বা আ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আধুনিক, উন্নত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেনাবাহিনীকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে। এ জন্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার-বিশ্নেষণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকা সেনানিবাসে হেলমেট কনফারেন্স কক্ষে গতকাল রোববার ‘সেনা সদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০১৮’-এর উদ্বোধনী বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আদর্শগতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যন্ত মৌলিক এবং মুখ্য বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ন্যস্ত হয় তাদেরই হাতে, যারা দেশপ্রেমিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।’
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সুসংহত করতে সুশৃঙ্খল, শক্তিশালী সেনাবাহিনী অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী- এরূপ যোগ্য অফিসারদের কাছে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে।’
নির্বাচনী পর্ষদে দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন অফিসাদের ওপর আস্থা রেখে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে আপনারা ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে উপযুক্ত নেতৃত্ব নির্বাচনে সর্বতোভাবে সফল হবেন। উপযুক্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমেই যে কোনো বিজয় বা সাফল্য অর্জন সম্ভব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেসব অফিসার সামরিক জীবনের বিভিন্ন কর্মকান্ডে যোগ্য নেতৃত্ব প্রদানে সফল হয়েছেন; পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদেরকে বিবেচনায় আনতে হবে। তাদের শিক্ষা, মনোভাব, সামাজিকতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিরীক্ষা করেই পদোন্নতি প্রদান করতে হবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা, সততা, বিশ্বস্ততা এবং আনুগত্যের ওপরেও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের কথা স্মরণ করেন। ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন এবং ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা উন্নত, পেশাদার এবং প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা প্রণীত নীতিমালার আলোকে আমরা ‘আর্মড ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আনন্দিত যে, সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য ‘টার্বুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কম্পারেটিভ ইভালুয়েশন’ (টিআরএসিই)-এর মতো একটি আধুনিক পদ্ধতির প্রচলন করা হয়েছে, যা পেশাগত দক্ষতার বিভিন্ন দিকের তুলনামূলক মূল্যায়ন প্রকাশ করে। এ ছাড়া তিনি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেনাবাহিনীর উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। তবে তা মোকাবেলার সক্ষমতা থাকতে হবে।’
সেনা আবাসন প্রকল্প ও বহুতল সরকারি পারিবারিক বাসস্থান নির্মাণ করা, সেনা সদস্যদের উন্নতমান ও বর্ধিত স্কেলে রেশন সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং দুস্থ ভাতা বাড়ানোর কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেনাবাহিনীর কমান্ডো, এভিয়েশন ইউনিটের বৈমানিকদের উড্ডয়ন ঝুঁকি বীমার আওতায় আনার বিষয়গুলো উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী একাগ্রতা, কর্মদক্ষতা এবং নানা জনসেবামূলক কর্মকান্ডের জন্য সর্বজনীন আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। রোহিঙ্গা সংকটে সেনাবাহিনীর কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের জোরপূর্বক বান্তুচ্যুত নাগরিকদের সহায়তায় সেনাবাহিনী অত্যন্ত প্রশংসার সঙ্গে কর্মকা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করছে।
সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো: নজিবুর রহমান, প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূইয়া, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও মেজর জেনারেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।