লুটপাট, ঘুষ, দূর্নীতি দমনে চাই ক্রাশ প্রোগ্রাম, বিচারের প্রয়োজনে চাই সময় নির্ধারীত “বিশেষ ট্রাইব্যনাল”

রুহুল আমিন মজুমদার,উপ-সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রেস॥ গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম ‘শেখ হাসিনা’ বিশ্বের সৎ সরকার প্রধানদের মধ্যে তৃতীয় সৎ সরকার প্রধান হিসেবে স্বিকৃতি পেয়েছেন। তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নকামী দেশের সরকার প্রধানের এমন স্বিকৃতি অর্জন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জনগনের জন্যে অত্যান্ত গৌরব এবং মায্যদার বিষয়।তিনি এবং তাঁর পরিবার কোনরুপ দুর্নীতি বা’ স্বজনপ্রীতির সঙ্গে জড়িত আছে–তেমনটি তাঁর ঘোর শত্রুও বলবে না। কিন্তু তাঁর সরকার দূর্নীতি মুক্ত–হলফ করে কেউ বলতে পারবে না। ইতিমধ্যে কয়েক মন্ত্রী এবং এমপি’র বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখলবাজী, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, হত্যা, গুম, খুনের অভিযোগ পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শুধু তাই নয়–‘চলমান মাদক বিরুধী সাড়াষি অভিযানের তালিকায় কয়েকজন মন্ত্রী পুত্র, এমপি, সরকার দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান এবং আওয়ামীলীগের দলীয় নেতার নাম শীর্ষে রয়েছে’। র্যাবের মাদক বিরুধী অভিযানে টেকনাফ জেলা যুবলীগের সভাপতি এবং পৌর কমিশনার ‘একরামূল হক’ বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর অভিযোগের সত্যতা দৃড়তা পেয়েছে।ruhul amin mujumder
তাছাড়া–‘এমপি বা মন্ত্রী’ যোগ্যতা সম্পন্ন দলীয় নেতাদের মনতুষ্টির লক্ষে ক্ষমতাসীন সরকারের অফিস আদেশে–যে সমস্ত নেতাদের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারী, বেসরকারী ও স্বায়ত্বশাষিত সংস্থায় চেয়ারম্যান, সভাপতি, সদস্য বা পরিচালক পদে বহাল করেছেন, ‘তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে’। চলতি বছর এইরুপ কয়েক ব্যাংক পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগের ভিত্তিতে ‘দুদক’ জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ গ্রহন করে। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হলে–তাঁরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
তাছাড়া–মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের ব্যাক্তিগত সচিব পদে দলীয় নেতাদের নিয়োগ দানের একটি মহাসুযোগ পুর্ব থেকে সকল সরকারের সময় ছিল। বর্তমান সরকার দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করার পর–‘যে সমস্ত নেতাদের উক্ত সুযোগ প্রদান করেছে,তাঁদের বেশীর ভাগই স্ব-স্ব মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে উক্ত মন্ত্রনালয়কে দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি’র আখাউড়ায় পরিণত করেছে। সঙ্গতকারনে মন্ত্রীর দুর্বলতার সুযোগে উক্ত মন্ত্রনালয়ের সচিব সহ অন্যান্ন কর্মকর্তাগন ঘুষ, দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত হতে পেরেছেন।
