ড্রাইভিং- শুধুই দক্ষতা নাকি দ্বায়িত্ব ও বটে

প্রিন্সেস সঞ্জয়॥ দায়িত্ব: আজ সকালে একজন ড্রাইভারের সাথে চেঁচাতে গিয়ে গলা বসে গেল! ভাবছেন ঝগড়া করেছি! তা এক অর্থে সত্য। ক্যন্টনমেন্টের রান্তায়, কাফুল কর্নারে, চেকিং এর খানিক আগে জ্যামের মধ্যে পড়েছি। ওখানে বারো মাস জ্যাম থাকে যা মাঝে মাঝে মিরপুর ১৩ পর্যন্ত পৌঁছায়। এক প্রাইভেট কার এর পাশে আমি মোটর বাইকে। তার সামনে একটা বাইক আর অসংখ্য গাড়ী। ড্রাইভার অনবরত হর্ন বাজিয়ে চলেছেন। ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে থেকে এমনিতেই বিরক্ত, তার উপর অহেতুক হনের বিকট শব্দ আমার ধৈয্যের বাধ ভেঙ্গে গেল। ঐ উচ্চ শব্দের মধ্যে আরো গলা উঁচিয়ে তাকে বলতে হলো, driving responsibility
‘ভাই হর্ন দিয়ে লাভ কি? ”
তার উত্তর “দেখেন না সামনে থেকে বাইক সরে না”
“সরে যাবে কোথায়? উনি কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার জন্য বাইক নিয়ে নেমেছেন? হর্ন বাজিয়ে কি লাভ”
“লাভ আছে বলেই বাজাই”
লাভটা কি”
“লাভ আছে”
“আপনি হর্ন মারলে উনি কি সামনে থেকে উড়ে যাবেন? হর্ন বাজিয়ে কি লাভ হচ্ছে ? ”
“লাভ আছে”
চেচিয়ে এটকু বলতেই আমার গলা শেষ! ড্রাইভারের চেহারা ব্যাজার।
একটু পর টুক টুক করে আর্মি চেকিং এর দিকে এগোতে থাকলাম। দেখলাম বামের বিশেষ লেন দিয়ে গাড়িটা বেরিয়ে গেলো, ড্রাইভারের মুখ তখনো ব্যাদান হয়ে আছে। বুঝলাম, কোন পাওয়ার ওয়ালার গাড়ী! বেশী কথা বলি নাই, বেঁচে গেছি! একটু পর আবার সে জ্যামে পড়লো, আমি ফাঁক গলে জ্যাম সাঁতরে এগোতে থাকলাম। তার মুখের দিকে তাকাবার সাহস আর হলো না। ব্যাটার দিনটাই খারাপ হয়ে গেল।
আমি যতক্ষন আশেপাশে ছিলাম, সে আর হর্ন বাজায়নি।
মোরালঃ মাঝে মাঝে হালকা চেতা দিলে কাজ হয় 😉 কিন্তু হেলমেট খোলা যাবে না!
দায়িত্ব ২
কয়েক বছর আগের ঘটনা, কিন্তু স্বরনীয়। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের রাস্তা, একটু বৃস্টি হলে এই রাস্তায় পানি জমে যায়। বৃস্টি থামলে পর, মোটর বাইকে যাচ্ছি। পানিতে ডোবা রাস্তা পার হবার সময় রাস্তার খুব পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে বাইক চালিয়ে যাচ্ছি, যেন জামা-জুতা ভিজে না যায়। পাশ থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে জোরে কাঁচ বন্ধ এক গাড়ি বেরিয়ে গেলো! রাস্তার পানি ঝরনার মত আমার মাথার উপর দিয়ে কিছু পার হলো, বাকীটা আমায় গোসল করিয়ে দিলো। একটু আধটু না! সম্পুর্ন গোসল! চামড়া পর্যন্ত রাস্তার নুড়ি পাথর অনুভব করছি! সারা গায়ে কাদা -পানির মাখামাখি। এবার আর স্পীড লিমিটের তোয়াক্কা না করে বাইকে টান দিতেই বাইকের সাথে আমার রাগ ও লাফিয়ে উঠলো! কিছুদুর গিয়েই তাকে ধরতে পারলাম। তার সামনে গিয়ে বাইক থামিয়ে, রাস্তা থেকে এক আজলা জল তুলে ড্রাইভারের জানালার বন্ধ কাঁচের উপর ছিটালাম। সঙ্গে সঙ্গে সে আর তার মালিক বুঝে গেল ঘটনা কি! ড্রাইভার একটু হম্বিতম্বি করার চেষ্টা করছিলো। কপাল ভালো সাথে সাথে একজন আর্মি অফিসার হাজির! তাকে ঘটনা বললাম, তিনি বললেন, “আপনি কেস করতে চাইলে করতে পারেন” । আহা! মুহুর্তেই গাড়ীতে বসা ভদ্রলোক আর ড্রাইভারের সে কি কাকুতি-মিনতি ক্ষমা প্রার্থনা!
আমার ও দয়ার শরীর! মহুর্তে গলে বৃস্টির জল হয়ে গেলাম। শুধু ভদ্রলোক কে বললাম, “ ড্রাইভিং- শুধু দক্ষতা না দ্বায়িত্ব ও বটে । এটা আপনার ড্রাইভার কে শেখাবেন।” আর্মি অফিসার কে অশেষ ধন্যবাদ জানালাম।
মোরালঃ বাঙ্গাল শক্তের ভক্ত; নরমের যম। সেদিন আর্মি অফিসার না থাকলে তিনারা আমার বাহাদুরি ছুটিয়ে দিতেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published.