টিআইএন॥ হবিগঞ্জ ও বাহুবল নবীগঞ্জ এর এলাকায় এখন চলছে সমানে সমানে লড়াই তবে এই লড়াই কে এগিয়ে তা বিশ্লেষনের আগে বলতে চাই কবির ভাষায় আমাকে একজন শিক্ষীত মা দাও আমি তোমাকে শিক্ষীত জাতী দিব। আসলে এই কথাটি যথার্থই প্রমানিত হয়েছে আমাদের সমাজে দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এই শিক্ষীত মাই হলেন আমাদের অভিভাবক এবং বিশ্ব মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা। আর তার এই শিক্ষায় ছড়িয়ে দিয়েছে আলো এবং লবন। এই আলোতে আলোকিত এবং লবনে স্বাদযুক্ত হচ্ছে এখন গ্রামের গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শহরাঞ্চলও। সেই থেকেই দাবিয়ে বেরিয়েছে এই একটি সফল কাহিনীর রূপচিত্র এবং লাবণ্যময় গন্ধরস। আমি এখানে সমকালের একটি ফিচার ব্যবহার করে আমার কথামালা সাজিয়েছি আজকের সংখ্যায় হবিগঞ্জ -১ আসনকে ঘীরে।
একসময় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জ-১ (বাহুবল-নবীগঞ্জ) আসনটি ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনের পর থেকে হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ দলে এবার নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে পারস্পরিক অনাস্থা ও নানা টানাপড়েন। সে তুলনায় বেশ স্বস্তিতেই রয়েছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি।
এখানেই আমার দ্বিমত। জাতীয় পার্টি বা বিএনপির যেখানে কোন গন্ধ ও রূপ লাবন্য নেই সেখানে এই সংবাদটি অকার্যকর। এখানে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগেরই দ্বন্ধ। তবে এই দ্বন্ধ আর বেশীদিন নয়। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই দ্বন্ধের অবসান ঘটিয়ে মা হিসেবে মেয়েকেই সম্মানীত করবেন। আরে সন্তানকে জীবন বাজী রেখে মেয়ের পাশে দাঁড়াতে যাবতীয় কার্য সম্পাদন করে বিজয় নিশ্চিত করবেন।
ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের স্বার্থে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিয়েছিল জাতীয় পার্টিকে। বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় তখন নির্বাচিত হন জাপার কেন্দ্রীয় নেতা মুনিম চৌধুরী বাবু। এবারও আসনটি জাপাকে ছেড়ে দিতে হলে আওয়ামী লীগে অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দেবে বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। তবে জাপা চাইছে, এবারের নির্বাচনেও জোট থেকে তাদের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে।
আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় রয়েছেন- মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর মেয়ে হবিগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের বর্তমান নারী সাংসদ অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, প্রয়াত রাজনীতিক দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী।
এ বিষয়ে সাংসদ ও অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী সাধারণ মানুষের কল্যাণে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি বিশেষ করে এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট নির্মাণ, অবহেলিত গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুতায়ন ও চা শ্রমিকসহ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। এমপি কেয়া চৌধুরী বলেন, নেত্রী তার পরিশ্রম ও তার প্রতি সাধারণ মানুষের ভালোবাসার মূল্যায়ন করবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি। মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটের সংখ্যাধিক্যে তিনি আসনটিকে পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী বলেন, ৩০ বছর ধরে তিনি দল ও এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রায় ছয় বছর ধরে জেলা পরিষদ প্রশাসক ও পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তার নির্বাচনী এলাকাসহ সমগ্র হবিগঞ্জ জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি বলেন, যারা আজ নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের সঙ্গে দল ও সাধারণ মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই।
মনোনয়ন প্রত্যাশী শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী জানান, গত নির্বাচনে দল ও মহাজোট থেকে তার মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু দেশ, জাতি ও মহাজোটের বৃহত্তর স্বার্থে তিনি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। তিনি জানান, নেত্রী তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পরবর্তী সময়ে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। নেত্রীর প্রতিশ্রুতির ওপর তার পুরো আস্থা রয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন, ৩৮ বছর ধরে দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ নির্বাচনী এলাকায় সবচেয়ে বেশি ভোট নবীগঞ্জ উপজেলায়। আর এখানে তিনি সরাসরি নির্বাচন করে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। তিনি শতভাগ আশাবাদী যে, দল তাকে মূল্যায়ন করবে এবং আসনটি পুনরুদ্ধার হবে।
আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপির মনোনয়ন পরিস্থিতি বলতে গেলে পুরোপুরি ঝামেলামুক্ত। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক এমপি শেখ সুজাতই হয়তো পাবেন ধানের শীষের টিকিট। তবে বছরের অধিকাংশ সময় বিদেশে অবস্থান করায় তার বিরুদ্ধে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশের মধ্যে চাপা ক্ষোভও রয়েছে। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেক প্রবাসী বিএনপি নেতা শাহ মোজাম্মেল হক নান্টু।
নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি ও নবীগঞ্জ পৌর মেয়র আলহাজ ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেন, তারা জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ধানের শীষে আলহাজ শেখ সুজাত মিয়ার বিজয় নিশ্চিত।
মহাজোটের কল্যাণে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত এমপি এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু এবারও জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী হতে পারেন। তবে প্রবাসী জাপা নেতা আবদুল হামিদও জোর লবিং চালাচ্ছেন মনোনয়নের জন্য। এ প্রসঙ্গে এমপি মুনিম চৌধুরী বাবু বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছরের মধ্যে ৪৩ বছরই বাহুবল-নবীগঞ্জ অবহেলিত ছিল। কিন্তু তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে- যে কাজ ৪৩ বছরে হয়নি, সে কাজ হয়েছে মাত্র পাঁচ বছরে। তিনি দুটি স্কুল-কলেজকে সরকারি করেছেন, ৫০টি রাস্তা ও ৩৮টি ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। তার সময় ৯১টির বেশি গ্রামে বিদ্যুতায়ন হয়েছে। এককভাবেই হোক আর জোটগতভাবেই হোক, এমপি পদে তার মনোনয়ন চূড়ান্ত- এমন আভাসই পেয়েছেন তিনি।
এ আসনে জামায়াতে ইসলামী বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তেমন নির্বাচনী তৎপরতা নেই। তবে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক খেলাফত মজলিসও এ আসনে জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলটির জেলা সহসাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল কাইয়ুম জাকী এ প্রসঙ্গে বলেন, বাহুবল-নবীগঞ্জে তাদের দলীয় অবস্থান দেশের অনেক এলাকার তুলনায় মজবুত। ২০১১ সালের উপনির্বাচনে পৃথক নির্বাচন করে তারা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির প্রকাশও ঘটিয়েছেন। এ আসন থেকে তিনি তার দলের ও জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে জোটের যে কোনো সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন তারা।
এ ছাড়াও এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন প্রবাসী কমিউনিটি নেতা শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ।
আমাদের মূল্যায়ন এই আসনটি যেহেতু জোটের আসন। তাই এই আসনে উন্নয়ন কর্মকান্ড এককভাবে কেউ দাবি করতে পারে না বরং জোট বা সরকারের উন্নয়ন বলেই বিবেচিত হয়। তবে জাতীয় পার্টি যেহেতু আসনটি জোটের কারণে জয়যুক্ত হয়েছেন সেই কারণে এইবার নির্বাচনের ধরন এবং বলয় হবে ভিন্ন। তবে বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের শক্তির বা ঐক্যের মহড়ার উপরও নির্ভর করে আগামী নির্বাচনের কৌশল। তবে যদি বিএনপি একক বা (২০) বিশ দলীয় জোট নিয়ে আট-ষাট বা কোমর বেধে নির্বাচনে নামতে পারে তাহলে হিসেবে ভিন্নত পরিলক্ষিত হবে। নতুন সরকার নড়বড়ে বিএনপির যে দৈন্যদশা সৃষ্টি করেছে তার মধ্যে আগামী নির্বাচনে কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারবে বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় না। তাই ঐ ভঙ্গুর দশায় জাতীয় পার্টি তিনশত আশনেই তাদের মনোনয়ন দিয়ে একক নির্বাচনেরই সম্ভাবনা বেশী। সরকারও সেই আলোকে ঐ আসনে একপ্রকার নিশ্চিত করে রেখেছেন নতুন মুখ এক উজ্বল নক্ষত্র ঐ এলাকার জন্য। যিতি ইতিমধ্যেই পরিক্ষীত এবং জনবান্ধব হিসেবে পরিচিত। এলাকার জনগণ ইতিমধ্যেই তাঁর পক্ষে ম্যান্ডেড দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে সব হিসেব নিকেশ ঠিক থাকলে আমাতুল কিবরীয়া কেয়া চৌধুরীই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এলাকার উন্নয়নের ধারা সচল রাখবে।