১৯৯৬ ইং সালে আওয়ামীলীগ ২১ বছর নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম, অসীম ত্যাগ, একাগ্রচিত্তে সাধনার পর সরকার গঠন করার সুযোগ পেয়েছিল। উল্লেখিত বছরেই বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শেয়ার বাজার লুটের ঘটনা ঘটেছিল। পত্র পত্রিকার খবর অনুযায়ী এবং বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী আওয়ামীলীগের কতিপয় শীর্ষ স্থানীয় এমপি এবং বড়মাপের নেতা–বিএনপি’, জাতীয় পার্টির কতিপয় সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং শীর্ষস্থানীয় নেতাদের যোগসাজসে–শেয়ার বাজার লুটের এই কলংকজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছিল। আওয়ামীলীগ সরকার তৎসময়ে বার বার জনগনের নিকট ওয়াদা করেছিল–“শেয়ার বাজার লুটেরাদের উপযুক্ত বিচার করবেন,জড়িত কাউকে ছাড় দিবেন না”। বিচারের লক্ষে সরকার একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিশনও গঠন করেছিলেন। দুঃখ্যজনক হলেও সত্য–উক্ত তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট আজব্দি আলোর মুখ দেখেনি, জড়িত কারো বিচার হয়েছে তেমনটি শুনাও যায়নি।
২০০১ ইং সালের ‘বিএনপি-জামায়াতে’র মধ্যযুগীয় অত্যাচার, নিয্যাতন সহ্য করে আওয়ামীলীগের লক্ষ লক্ষ কর্মী ২০০৮ইং সালে আওয়ামীলীগকে ভুমিধ্বস বিজয় উপহার দেয়। অত্যান্ত দুঃখ্য ও পরিতাপের বিষয় আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার পর পরই ঠিক একই চক্র ‘ঢাকা–চট্টগ্রাম’ উভয় শেয়ার বাজার লুটপাটের নজীর বিহীন ঘঠনার জম্ম দেয়। এবার অভিনব উপায় এবং সু-পরিকল্পিত ভাবে গ্রাম গঞ্জের লক্ষ লক্ষ কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেতমজুরের সহজ সরল সন্তানদের প্রথমবস্থায় আলাদীনের চেরাগের লোভনীয় টোপ দেয়। তাঁরা কেউ কেউ জোর পুর্বক পিতার বহুকষ্টে অর্জিত জায়গা, জমি, বাড়ী ঘর বিক্রি করে পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহীত হয়ে পড়ে। পরবর্তিতে শহুরে চালবাজীর ঘুর্ণায়নে কোটিপতির দিবাস্বপ্নে বিভোর এবং আগামী কালই প্রাডো গাড়ীর শৌখিন মালিক গ্রামের সহজ, সরল যুবকদের সর্বসান্ত করে শেয়ার বাজারে অকল্পনীয় ধ্বস নামিয়ে দেয়। অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে স্বপ্নচারী ‘গ্রাম-গঞ্জে’র যুবক ভাইয়েরা–‘চোখে জল, পেটে ক্ষুদা নিয়ে স্বপ্নের রাজধানী ঢাকা ছেড়ে অনেকে’ই হাঁটাপথে নীজনীজ বাড়ীতে পৌঁছেন। বাড়ীতে এসে দেখেন–কারো মা, কারো বাবা পুত্রের করুন পরিণতি দেখার আগেই, হারানো সম্পত্তির শোক সইতে না পেরে–“ইহধাম ত্যাগ করে পরপারে চলে গেছেন”।
অত্যান্ত পরিতাপের বিষয়–লুটেরে’রা দীর্ঘদিনের পরিকল্পনায়, ধীরলয়ে, অনেকদিন সময় নিয়ে শেয়ার বাজার লুটপাটের নাটক মঞ্চস্ত করেছে। অথছ ‘৯৬এর ন্যাক্কারজনক অভিজ্ঞতায় সরকার সমৃদ্ধ থাকা সত্বেও তৎক্ষনাৎ বা কিছু সময়ক্ষেপন করেও কোনরুপ প্রটেকশনের উদ্যোগ গ্রহন করতে পারেনি। ‘৯৬ইং সালে যেমন আওয়ামীলীগ, বিএনপি’র নেতাদের যোগসাজসে লুটপাট সম্পন্ন করা হয়েছিল, ২০০৮ইং সালেও তদ্রুপ “আওয়ামীলীগ–বিএনপি”র মিলিতকারে লুটপাটের ন্যাক্কারজনক ইতিহাস সৃষ্টি করা হল। অভিজ্ঞ জনদের অভিমত-৯৬এর স্বল্পাকারে’র শেয়ার বাজার লুটপাটের বিচার হলে-২০০৮ ইং সালের বৃহদাকারের শেয়ার বাজার লুটের কাল অধ্যায়ের সৃষ্টি হতোনা।
তবে আশার কথা-৯৬ ইং সালের শেয়ার বাজার লুটের বিচার প্রাপ্তি না ঘটলেও ২০০৮ ইং সালে বেশ কিছু ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সুত্রিতার কারনে কাংক্ষিত ফলাফল প্রাপ্তি যথাসময়ে হচ্ছেনা ঠিক, মামলা যে আজও চলমান আছে, এতেই সন্তুষ্টি প্রকাশে দোষ কি?
