আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ নীলনকশা বাস্তবায়িত হলে ১৫ আগস্টের মধ্যে সরকারের পতন ঘটতো। আর ঐ দিনই লন্ডন থেকে দেশে ফিরতেন তারেক জিয়া। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের মোড়কে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র এমনই ছক আঁকা হয়েছিল। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কথা বলে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ৪ আগস্ট শনিবার ছিল আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। আন্দোলনকে সশস্ত্র রূপ দিতে ঐ দিন অন্তত তিন হাজার সশস্ত্র ক্যাডার ঢাকায় নামানো হয়েছিল। ধানমন্ডি দুই নম্বর সড়কে সংঘাত সৃষ্টিও করা হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গুজব ছড়িয়ে লোকজনকে বিক্ষুব্ধ করে তোলার কথা ছিল। বিক্ষুব্ধ মানুষজনকে ধানমন্ডি ৩ নম্বর সড়কে আওয়ামী লীগ কার্যালয় আক্রমণে প্ররোচিত করা হয়েছিল।
ধারণা করা হয়েছিল, ভেতর শিক্ষার্থীদের ধরে আটকে রাখা হয়েছে, মেয়েদের নির্যাতন করা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে আওয়ামী লীগ অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। এরপরই সারা ঢাকায় পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এ সময় আরও ১০ হাজার বিএনপি জামাতের ক্যাডার রাস্তায় নামবে এবং ত্রাশ সৃষ্টি করবে। ৪ আগস্ট থেকে রাজপথ দখলে রেখে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থানের কর্মসূচি তৈরিই করে রেখেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
লন্ডনে পলাতক দন্ডিত তারেক জিয়ার একটি বক্তৃতাও প্রস্তুত করা হয়েছিল। তারেক বিএনপি নেতাদের জানিয়েছিলেন যে, ১০ দিনের মধ্যেই সরকারের পতন ঘটানো হবে। পরিকল্পনা ছিল, রাজপথে জ্বালাও পোড়াও এবং গণ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দাতা দেশ একটি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য চাপ দেবে। আর এরকম একটি সরকারের প্রধান হবেন ড. কামাল হোসেন। সে লক্ষ্যেই মোহাম্মদপুরে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে বৈঠকও হয়েছিল।
একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির শর্তে ড. কামালের নেতৃত্বে অন্তরবর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিতে রাজি ছিল বিএনপি। ৬ আগস্ট নাগরিক সমাজের প্রেসক্লাবের সভায় ‘চলমান পরিস্থিতিতে’ একটি অন্তরবর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি উত্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু, এই নীল নকশা বেশিদূর এগুতে পারল না। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কিছু মানুষ বিশ্বাস করলেও অধিকাংশ মানুষই সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করা পুরোনো, বিদেশি এবং সম্পাদিত ছবি ও ভিডিও গুলো বিশ্বাস করেনি। অনেকে উত্তেজিত হলেও খোঁজ খবর নিয়ে আশ্বস্ত হন।
গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর মতে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সবচেয়ে ধৈয্যের পরিচয় দেয়। তাদের ওপর হামলা হলেও তাঁরা তার পাল্টা জবাব দেয়নি। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ৪ আগস্ট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। ফলে, নীল নকশার বাস্তবায়ন হয়নি।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ৫ আগস্ট রোববারও আবার আওয়ামী লীগ কার্যালয় আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল। ঐ দিন শাহবাগে জড়ো হওয়া অধিকাংশই ছিল ছাত্রদল এবং শিবিরের ক্যাডার।
গোয়েন্দারা বলছে, পুরো ব্লু প্রিন্ট তাঁরা তদন্ত করছে, শিগগিরই উন্মোচন করবে। এই নীল নকশা যে তারেক জিয়া এবং বিএনপির, তাঁর পক্ষে বেশ কিছু প্রমাণও তাদের হাতে এসেছে। সংস্থাগুলোর মতে, এজন্যই তাঁরা ঈদের পর গণবিস্ফোরণের কথা বারবার বলছিলেন।