চপল, লন্ডন প্রতিনিধি॥ বাংলাদেশে ফিরতে তারেক জিয়া ৭ শর্ত দিয়েছে। ব্রিটিশ হোম ডিপার্টমেন্ট গত এপ্রিল মাসে তারেক জিয়াকে কারণ দর্শাও নোটিশ জারি করে। ওই নোটিশে তারেকের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, কেন তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করা হবে না এবং তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে না। বাংলাদেশ সরকার তারেক জিয়াকে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে দেশে ফেরত চেয়ে এক আবেদন করে। ওই আবেদনে বলা হয়, দুটি দুর্নীতি মামলায় জরিত হয়েছেন তারেক জিয়া। আইনের শাসন নিশ্চিত করার স্বার্থে দেশে ফিরিয়ে এনে তাঁর দ্রুত কার্যকর করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার ওই চিঠি দেয়। তারেক জিয়া এই চিঠি প্রাপ্তির তিনদিন পর তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে জবাব পাঠিয়েছেন। তারেক জিয়ার আইনজীবী লিখিত চিঠিতে জানিয়েছেন যে তাঁর মক্কেল তারেক রহমান দেশে ফিরতে আগ্রহী। কিন্তু মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য দেশে ফেরার আগে সে কয়েকটি পূর্বশর্ত দিয়েছে। তারেক জিয়ার আইনজীবীর চিঠিতে ৭টি পূর্বশতের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলোঃ
১। যেহেতু মক্কেল তারেক রহমান একটি রাজনৈতিক দলের অন্যতম প্রধান নেতা। ঐ রাজনৈতিক দলটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি দল। দলটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবী করে আসছে। বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে তারেক রহমানের দল বিএনপি মনে করে। এই জন্য দলটি গত দশ বছর নির্দলীয় নিরপেক্ষ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলন করে আসছে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী না মানলে দেশে ফিরলে তারেক জিয়ার উপর দমন পীড়ন ও রাজনৈতিক হয়রানি বাড়তে পারে, তাই বর্তমান সরকারকে তারেক রহমানের দেশে ফেরার আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মানতে হবে।
২। তারেক জিয়ার আইনজীবী লিখেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন জনঅংশগ্রহণমূলক হয়নি। তাই বর্তমান সরকার আইনজীবীর মতে ‘জনগণের নির্বাচিত’ নয়। তাই তারেক জিয়ার দেশে ফেরার আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চেয়েছেন তারেকের আইনজীবী।
৩। তারেক জিয়ার আইনজীবী মনে করেন, যে দুটি মামলায় তারেক জিয়াকে জরিত করা হয়েছে তা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় হয়নি। এসব মামলায় তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাই তারেক জিয়া দেশে ফেরার পূর্বশর্ত হিসেবে ঐ আইনজীবী, তারেক জিয়ার ওই দুটি মামলার রায় স্থগিত করার শর্ত দিয়েছেন। মামলা দুটি পুনঃতদন্তের শর্ত দেওয়া হয়েছে।
৪। দেশে ফেরার পূর্ব শর্ত হিসেবে তারেক জিয়া তাঁর বিরুদ্ধে অন্যান্য মামলা গুলোর কার্যক্রম স্থগিত চেয়েছেন। কারণ এসব তার আইনজীবীর ভাষায় রাজনৈতিক হয়রানিমূলক।
৫। তারেক জিয়া দেশে ফেরার আরেকটি পূর্ব শর্ত হলো, তাঁর মা এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা। তারেক জিয়ার আইনজীবী বলেছেন, বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে হয়রারি এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য। তাই তাকে মুক্তি দিতে হবে।
৬। আইনজীবীর লিখিত চিঠিতে, তারেক জিয়ার দেশে ফেরার আগে, ‘রাজনৈতিক হয়রানি’ মূলক মামলা যে গুলো বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে, সেগুলোর প্রত্যাহার চেয়েছে।
৭। সকল গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে তারেকের আইনজীবী। যুক্তরাজ্য হোম ডিপার্টমেন্ট অবশ্য এই চিঠির ব্যাপারে কোন প্রতিক্রিয়া এখনো জানায়নি। তবে, তারেক জিয়ার প্রত্যার্পন নিয়ে কাজ করছেন এমন একজন আইনজীবী বলেছেন, তারেক তাঁর প্রত্যাপনের সংগে সম্পর্কিত নয় এমন সব অবান্তর বিষয়ের অবতারনা করছেন। যুক্তরাজ্য সরকার এ ব্যাপারে কিছু করলে তা হবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র নীতি যা সমর্থন করে না।