আওয়ামীলীগ সরকারের দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের পর থেকে আর একটি ভয়াবহ দুর্নীতি’র চিত্র জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার জম্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জনগনের বিশ্বস্ততা’র প্রতিক ব্যাংক ব্যবস্থাপনা।আর এই ব্যাংকগুলীতে ২০১৮ ইং সালের জানুয়ারী মাসের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দেশের শীর্ষ ২০ ঋন খেলাফির নিকট পাওনা ৩২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। ২০১৭ ইং সালের সেপ্টেম্বর পয্যন্ত ব্যাংকগুলীতে মোট ঋনের পরিমাণ ৭লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।এর মধ্যে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা খেলাফি ঋন, অর্থাৎ ঋন গ্রহিতা যথারীতি আছেন, কিন্তু ব্যাংকের পাওনা টাকা দিচ্ছেন না। এর বাইরে ৪০ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করা হয়েছে।
অবলোপনকৃত ঋন সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোকপাত করা প্রয়োজন মনে করি। অবলোপনের অর্থগত দিক হচ্ছে–এই টাকা আর কখনও পাওয়া যাবেনা। সুতারাং ব্যাংক স্বেচ্ছায় উক্ত টাকা ঋন গ্রহিতাদের মাফ করে দিয়েছে। কি সাংঘাতিক কথা–দেশের ১৬ কোটি মানুষের রক্তঝরা টাকা, গুটি কয়েক কোটিপতিকে বিনা গ্যারান্টিতে বন্টন করে দিল!! আদায় করতে না পেরে আবার মাফও করে দিল!! একজন কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করে। সেই ফসল উৎপাদনে’র ক্ষেত্রে কখনও দৈব দুর্বিপাকে ১০হাজার টাকাও যদি ঋন গ্রহন করে, সেই টাকা আদায়ের জন্যে নির্দিষ্ট সময়ান্তে ব্যাংক কতৃপক্ষ কোমরে রশি লাগাতে দ্বিধা করেনা। আর সেই কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ভাত খেয়ে, কৃষক, শ্রমিকের তিলে তিলে জমানো টাকা কোটিপতি ঋনগ্রহিতাদের ঋন দিয়ে মাফ করে দেয়া হয়! কিন্তু কেন? অর্থাৎ ঋন গ্রহিতাকে ঠিকানা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না, অথবা ঋনের বিপরীতে বন্ধকী সম্পত্তি নিতান্তই কম। আমার মনে প্রশ্ন জাগে– “যিনি বা যে ব্যাংক কর্মকর্তাগন উক্ত খাতককে ঋনের সুপারিশ করেছিলেন, তাঁর বা তাঁদের নিকট থেকে উক্ত টাকা আদায় করা হবে না কেন”?
