প্রশান্তি ডেক্স॥ হাত পেতে চাকরি নয়, নিজ পায়ে দাঁড়ান, নিজ উদ্যোগে কিছু করুন তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। গত মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘পলিসি ক্যাফে উইথ সজীব ওয়াজেদ: রিডিফাইনিং এমপয়মেন্ট’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, কর্মসংস্থান সম্পর্কে অতীতে চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদের নতুন করে ভাবতে হবে। চাকরি করার জন্য নয় বরং নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে অন্যের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে হওয়া এ আলোচনায় তিনি বলেন, সরকার আপনাদের সঙ্গে আছে। বর্তমান সরকার উদার। নতুন উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনে সরকার তার নীতি এবং আইন পরিবর্তন করেছে এবং করবে। সরকারের কাজ আপনাদের উদ্যোগের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা এবং তা সফল করার জন্য বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া। আওয়ামী লীগ সরকার তা দিয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থানকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে তিনি বলেন, ‘কর্মসংস্থান ও চাকরির কোনো সম্পর্ক নেই। দেশে বাইক চালিয়ে, টিউশনি করে বা পার্ট টাইম চাকরি করে অনেকেই আয় করছেন। তাদের কাছে বিভিন্ন পরিসংখ্যান চলাকালে জানতে চাওয়া হলে বলা হয়, কোনো চাকরি করি না। কিন্তু আসলে তাদের কর্মসংস্থান রয়েছে। আমাদের সমাজে এখনো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি চাকরি বা বেসরকারি বড় প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী নিয়োগ ছাড়া বাকি কর্মসংস্থানকে চাকরি হিসেবে ধরা হয় না।’এ সময় তরুণ উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন উদ্যোগ ও সমস্যা নিয়ে আলোচনাকালে সজীব ওয়াজেদ বলেন, সরকারের কাজ উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি করা। আওয়ামী লীগ সরকার তা করছে। সজীব ওয়াজেদ বলেন, সুশীল সমাজ বাংলাদেশের কোনো উন্নতি দেখতে পায় না। সুশীল সমাজের বাংলাদেশের নেতিবাচক বিষয়গুলো দেখতে পায়। তারা বাংলাদেশের ভালো দিক নিয়ে কোনো কথা বলে না। নিজের দেশকে নিচু চোখে দেখে। আর তুলনা করার সময় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে। জয় বলেন, ‘সুশীল সমাজ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিকে “জব লেস গ্রোথ” বলে। কোটা নিয়েও তারা ভুল তথ্য দেয়। সত্য হলো বাংলাদেশে মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেকারত্ব। অর্থনীতিবিদদের তথ্যানুসারে, ৫ ভাগের নিচে বেকারত্ব থাকাকে শূন্য বেকারত্ব হিসেবেই ধরা হয়। যেখানে অস্ট্রেলিয়ায় ৫ দশমিক ৫ ভাগ বেকারত্ব এবং ফ্রান্সে আমাদের দ্বিগুণ ৯ দশমিক ২ শতাংশ বেকারত্ব বিরাজ করছে, তারপরও আমার দেশের প্রবৃদ্ধিকে জবলেস গ্রোথ বলে সমালোচনা করছে সুশীল সমাজ।’
সজীব ওয়াজেদ আরও বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেটার দিকে নজর দিচ্ছে না তারা। বরং বেকারত্ব নিয়ে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। অথচ শুধু ২০১৭ সালে দেশে ১৪ লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। দেশের পরিসংখ্যান অনুসারে যে ৪ দশমিক ২ ভাগ বেকার হিসেবে দেখানো হচ্ছে, সেটিও গতানুগতিক হিসাব অনুসারে। এখানে উবার, পাঠাও বা এ-জাতীয় কর্মসংস্থানের হিসাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই তালিকায় মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে কাজ করা ৩ লাখ ৯৩ হাজার মানুষের কথাও উল্লেখ করা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা জয় বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে দরিদ্র ও রুগণ এক দেশ হয়ে থাকতে চায় না। আমরা উন্নতি করছি। এখন আমার সরকারের কাছে মার্কিন সরকারের মতো টাকা থাকলে আমরাও যুক্তরাষ্ট্রের মতোই কাজ করতে পারতাম। এখন যদি এক দিনে পদ্মা সেতু করে ফেলতে বলে, তা তো সম্ভব নয়। সময় দিতে হবে। একদিন নিশ্চয়ই আমরা উন্নত দেশগুলোর মতোই সব কাজ করব।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, পাঠাওয়ের সিইও হুসেন ইলিয়াস, সেবা এক্সওয়াইজেডের কোফাউন্ডার আরমিন, সাদেক এগ্রোর পরিচালক সদরুদ্দিন মন্টি, ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি লিমিটেডের এমডি হুমায়রা চৌধুরী এবং ই-ভিলেজ প্রকল্প ও বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের প্রধান রশিদ হাসান। সঞ্চালনায় ছিলেন শাহ আলী ফরহাদ।