প্রশান্তি ডেস্ক ॥ দুই শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে নিরাপদ সড়কের দাবিতে তৈরি হওয়া আন্দোলনকে পুঁজি করে বিএনপির পরিকল্পনা এবারও ভেস্তে গেলো। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, এই আন্দোলনে ভর করেই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করানোর নীলনকশা তৈরি করে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে বিএনপি এবং জামায়াত যৌথভাবে কাজ করলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিএনপির ভাবমূর্তি আরও প্রশ্নবিদ্ধ হলো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একের পর এক বিএনপি ষড়যন্ত্রের নকশা উন্মোচিত হচ্ছে। এতে করে সাধারণ মানুষের কাছে দলটির গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে পৌঁছেছে।
সূত্র জানায়, আন্দোলনকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে একদফা আন্দোলনে রূপান্তরিত করার এক নীলনকশা বাস্তবায়ন করতেই ৪ আগস্ট গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করা হয়। আর সেখান থেকেই আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এই নীলনকশা বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমীর খসরুর নির্দেশনামূলক একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়।
এদিকে আমীর খসরুর ফাঁস হওয়া ফোনালাপে ফেসবুক কেন্দ্রীক অপপ্রচারের নির্দেশনাও উঠে আসে। যা বাস্তবায়ন হতেও দেখা যায়। এর অংশ হিসেবে দেশের বাইরে থেকে পুরনো বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও নিখুঁতভাবে এডিট করে তা ২৯টি বিভিন্ন ভুয়া ফেসবুকে এবং অনলাইনে ছাড়া হয়। জিগাতলায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলার গুজবও ছড়ানো হয় ফেসবুকেই। সে অনুযায়ী ছাত্রদলের অপরিচিত এবং প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা সিটি কলেজের কাছে অবস্থানরত শিক্ষার্থীর উপর হামলা করে। এই হামলার ১০ মিনিটের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পূর্বের বানানো ভিডিওগুলো আপলোড করা হয় এবং বিএনপি-জামায়াতের কিছু কর্মী দ্রুত এগুলো ছড়িয়ে দেয়। এসবকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য কয়েকজন সেলিব্রেটিকেও উস্কে দেওয়া হয় অথবা ভাড়া করা হয়।
পরিকল্পনা ছিল, এই ভিডিও দেখে সাধারণ মানুষ এবং সারাদেশের জনগণ উত্তেজিত হবে। তাৎক্ষণিকভাবে তারা রাস্তায় নেমে আসবে। আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলোতে আগুন ধরিয়ে দেবে। নীলনকশা অনুযায়ী, এর পরপরই শাহবাগ থেকে সরকারের পতনের লক্ষ্যে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রও প্রস্তুত করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণার কথা ছিল। আর এই নীল নকশা বাস্তবায়নের জন্য অর্থের যোগান দিয়েছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। নীল নকশার আংশিক বাস্তবায়নের পর সরকারের ত্বরিৎ পদক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতায় দেশ একটি বড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। গুজব শুনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় টেলিফোনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ধৈর্য্য ধরার এবং শান্ত থাকার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রীকে বলা হয়, আমাদের লোকজন আহত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তারপরও ধৈর্য্য ধরার নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনার নির্দেশেই ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ শাহবাগে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে। ২৫ জন শিক্ষার্থীর একটি দলকে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ডেকে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, পুরাতন, বিদেশি নানা ছবি এবং ভিডিও এখনও ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে। জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টিই এর মূল উদ্দেশ্য। গোয়েন্দা সূত্রে বলা হচ্ছে, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র আপাতত: ভেস্তে গেলেও এখনও তাঁরা তাদের তৎপরতা অব্যাহত রাখছে।