আর একটি ভয়াবহ চিত্র পত্রপত্রিকার খবরে উঠে এসেছে–ব্যাংক মালিকদের পক্ষ থেকে মনোনীত এবং সরকার কতৃক নিয়োগকৃত পরিচালকদের ক্ষেত্রে। পরিচালকগনের নীজেদের মধ্যে খেলাপি ঋনের পরিমান ৪হাজার কোটি টাকা। তম্মধ্যে নতুন প্রজম্মের সাউথ এগ্রিকালচারাল এন্ড কমার্স ব্যাংকের পরিচালক মাকসুদুর রহমান-তিনি উক্ত ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি’র চেয়ারম্যানও বটে।২০১৫ ইং সালে তাঁর “রতনপুর গ্রুপে”র নামে গ্রহন করা ৬টি ব্যাংকে ৯২৮কোটি টাকা ঋন পূণঃগঠন করেছেন। পূণঃগঠনের মাধ্যমে কম সুদ ও অন্যান্ন সুবিধা পেলেও ঐ ঋনের উল্লেখযোগ্য অংশ এখন পয্যন্ত তাঁর নামের বিপরীতে খেলাপীর খাতায় রয়ে গেছে।
আর এক নতুন ব্যাংক “এন আর বি কমার্শিয়াল ব্যাংকে”র পরিচালক কামরুন নাহার সাথী।তিনি ৯টি ব্যাংক থেকে “সিলভিয়া গ্রুপে”র নামে হাজার কোটি টাকা নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।তিনি শিপ ব্রেকিং কোম্পানী এবং ব্যবসায়ী জনাব মিজানুর রহমান সাহেবের স্ত্রী। শুধুমাত্র ব্যাংক পরিচালকদের সেপ্টেম্বর ২০১৭ ইং তারিখ পয্যন্ত ৪৭ হাজার ৫২৯কোটি টাকা গৃহিত ঋন। যাহা ব্যাংকের সাড়ে ৭লাখ কোটি টাকার মধ্যে ১৯’৬০%। পরিচালক নন এমন ২৯টি ব্যাংক থেকে ঋন নিয়েছেন ৩ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এমন ৫৩টি ব্যাংকে ৪৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা ঋন রয়েছে।
২০০৮ ইং সালে শেয়ার বাজার থেকে লুট করা হয়েছে ৪০ হাজার গ্রামগঞ্জের বিনিয়োগকারীর প্রায় দুই কোটি সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির ৪৩ হাজার কোটি টাকা। উক্ত টাকা “আওয়ামীলীগ-বিএনপি”র ১১টি “সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে”র কতিপয় কর্মকর্তার কারসাজিতে লুটপাট করা হয়েছে। ‘৯৬ ইং সালে ১৫টি কোম্পেনীর বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও বিচারকায্য আজও সম্পন্ন হয়নি।
২০১৬ ইং সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক– ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্ট থেকে ১০কোটি ১০লাখ ডলার, প্রায় বাংলাদেশী টাকায় ৮০৮ কোটি টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হয়ে যায়। যাহা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত ছিল। উক্ত গচ্ছিত অর্থের ১০০ মিলিয়ন ডলার ফিলিফাইনস্ত জুয়ার বোর্ডে পাওয়া যায়।ঐ অর্থ পাচার ফিলিফাইনের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অর্থ পাচারের ঘটনা। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ৮৭০ মিলিয়ন ডলার অবরোধ করে। শ্রিলংকায় যাওয়া ১কোটি ৪৫লাখ ডলার এবং ফিলিফাইনের ১কোটি ৪৫ লাখ ডলার কয়েকমাসের মধ্যে ফেরৎ আনা সম্ভব হলেও, বাদবাকী ৬কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরৎ আসবে কিনা–তাও কতৃপক্ষের জানা নেই। উক্ত হ্যাকিংয়ের ঘঠনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ জড়িত ছিল কিনা সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট–আজও আলোর মুখ দেখেনি।
ইতিমধ্যে প্রমানীত হয়েছে ২০০৩ সালের অর্থ ঋন আইন-ঋন আদায়ের ক্ষেত্রে কায্যকর কোন ভুমিকা’ই পালন করছে না। দুর্নীতি দমন কমিশন কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে’র অধিকাংশ কর্মকর্তা দুর্নীতিগ্রস্ততার খবর পত্রপত্রিকায় একাধিকবার চাপানো হয়েছে।তাছাড়া তাঁরা এতই অকর্মন্য, অথর্বতা’র পরিচয় বহন করছে যে–তাঁদের দেয়া নোটিশ অনুযায়ী ব্যাক্তি হাজির না হলে, পরবর্তি পদক্ষেপ নিতেও তাঁরা দ্বিধাগ্রস্ততায় ভুগেন। সুতারাং অর্থ ঋন আইন দিয়ে অর্থ আদায় সম্ভব নয়, দুদক দিয়েও দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়। বরঞ্চ তাঁরা আইনের বড় বড় ফাঁক সৃষ্টি করে রাখে–‘সেই ফাঁক গলিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক লুটেরা বের হয়ে যাওয়ার পথ সৃষ্টি হয়’।
