অশান্তির আগুনে ছটফট করছে ঢাকার রাস্তা এবং জনগণ

Vector-Smart-Objectগত কয়েকদিন ধরে ঢাকা শহরে শত বৃষ্টির মাঝেও উত্তপ্ত মরুভূমির স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুজন ছাত্রের অকাল প্রয়াণ আমাদেরকে আবেগ এবং মনোবেদনায় কাতর করেছে বটে, পাশাপাশি আস্কারা ও সমর্থনে কোমলমতি ছেলে মেয়েদের সর্বনাশও ডেকে এনেছি। দেশের কল্যানের তরে এমনকি উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এই কোমলমতি ছেলে মেয়েরা এগিয়ে যাবে; কারণ এখনই সময় তারুণ্যের ও যৌবনের। এই যৌবন ও তারুন্যকে ব্যবহার করে যদি ভাল এবং ইতিবাচক ও জনকল্যাণকর কিছু একটা করা হয় তাহলেই সঠিক অবস্থান বলে মেনে নেয়া যায়। কিন্তু জনদূর্ভোগ সৃষ্টি ও সম্পদের ক্ষতি কারোরই কাম্য নয়; যা তারুন্যদিপ্ত ও যৌবনের যুবাদের কাজ নয়।
কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ এবং ভাংচুরকে অনেকেই সমর্থন করেছেন এবং বাহাবাও দিয়েছেন বটে। তবে ভাংচুর কোনভাবেই কাম্য নয়। প্রতিবাদের ভাষা হবে সুশৃঙ্খল এবং মাধুয্য মিশিয়ে নতুনের আহবানে পুরাতনের বিদায় ও জরাজীর্ণতার সংস্কার করণের লক্ষ্যে। কিন্তু এখানেও বিভ্রাট ঘটেছে। ঘটেছে অতিরিক্ত বারাবারি। বিশৃঙ্খলা এবং অন্যায়কে অন্যায়ের মাধ্যমে প্রতিহতের এমনকি ক্ষমতা প্রদশর্নের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ ও জনঅসন্তোষ সৃষ্টি করা। প্রতিবাদি স্কুল ও কলেজের ছেলে মেয়েদের মুখের ভাষা বিশ্রী এবং ঊদ্যত্ত্বপূর্ণ আচরণ সম্পূর্ণই বেমান। কারণ এরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত এবং জাতি ও প্রজন্ম এদের কাছে কিছু আশা করে। যা দেখিয়েছে তা কারো বেলায়ই কাম্য নয়।
আন্দোলনরত ছাত্রদের সকল দাবি-দাওয়া সরকার মেনে নিয়েছে। ইতিমধ্যে সবরকম ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাসও দিয়েছে। প্রশাসন অপরাধিকে বন্দি করেছে এবং বিচারের আওতায় এনেছে। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপুরণ দিয়েছে। নিহতদের বাবা মা আন্দোলনরতদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে ঘরে ফিরে গিয়ে পড়া-লেখায় মনযোগ দিতে উদাত্ত আহবান জানিয়েছে। কিন্তু তারপরও আন্দোলন থামছে না। কি কারণে এখন আন্দোলন? কাদের জন্য আন্দোলন? সুতরাং বুঝতে হবে এবং সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। নতুবা সবই ভেস্তে যাবে।
বিভিন্ন প্ল্যাকাড নিয়ে মেয়ে ও ছেলেরা রাস্তায় অবস্থান করেছে। এটা কি বাহাদুরী না নিজেকে জাহির করার হাতিয়ার। আর তাই যদি হয় সেখানে কেন বিশ্রি ভাষার ফুলঝুরি। শিক্ষার আলোকবর্তিকা কেন নেই? যারা আগামী প্রজন্মকে দিকনির্দেশনা দিবে তারা যদি হয় এমন অজ্ঞ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তাহলে তাদের কাছ থেকে শিখার কোন দরকার এ জাতির নেই বরং তাদেরকে শিখাতে হবে, সুশৃঙ্খল জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে, ভাষাজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত করতে হবে, সামাজিকতা এবং নৈতিকতা ও ইতিবাচকতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চর্চার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা ঐ ঘৃণীত ও পতিত শব্দ ব্যবহার করে তারা কি বুঝাতে চাচ্চে তা অনেকেরই বোধগম্য নয়। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, ঐ প্ল্যকার্ড লিখক এবং বাহক উভয়ই কান্ডজ্ঞানহীন ও অক্ষরজ্ঞানহীন।
