক্ষর রাখার আরো কোন সুযোগ পাচ্ছে না? নাকি এই আন্দোলনের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হওয়া? আসলে ঐ আন্দোলন ও সংগ্রাম তাদের কোন মঙ্গলতো নয়ই বরং অমঙ্গলই বয়ে আনবে। বাবা-মা কত কষ্ট করে টাকা জোগার করে পাঠায় আর ছেলে মেয়েরা আন্দোলন সংগ্রামে বিলাসী জীবন কাটায়। আমরা কবে বুঝব আমাদের নিজের বুঝ। হ্যা সময়তো এখনই কিন্তু কাজে না লাগালে কি করবো?
প্রশাসনেও কিছু অতি উৎসাহি ব্যক্তি বা শিক্ষার অধার নামে খ্যাত ঐ বোকা সার্টিফিকেট ধারিরাও কম কি। যেখানে উত্তেজনা এবং বিশৃঙ্খলা সেখানেই ঘি ঢালা হচ্ছে। এখনও কি শিক্ষা নিতে পারি না আমরা। কিভাবে একটি পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেহেতু হুজুগে বাঙ্গালী এই প্রবাদটি জলজ্যান্ত তাই হুজুগকে বুদ্ধি এবং ভালবাসা ও ক্ষমার মাধ্যমে বিবেক দ্বারা প্রশমিত করতে হবে। ছেলে মেয়েরা ভুল করবে এবং করতে পারে। আর এই ভুল থেকে বের হওয়ার জন্যইতো শিক্ষক এবং শিক্ষা ব্যবস্থা। তাহলে শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবস্থার ভুমিকা কোথায়? একটার পর একটা সমস্যা চলমান কিন্তু সমাধানের রাস্তা শুধু একজনই করেন তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাহলে আপনারা কেন আছেন এবং রাষ্ট্রের টাকা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার কেন করছেন?
অফিস আদালতেও এই একই ভাব পরিলক্ষিত হয়। যার কাছেই যাওয়া হয় সেই হামছে বড়া কন হে ভাব নিয়ে হাজির হয়। যা দেখতে ও শয্য করতে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কষ্ট হয়। তারপরও সহ্য করে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হয় একসঙ্গে কাজ করতে। রাষ্ট্রের অর্থ এবং জনগণের টাকা নিয়ে যদি ঐ হামছে বড়া কন হে ভাব দেখানো হয় তাহলে জনসংযোগ বৃদ্ধির পরিবর্তে জনঅসন্তোষই কাম্য। যাক আমারা সংযত হই এবং বুদ্ধি ও জ্ঞানের চর্চা বাড়াই, ভালবাসা ও ক্ষমার দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। সহযোগীতার মনোভাব বৃদ্ধি করি। কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হয়। এইতো এক সরকারী কর্মকর্তা আরেক কর্মকর্তার সঙ্গে অসৌজন্যমুলক আচরণ প্রকাশ্য দৃশ্যমান হলো তা বড়ই লজ্জার বটে। সোস্যাল মিডিয়াই সবই প্রত্যক্ষ করেছেন সবাই। সেই বড় যে নিজেকে নীচু করে অন্যকে উপরে আসীন করতে পারে। সেবার মাধ্যমে সেবকের পরিচয় প্রকাশিত হয়। সেবার দায়িত্ব নিয়ে সেবার বিপরীতে যা কিছুই ঘটুক তা আমাদের কামনা এবং প্রত্যাশায় নেই। আসুন সচেতন হয় প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে এবং তারপর চর্চার মাধ্যমে প্রকাশ করি যাতে ঐতিহ্য এবং দৃষ্টান্ত উভয়ই রক্ষা হয়।
ছাত্রলীগের নেতা দ্বারা একজনকে মারপিটের দৃশ্য এখন সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এর পক্ষে বিপক্ষেও অনেক যুক্তি উপস্থাপন করেছেন অনেকেই। সবই অসংযত আচরণের ফল। রাজনীতি করতে হলে অবশ্যই ব্যক্তি জীবনের উদ্ধে উঠে আসতে হবে। দলের, সমাজের, রাষ্ট্রের ভাবমুর্তী উজ্জ্বলের জন্য প্রতিনিয়ত পরিশ্রম ও কায়িক, মানষিক ইতিবাচক সংগ্রাম চালাতে হবে। অন্যের জীবনে আশির্বাদ বয়ে নিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনাকেও কেউ অনুসরণ ও অনুকরণ করছে। নিন্দুকের হাতিয়ারে পরিণত হওয়ার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। পরিচ্ছন্ন ভাবমুর্তি এবং সততা ও আদর্শের দৃষ্টান্তে সর্বোচ্চ স্থান অলংকরণ করে থাকতে হবে। তবে পরিবর্তন এবং গ্রহনযোগ্যতা সাধিত হবে। ব্যক্তির অসংযত জীবন যাপনের দায়ভার দল বা সংগঠকে এমনকি কখনো কখনো রাষ্ট্রকেও বহন করতে হয়। তাই কর্মী ও সমর্থক নির্বাচনে যতœশীল হউন। নেতা নির্বাচনে সংযত সাবধানতা অবলম্বন করুন। অতিত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে নিয়ে বিশ্লেষণ করে সময় নিয়ে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। শুধু তাই নয়; প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেই দায়িত্ব পালনে সক্রিয় করে তুলুন। সংশোধন ও মেন্টরিং এর দায়িত্ব নিয়ে অগ্রসর হউন।
