সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে নেমেছে ‘সি আইয়ের এজেন্টরা’

প্রশান্তি ডেক্স॥ গত শনিবার রাতে সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলমের বাসায় দেশের সুশীল সমাজের একাংশ মিলিত হয়েছিল কেন? এই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে।Se I Agentra
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যখন উত্তাল দেশ, ঠিক সেই সময় শনিবার রাতের বৈঠক নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে যেদিন গুজব ছড়িয়ে দেশে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির নীলনকশা চূড়ান্ত করা হয়েছিল, ঠিক সেদিনই এরকম নৈশভোজের আয়োজন কেন? অনুসন্ধানে জানা যায়, সুজন সম্পাদক ড.বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুরে অবৈধ দখল করা বাড়িতে রাত ৯ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত অন্তত ১২ জন বিতর্কিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন।
যারা সেখানে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, হাফিজউদ্দিন, ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. আসিফ নজরুল ও দুজন পত্রিকার সম্পাদক সহ আরও কয়েকজন। বৈঠকে প্রটোকল ভেঙে উপস্থিত হন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট।
একাধিক সূত্র বলছে, চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের গতি প্রকৃতি নিয়ে ঐ নৈশ ভোজের আড়ালে বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বৈঠকে একজন সম্পাদক তাঁর মতো করে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। যেখানে সুশীলদের করণীয় নিয়েও কথাবার্তা হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে এই আন্দোলনের সমর্থনে বিবৃতি চান বৈঠকে উপস্থিত সুশীলরা। বৈঠকে উপস্থিত একজন জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বল প্রয়োগ হতে পারে এমন মন্তব্য করেন দুই সম্পাদক। মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরকম বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটলে এ ব্যাপারে বিবৃতি দেবেন বলেও আশ্বস্ত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বর্তমান আন্দোলনকে ‘চূড়ান্ত পরিণতি’র দিকে নিয়ে যাওয়া নিয়েও কথাবার্তা হয়। বৈঠকে সুশাসনের সংকট এবং সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত কয়েকটি সিটি নির্বাচন নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সুশীলরা কথাবার্তা বলেন। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করলে মার্কিন ভূমিকা কি হবে সে বিষয়েও আলোচনা হয়।
তবে, বৈঠক চূড়ান্ত পরিণতি নিতে পারেনি। বৈঠক চলাকালে ঐ বাসভবনের নীচতলায় বসবাসকারী বদিউল আলম মজুমদারের শালা ইশতিয়াক বেরিয়ে এসে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়ির ছবি তুলতে যান। এ সময় রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল ছবি তোলায় বাধা দিলে তিনি খেপে যান এবং হৈ হট্টগোল শুরু করেন।
তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘এখানে সব সি আইয়ের এজেন্টরা রয়েছে। এখানে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র চলছে’ ইত্যাদি বলে তিনি লোকজন জড়ো করেন। তখন উত্তেজিত লোকজন জড়ো হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। লোকজন দেখে সুশীলরা যে যার মতো দ্রুত সটকে পড়েন।
অনেকেই এটাকে ‘মোহাম্মদপুর ষড়যন্ত্র’ মনে করছেন। উল্লেখ্য চলমান আন্দোলনকে উস্কে দিতে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
কেন মোহাম্মদপুর গিয়েছিলেন বার্নিকাট?
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট গত শনিবার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় নৈশভোজে অংশ নেওয়ার জন্য মোহাম্মদপুরে যান। নৈশভোজ শেষে বেরিয়ে আসার সময় কয়েকজন যুবক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা চালায়।
রাষ্ট্রদূতের গাড়ির পেছনে ধাওয়া করে ইট-পাটকেলও ছোড়ে তাঁরা। মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি চলে গেলে তাঁর বাড়িতেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন বদিউল আলম মজুমদার। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিছু উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় করেছিল মাত্র।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলার ঘটনায় সমালোচনা করছে দেশের বিভিন্ন মহল। কিন্তু একটি প্রশ্ন কেউ করছে না। মার্শা বার্নিকাট অরক্ষিত অবস্থায় ওই এলাকায় তখন কী করছিলেন? কেন গিয়েছিলেন?
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ওয়েবসাইটে গত ৩ জুলাই বাংলাদেশে বসবাসরত মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তাজনিত কারণে কিছু বিধিবিধান মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেখানে নাগরিকরা কোথায় যেতে পারবে বা পারবে না সে সংক্রান্ত নির্দেশনাও আছে। কোনো মার্কিন অফিসিয়াল নির্ধারিত এলাকা ও নির্ধারিত সময়ের বাইরে কোথাও যেতে পারবে না এই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে ওয়েবসাইটে।
এই নিয়মানুসারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদপুরে সুজন সম্পাদকের বাসায় যেতে পারেন না। কোনো ধরনের প্রটোকল ছাড়া কূটনৈতিক পাড়ার বাইরে ব্যক্তিগত আমন্ত্রণ রক্ষার্থে সুজন সম্পাদকের বাসায় গিয়ে মার্শা বার্নিকাট নিজ রাষ্ট্রের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন।
চলমান শিক্ষার্থী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামাতের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সুশীল সমাজও সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। এমন সময় বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় মার্শা বার্নিকাটের আতিথ্য গ্রহণ ও তাঁর গাড়িতে হামলার ঘটনা পুরো বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিজ রাষ্ট্রের নির্দেশ অমান্য করে গতকাল একটি প্রশ্নবিদ্ধ কাজ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.