স্কুল কলেজের কোমলমতি ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন স্কুলের ছেলে মেয়েদের স্কুলে যেতে ও স্কুল থেকে ফিরতে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে কি বোঝাতে চাচ্ছে? পড়ালেখার প্রয়োজন নেই মুরুক্ষ এবং অন্ধকার জগতের বাসিন্দা বানাতে? ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে মা বাবারা কত অশান্তিতে হা পিত্তেষ করে যাচ্ছে তা বোঝার এবং বোঝানোর কেউ নেই। হেটে হেটে ৩/৪বছর থেকে শুরু করে ৯/১২ বছরের মেয়ে ছেলেদের ভোগান্তির অন্তহীন যন্ত্রনা ভোগ করাচ্ছে। এতে করে ছোট শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং অতি শোকে কাতর এবং অধিক শোকে পাথর এর মত হয়ে বেড় উঠছে। যারা আন্দোলন করে যাচ্ছে তাদের প্রতি ঘৃণা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর যে ঘটনার পরিনতিতে এই আন্দোলন; এই ঘটনার প্রতি মায়াজাল ছিন্ন করে ভিন্ন চিন্তা ও যুক্তি উপস্থাপন করছে। দুর্ঘটনার জন্য কি শুধু ড্রাইভারই দায়ী? নাকি আরো কিছু রয়েছে এর পিছনে। আমার জীবন বাচানোর দায়িত্ব কি ড্রাইভারের নাকি আমারও। রাস্তা ঘাটে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবো সেই দায়িত্ব কি নিজের কাধ থেকে নামিয়ে অন্যের কাধে দিব নাকি নিজের কাধেই রাখব?
অফিসগামি এবং অফিস ফেরত মানুষের ভোগান্তির অন্ত নেই। কিভাবে অফিস করবে তার কোন ইয়াত্তা নেই। কিন্তু এই কোমলমতি ছেলে-মেয়েরা কি খাবে এবং কি পড়বে ও কিভাবে তাদের স্কুল কলেজের বেতন পরিশোধ করবে? তার কি কোন চিন্তা ভাবনা কষছে না হুজুগে মাতাল হয়ে নিজের বুদ্দি ও বিবেচনার বাইরে গিয়ে কারো প্ররোচনায় উত্তেজিত হয়ে ত্যাজ প্রদর্শন করে যাচ্ছে। অফিস আদালতের চাকা সচল রাখতে না পারলে সবই ভেস্তে যাবে। অফিস আদালত সচল রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। আন্দোলনকারীদের মা-বাবাদের মধ্যেও রয়েছে- ড্রাইভার, সরকারী ও বেসরকারী অফিসের প্রধান থেকে পিয়ন পর্যন্ত। সুতরায় হিতাহিত জ্ঞান না হারিয়ে বুদ্ধিদৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে।
দেশের নৈরাজ্যে কি এবং কাদের প্রয়োজনে বিদেশগামী ও বিদেশ ফেরত এমনকি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে যাতায়তকারীদের হয়রানী হচ্ছে? জনাব জাহাঙ্গীর সাহেব একজন আদ্যপান্ত অসুস্থ্য মানুষ; যার শরীরের সমস্ত অংশই সংযোজিত। তিনি রংপুর থেকে সৈয়দপুর হয়ে বিমানযোগ ঢাকায় এসে বিমানবন্দর থেকে নিরুপায় হয়ে হেটে বাসায় ফিরে শয্যাশায়ী হয়ে আছেন? এই মুমুর্ষ মানুষটির মত হাজারো মানুষ এই বেদনাময় ঘৃণানুভূতি নিয়ে ঘোরপাক খাচ্ছেন। শুধু কি তাই জার্মান নাগরিক বিমান থেকে নেমে তার সুটকেস মাথায় নিয়ে বারিধারার গন্তব্যে পৌছেছেন এবং বিষন্ন মনে হাপিয়ে হাপিয়ে বলেছেন এই দুর্ভোগ এর কথা। কেউ কি ভেবে দেখেছেন এই দুর্ভোগে কি ক্ষতি হচ্ছে এবং এর পরিনামে আমরা কি পাচ্ছি? হ্যা প্রাপ্তির হিসেব না হয় পড়েই করছি কিন্তু দুর্ভোগের হিসেব কষা অত্যন্ত জরুরী। তাই এই প্রয়োজনহীন অবরোধ এবং ব্যারিকেটের আর প্রয়োজন নেই। যদি অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়ি হয় তাহলে হয়ত জনঅসন্তোষের রোষানলে কোমলমতিদের বিপদাসন্ন এবং এর থেকে রেহাও মিলবে না। তাই জ্ঞানের পরিবেশে ফিরে গিয়ে পরিবার এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তায় মগ্ন হওয়া অতিব জরুরী।