মনে রাখবেন দলের ক্ষতি, পরিবারের ক্ষতি, দেশের ক্ষতি করার জন্য আপনজনই যথেষ্ট। তাই আপনজনের বিষয়েও সচেতন থাকুন। কে কখন ও কেথায় বিচরণ করে এবং তার কৃতকর্মের হিসাব রাখুন। জবাবদিহিতা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে বুদ্দিমত্তার সঙ্গে কাজ করুন। ঘরের শত্রু যেন ভিভিশন না হয় সেই দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন। কথায় আচরণে এমনকি কাজে মিল রাখুন। হামবড়া ভাব পরিত্যাগ করুন। সময় সবসময় একই প্রবাহে প্রবাহিত হয় না। তাই সময়ের পরিক্রমায় নিজেকে সংশোধন করে খাপ খাইয়ে নিন যেন; আগামীতেও দৃষ্টান্ত হিসেবে মাথা উঁচু করে আদর্শীক মানুষ হিসেবে সকলের প্রয়োজনে কাজ করতে পারেন সেই অবস্থান পাকাপোক্ত করণে নিরলস কাজ করুন। কেউ আপনার শত্রু নয়; বরং বন্ধু ভেবে সকলের জন্য কাজ করুন। মহব্বত বৃদ্দি করুন এবং ক্ষমাকে সম্প্রসারিত করে ভালবাসার বন্ধনকে বিশাল থেকে বিশালায়তনে রূপান্তর করুন। আগামীর প্রয়োজনে এখন থেকেই সকল নেতিবাচকতা পরিহার করে ইতিবাচক চর্চার ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করুন। আগামীর উন্নতি দৃশ্যমান হতে সহায়তা করুন।
বিদেশে অবস্থান করে দেশের ভাবমূর্তী নষ্ট করার জন্য যারা প্রতিনিয়ত ব্যস্ত এবং বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের ফাঁদ এটে যাচ্ছেন; তাদেরও ভাবা উচিত এই দেশটাতো আপনাদেরও। তারা যদি দেশের অমঙ্গলের চিন্তা করেন তাহলে তাদের বা পরবর্তী প্রজন্মের কি হবে? ক্ষমতাই কি সবকিছু? যখন আপনি বা আপনারা ক্ষমতায় আসবেন তখন কি ঐ ষড়যন্ত্রের রেষ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন? না পারবেন না কারন এই ষড়যন্ত্র আরো কোন বড় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই শেষ হবে। আর তার পরিণতি ভোগ করতে হবে আপনাকেই। এমনি দৃষ্টান্ততো অহরহ আমাদের চোখের সামনে বহমান। যারা অতিতে ষড়যন্ত্র করেছিল সেই সেই ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু স্বস্তিতে নেই বরং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই যবনীকাপাত ঘটিয়েছেন। তাদের অস্তিত্ব এখন প্রায় বিপন্ন। মানুষ তাদের ঘৃণা করে এবং যারা বাকি ছিল তারাও করতে শুরু করেছে। আপনি সেই ঘৃণিতদের পর্যায়ে নিজেকে নিতে চান? তাহলে এগিয়ে যান। আর যদি ফিরে আসতে চান তাহলে ভাবুন এবং পথ খুঁজুন; পথ প্রস্তুত আপনাকে সুন্দর বর্তমান ও ভবিষ্যতের কাছে নিয়ে আসতে। শুধুই আপনার একটি সিদ্ধান্তই পারে সঠিক জীবনের নিশ্চয়তাই এগিয়ে যেতে। সবাই আমরা দেশটাকে নিয়ে ভাবব এবং সেই ভাবনাকে কাজে পরিণত করব। যার যার অবস্থান থেকে সংযত ও নিয়ন্ত্রিত আচরণ করব এবং পরিপক্কতা এমনকি জ্ঞানের ব্যবহারের চর্চা বৃদ্ধি করব। তাহলেই স্বপ্নের সোনার বাংলার মূর্তীমান প্রতিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত দাবিদার ভাবতে পারব। সমাজে, পরিবারে, শিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে, রাজনীতিতে এমনকি সর্ববস্থায় নিজেকে সংযত এবং নিয়ন্ত্রীত জীবন যাপনে অভ্যস্থ্য করব। পাশাপাশি শিষ্টাচার বিবর্জীত কাজ থেকে বিরত থাকব। জ্ঞানের চর্চা বৃদ্দি করব।