সাংঘাতিক সাংবাদিকতা…

ইসরাত জাহান লাকী॥ “সস্ত্রীক অনুষ্ঠান উপভোগ করলেন রাষ্ট্রপতি”- এমন একটি শিরোনামের উদ্দেশ্য হয়তো থাকতে পারে- পত্রিকা-পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। আকর্ষণ সৃষ্টি করার জন্য শিরোনাম হতে হয় সংক্ষিপ্ত, কিন্তু ব্যতিক্রমী। “অনুষ্ঠান উপভোগ করলেন রাষ্ট্রপতি”- এই শিরোনাম হয়তো ততোটা আকর্ষণীয় নয়। কেননা মহামান্য রাষ্ট্রপতি রোজই এমন অনুষ্ঠান উপভোগ করে থাকেন। “সস্ত্রীক” শব্দটি দেখতে ছোট, কিন্তু ওজনে ভারী। উপরিউক্ত শিরোনামের মাধ্যমে পত্রিকা কাটতি কিংবা অনলাইনে বেশি ভিউয়ারস তৈরির বানিজ্যিক উদ্দেশ্য থাকতেই পারে। সমস্যা হয় তখন, যখন সংবাদটি হয় পুরোপুরি অসত্য, sangatik sanbadikotaবানোয়াট কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রসিক রাষ্ট্রপতি যখন সম্প্রতি একটি কনভোকেশনে অলিখিত বক্তব্যে বলেন, “সাংবাদিক ভাইয়েরা অযথা কারও সংসারে অশান্তি সৃষ্টি কইরেন না!”, তখন এদেশের সংবাদপত্র ও তাদের প্রফেশনালিজম নিয়ে প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক। দৈনিক কালের কণ্ঠ তাদের ব্যাখ্যায় বলেছে, শরিয়তপুরের টিএনওর কাছে তারা তথ্যটি পেয়েছিলেন কিংবা শুনেছিলেন। কোনোওরকম সত্যতা যাচাই না করেই তারা শিরোনামটি লিখে দেয় পরেরদিনের প্রিন্ট সংস্করণে। ইত্তেফাকসহ প্রথম সারির বেশ কিছু জাতীয় দৈনিক পত্রিকা একই কাজ করে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার বস্তুনিষ্ঠতা অনেক আগে থেকেই এদেশে প্রশ্নবিদ্ধ। তিলকে তাল করা অনেক সংবাদপত্রের নেশা ও পেশা।
এখন আসুন নমুনাস্বরূপ অনলাইন সংবাদপত্রগুলোর কিছু শিরোনাম ও তার বিস্তারিত দেখি:
১। “অভিনেতা মিঠুন আর নেই!” বছর দুয়েক আগের এমন একটি শিরোনাম পড়ে পাঠকমাত্রই ওই নিউজ লিংকে ক্লিক করেন। কারণ, মিঠুন বলতে নিরানব্বই ভাগ মানুষ ভারতের জীবন্ত কিংবদন্তি মিঠুনকেই চেনেন। মিঠুন অমর নন। মারা যেতেই পারেন। তারপরেও অবিশ্বাস্য লাগে। বিস্তারিত পড়লে দেখা যায়- নব্বই দশকের চলচ্চিত্র “বেদের মেয়ে জোছনা” ছবির পার্শ্বচরিত্র বাংলাদেশের অভিনেতা মিঠুন মারা গেছেন। শিরোনামটি ইচ্ছাকৃতভাবেই ওরকম করা হয়েছে, যাতে ভারতের মিঠুন মনে করা হয়।
২। “ডিপজলকে বিয়ে করলেন মৌসুমী!” সেলেব্রিটিদের সংসার ভাঙা আহামরি কোনো ঘটনা নয়। ফরিদী-সুবর্না থেকে শুরু করে ভেঙে গেছে তাহসান-মিথিলার সংসারও। মৌসুমী-সানীর সংসার ভেঙে যাওয়াও অসম্ভব নয়। যথারীতি বিন্তারিত অংশে ক্লিক ও তার ফলাফল নিম্নরূপ: “দুলাভাই জিন্দাবাদ” ছবিতে মৌসুমীর স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডিপজল।”
৩. “দুই বোনকে বিয়ে করলেন পশ্চিম বঙ্গের নগেন্দ্রনাথ শীল!” শিরোনামটি অশ্লীল। অশ্লীল শিরোনামের ভিউয়ারস বেশি হয়। সাধারণ মানুষের কৌতূহল ওদিকে থাকে। বিস্তারিত পড়লে পাওয়া যায়: “নগেন্দ্রনাথ শীল প্রথমে বিয়ে করেন তার মাসতুতো বোনা দীপা রানিকে। দীপা রানি হঠাৎ মারা যায়। তারপর নগেন বিয়ে করেন দীপার ছোটো বোন শিলা রানিকে।” পাঠক ঠকতে ঠকতে অস্থির। বউ মারা গেলে তার ছোটো বোনকে বিয়ে করার বৈধতা প্রায় সকল ধর্মেই রয়েছে। সেই হিসেবে এই খবরটি একেবারেই সাদামাটা। বর্তমানে শোনা যায়, অনেক হিন্দুই চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো বোনকে বিয়ে করেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষ্যমতে এসব শিরোনাম “পারপাসলেস!” সত্যি বলতে কি, এরকম শিরোনাম তৈরি করে পাঠককে হয়তো সাময়িকভাবে ঠকানো যায়, বাড়ানো যায় ওয়েবসাইট ক্লিক। কিন্তু, প্রকৃত পাঠক এতে হারিয়ে যায়।
ওয়াদুদ খান; প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, সদরপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published.