রাজনৈতিক দলগুলো অপরাজনীতির ফায়দা লুটতে এই ধরনের হীন কাজে যেন লীপ্ত না হয়। কারণ এর রেশ অল্পতেই কেটে যাবে কিন্তু অপরাজনীতির রেশ কাটতে সময় লাগে। যদিও সরকার সচেতন এবং অপরাজনীতি মোকাবেলায় পারদর্শী ও আগুনে পানি ঢালতে উস্তাদ সেহেতু নোংরামী না করে এমনকি ফায়দা লোটার ইচ্ছায় বা লিপ্সাকে শিকল বন্দী করে নতুন কোন গঠনমূলক ইতিবাচক রাজনীতির ময়দানে সয়লাভ হলে আরো ফলপ্রসু হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এই ক্ষুদেদের সঙ্গে অপ ও নেতিবাচক শব্দচয়ন গুলিকে যুক্ত করবেন না বরং তাদের সঙ্গে ইতিবাচক এবং জ্ঞাননির্ভর রাজনীতি ও নীতির প্রশ্নে সহযোগীতা করলে সকলের জন্যই মঙ্গল হবে। জ্ঞানের বিচরণ এইভাবে রাস্তায় নয় বরং উপযুক্ত ক্ষেত্রে কাজের বহি:প্রকাশের মাধ্যমে। রাস্তায় ধ্বংসযঞ্জে এবং জনভোগান্তিতে জ্ঞানের কোন স্বাক্ষর বহন করে না এবং গুরুজনদের সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের রীতির বাইরে কোন রেওয়াজ দেখানোও শোভন নয়।
সরকার আরো সচেতন হয়ে এই বিষয়টি মোকাবেলা করলে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের কোমলমতি হয়ে কোমলমতিদের সঙ্গে মিশলে হয়ত এই ভোগান্তি এবং অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। তাই দায়িত্বপ্রাপ্তদের শরীরের গরম রক্ত ঠান্ডা করতে হবে এবং হামলা ও মামলার ভয় দেখানো বন্ধ করতে হবে। নতুবা প্রতিনিয়তই ঝুকি এবং দুর্নাম বহন করে এই ধরণের নতুন নতুন ঝামেলার উদ্ধেগ চলমান থাকবে। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সকলকিছু মোকাবেলা করেন এবং দিকনির্দেশনা দেন ঠিক সেইভাবে তাঁর সরকারের লোকদেরও শিক্ষাগ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে; তবেই জাতি শান্তি এবং আনন্দ ও স্থিতিশীলতায় সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। সামনে নির্বাচন এমনিতেই ঝাক্কি ও ঝামেলা আসন্ন সেখানে এই ধরনের ঠুনকো ঝামেলাকে বৃহতে পরিণত করা বা করতে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় এবং দেখতে ও শুনতে শুভন নয়। তাই সময় থাকতে হাল ধরতে প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানাই।
অভিবাভক এবং মুরুব্বী শ্রেণীর সম্মানীতদের এখনই এগিয়ে আসতে হবে। এই নৈরাজ্য আর চলতে দেয়া যায় না। সন্তানদেরকে স্কুল কলেজে পাঠিয়েছি রক্ত ও ঘাম ঝাড়ানো অর্জনের মাধ্যমে। তাদের খোজ খবর রাখা অত্যান্ত জরুরী। তাদের দ্বারা এই ধরণের নৈরাজ্যময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে দেয়া যায় না। তাই প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সন্তাদের দায়িত্ব নিলে আগামী দিনের জ্ঞানের পরিধি আরো সুন্দরভাবে বিকশিত হবে এবং জাতি জ্ঞাননির্ভর সম্পদে ভরপুর হবে। আমাদেরকে এখনই সচেতন হয়ে এইসকল বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করতে হবে। সরকারের শুধু একার দায়িত্ব নয় বরং আমাদের সকলেরই দায়িত্ব এই জনগুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ক্ষুদ্রকে বৃহতে পরিণত করা ইস্যুতে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published.