ইতিপুর্বে দেখা গেছে–অর্থ সংক্রান্ত যে কোন বিষয় সংসদে আলোচিত হ’ত। সাংসদগন জাতীয় সংসদে অন্তত: হৈচৈ করে হলেও দেশের জনগনকে প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে সঠিক ধারনা দিতে পারতেন। এবারকার সংসদে গৃহপালিত বিরুধী দলের অবস্থানের কারনে–সে জানাটুকু থেকেও দেশের মানুষ বঞ্চিত রয়েছে। ফলে সত্য মিথ্যার বহু মিথ্য বাতাসে ঘুরপাক খাচ্ছে। ইহা একান্ত সত্য যে– ঢাকনা দেয়া বস্তু সকলেরই দেখার আগ্রহ থাকে, যতক্ষন ঢাকনায় থাকে ততক্ষন হরেক রকম আলোচনাও হয়। যখনই ঢাকনা খুলে দেয়া হয়, তখন হয়ত দেখা যায়, তেমন কিছুই সেখানে নেই”। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাও দাঁড়িয়েছে তাই।
উল্লেখিত আলোচনার সুত্রধরে একটি কথাই বলতে চাই–জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র বহু জনপ্রিয় উক্তির মধ্যে একটি বাস্তব সত্য উক্তি ছিল–“সবাই পেয়েছে স্বর্ণের খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি”। প্রচলিত আইন এবং বিধি অনুযায়ী ঘুষ, দুর্নীতি, ব্যাংক ঋন আদায়, শেয়ার বাজার লুট কোনক্রমেই বন্ধ করা যাবে না। নিয়ন্ত্রনের জন্যে দ্রুত গতিতে সকল অফিস আদালত আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করতে হবে, আইন ও বিধিবিধান যুগ উপযোগী করে সংস্কার এবং প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সব কিছুর আগে মাদক নির্মূলের চলমান রীতি অনুসরন করে, সরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করে একটি সাড়াষি ক্রাশ প্রোগ্রামের ব্যাবস্থা গ্রহন করা সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তি বিগত ৪৭ বছরেও কায্যকর দুর্নীতি দমনের উদ্যোগ কোন সরকার গ্রহন করেনি।ফলে সমাজ ব্যবস্থা দীর্ঘ সময়ে জবাবদিহীতার অভাবে সম্পূর্ণ অনৈতিকতার পঙ্কিলতায় ডুবে গেছে। এই অবস্থা থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া বর্তমান সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনা’র নৈতিক দায়িত্ব।যেহেতু বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙ্গালী জাতির জনক, তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবের আরাধ্য বাংলাদেশ ছিল সুখী, সমৃদ্ধশালী, বৈশম্যহীন, আধুনিক বাংলাদেশ। স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধাই হচ্ছে দুর্নীতি। দীর্ঘ বছরের চর্চিত ঘুষ খোর, দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক লুটেরা, শেয়ার বাজার লুটেরাদের যেহেতু প্রমান ব্যাতিত বন্দুক যুদ্ধে হত্যা করা সম্ভব নয়–সেহেতু নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে একাধিক বিশেষ ট্রাইব্যনাল গঠন করা যায় কিনা, একান্ত নিবিড় ভাবে ভেবে দেখা দরকার। প্রয়োজনে প্রমানীত দুর্নীতিবাজ লুটেরার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্ত এবং দুর্নীতির মাধ্যমে ১০ কোটি টাকার উপরে আহরিত সম্পদের মালিকদের মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে নতুন করে আইন প্রনয়ন করা যায় কিনা, ভেবে দেখা যেতে পারে। ১০ কোটির নিম্নতম দুর্নীতিবাজদের পয্যায়ক্রমে জেল, জরিমানা, সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিধান রাখা উচিৎ মনে করি। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনধিক ১বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে আইনপ্রণয়ন করা ব্যাতিত এই বটবৃক্ষের মুলৎপাটন সম্ভব হবে না।
উল্লেখিত তিন খাত থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের পরও বঙ্গবন্ধুকন্যার অক্লান্ত পরিশ্রম, সততার গুনে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মায্যদা লাভ করেছে। জনগনের মাথাপিছু আয় বেড়ে ৭শ ডলার থেকে ১৬৭০ ডলারে পৌঁছেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে হয়েছে তিন চার গুন, জীবন যাত্রার মান বেড়েছে অকল্পনীয়। গ্রামের স্কুল ছুটির পর বুঝা যায়না–“এই সমস্ত ছাত্র/ছাত্রীরা আমাদের সময়ের গ্রামের স্কুলের, নাকি ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকার কোন বিদ্যালয়ের। পদ্মাসেতুর মত মেঘা প্রকল্প বিশ্ব ব্যাংককে বৃদ্ধা্গংুলী দেখিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। দেশব্যাপী চলছে উন্নয়নের জোয়ার। তথ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ঘটেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। নারী পুরুষ, দিন মজুর, কৃষক, কৃষানী, শ্রমিক সর্বশ্রেনী- পেশার মানুষের হাতে হাতে এনড্রয়েড ফোন। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৮কোটি মানুষ সরাসরি ইন্টানেটের সাথে সংযুক্ত। ১৬কোটি মানুষের দেশে ১৪কোটির উপরে সীম ব্যবহাহৃত হচ্ছে। এই প্রথম বাংলাদেশ মহাকাশে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ পাঠিয়েছে, স্যাটেলাইট তাঁর নির্দিষ্ট কক্ষপথে সফল ঘুর্ণয়ন শুরু করে দিয়েছে। গড়ে উঠছে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে সভ্যতার প্রধান বাহন বিদ্যুতের আলো। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সমুদ্র জয়, স্থল সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়নের ফলে একলক্ষ দশ হাজার বর্গ মাইলে পরিণত হয়েছে। বিশাল ভুখন্ড তত্বাবধানে ক্রয় করা হয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ, জঙ্গি বিমান, ফ্রিগেট সহ অত্যাধুনিক সাবমেরিন।
কোন কিছুই কারো দয়ার দান নয়, মন্ত্রী এমপি, নেতাদের কারো গুনেও নয়। “এই সব কিছুই সম্ভব হয়েছে একমাত্র এবং একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যার অক্লান্ত পরিশ্রম, সততা, ধৈয্য, প্রজ্ঞার গুনে। আরও একটি বিশেষ দিক অন্ধকারে রয়ে গেছে–“তাঁর পরিবার এবং নিকটাত্মীয়দের ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে রাখতে তিনি কৌশলি ভুমিকা পালন করতে সফলভাবে সক্ষম হয়েছেন। ফলাফল–শুধুমাত্র নীজের দেশ নয়, বিশ্বব্যাপী সুনামের শীর্ষ স্থানটি এককভাবে তিনি উপভোগের ভাগিদার হতে পেরেছেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা “তৃতীয় সৎ সরকার প্রধানে”র খ্যাতি অর্জনের পর অতিসংক্ষেপে শুধু একলাইন কথা ইঙ্গিতে বলেছিলেন–“মাথায় যেহেতু পঁচন ধরেনি-শরীরের পঁচন ঠেকাতে কতক্ষন”। বাংলাদেশের মানুষ তাঁর এই ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য যথারীতি হৃদয়ঙ্গম করেছে। মানুষ আশায় বুক বেঁধে আছে– “বঙ্গবন্ধুকন্যা যেহেতু মুখ দিয়ে বলে দিয়েছেন, সেহেতু অবশ্যই দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে তিনি একটি বড়সড় যুদ্ধ ঘোষনা করবেন, শুধুই সময়ের অপেক্ষা”।

Leave a Reply

Your email address will not be published.