ডিএমপি নিউজ এর সৌজন্যে ॥ সড়কে শৃংখলা ফেরাতে এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে পুলিশের পাশাপাশি সকলের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। চলমান রয়েছে ট্রাফিক সপ্তাহ। ট্রাফিক সপ্তাহে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। ট্রাফিক আইন অমান্যকারী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ট্রাফিক আইন অমান্যে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ।
গত ১১ আগস্ট, ২০১৮ তারিখ দুপুর ১ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের হুঁশিয়ার করেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম।
ঢাকা শহরের সড়কের বাস্তবতা তুলে ধরে কমিশনার বলেন, অধিক যানবাহনের তুলনা অপ্রতুল রাস্তা, অনিয়ন্ত্রিত পথচারী, ইন্টারসেকশনে ট্রাফিক সিগন্যাল-ট্রাফিক সাইন-রোড মার্কিং সঠিক না থাকা, বাস স্টপেজের অপ্রতুলতা, খারাপ মান সম্পন্ন বাস সার্ভিস, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অসময়ে রাস্তা খুঁড়াখুঁড়ি, রাস্তার আয়তন ও পরিমাণ কম, যান্ত্রিক যানবাহনের সাথে অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল, রাস্তার পার্শ্বে অধিক পরিমাণ শপিং সেন্টার-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-হাসপাতাল ও পেট্রোল পাম্প থাকলেও নেই তাদের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আইন না মানার সংস্কৃতি। একটি দেশে আইন তৈরি করা হয় তা মানার জন্য। বিদেশে শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ আইন মানে কিন্তু আমাদের দেশে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ আইন মানতে চাই না। যা অত্যন্ত দুঃখ জনক।
এতো প্রতিকূলতার মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের কাজ সম্পর্কে কমিশনার বলেন, সমস্ত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। ট্রাফিক পুলিশের ডিউটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। রোদ, বৃষ্টি, শীত, ধুলা-ধোঁয়া, তাপদাহ ও বজ্রপাতসহ বিভিন্ন প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে ট্রাফিক পুলিশকে ডিউটি করতে হয়। রাস্তায় ডিউটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ইলেকট্রিক ট্রাফিক সিগন্যাল কার্যকরী না থাকায় হাত দিয়ে সিগন্যাল দিতে হয়। প্রতিদিন ঢাকা মহানগরীতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ৪ হাজার ট্রাফিক পুলিশ সদস্য।
এতো প্রতিকূল অবস্থা থাকা সত্ত্বেও ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য মামলা ও জরিমানা আদায় করেছে। ২০১৩-২০১৭ সাল পর্যন্ত ৫ বৎসরে ডিএমপি ট্রাফিকের অভিযান করে মোট প্রসিকিউশন ৩৯,২৪,৭০১ (ঊনচল্লিশ লক্ষ চব্বিশ হাজার সাতশত এক) টি ও মোট জরিমানা ১৫৯,৯১,৭১,৬৮০/- (একশত ঊনষাট কোটি, একানব্বই লক্ষ, একাত্তর হাজার, ছয়শত আশি) টাকা সরকারী রাজস্বে দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও বিগত দেড় (২০১৭-২০১৮) বছরের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে হাইড্রলিক হর্ণ -৪৪৫৮৫ টি, হুটার/বিকন লাইট-৪৩৭৭ টি, উল্টোপথে চলাচল -১৪৪৪৬১ টি, স্টিকার লাগানো- ১০৪৭ টি, কালো গ্লাস- ৬১৬২ টি, মোটরসাইকেল কেস- ৪০০০১৪ টি ও মোটর সাইকেল আটক- ৯০৩৯ টি। সর্বমোট- ৬,২৫,৯৪৫ টি মামলা দেয়া হয়। উন্নত বিশ্বের মত ট্রাফিক বিভাগে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিগত ০২ বছরে (২০১৭-২০১৮) ভিডিও মামলা -৯৮৮৪৩ টি করা হয়েছে।
ফুটপাতে মোটর সাইকেল চালানো বন্ধ করতে ডিএমপি’র নিজস্ব অর্থায়নে ফুটপাতে পিলার স্থাপন -৪০,৭৭ টি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক সম্পর্কে সচেতন করতে ট্রাফিক সচেতনতামূলক কর্মসূচী ৩৬৩৯ টি করা হয়েছে। এগুলো বিগত ০২ বছরে (২০১৭-২০১৮) করা হয়।
চলমান ট্রাফিক সপ্তাহের ৬ষ্ঠ দিনে সর্বমোট প্রসিকিউশন ৫২,৪১৭টি এবং জরিমানা আদায়= ২,৯২,৮০,৪৬২/- টাকা। তার মধ্যে হাইড্রলিক হর্ণ- ৭৩১টি, হুটার/বিকন লাইট- ১১২টি, উল্টোপথে গাড়ি চালানো- ৪৭১৩টি, মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে অভিযান- ২৮০২৫টি, মোটরসাইকেল আটক- ১১১০টি, ভিডিও কেস- ৩৪৭টি, ড্রাইভিং লাইসেন্স- ১১৪০৫ টি, ফিটনেস কেস- ১৯৪৭ টি, রুট পারমিট ১৩১৫ টি, বাস/মিনিবাস- ৬২৭৬ টি, যানবাহন ডাম্পিং/রেকারিং- ৫৫৭২ টি।
ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালীন উল্লিখিত অভিযান এর পাশাপাশি পথচারী ও চালকদের সচেতন করার লক্ষে অনস্ট্রিট ব্রিফিং, মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট, স্টিকার বিতরণ করা হয়েছে।
সড়কের শৃংখলা ধরে রাখতে ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে সকলের দায়িত্ব রয়েছে। পথচারীদের প্রতি- ফুটপাত ব্যবহার করুন, জেবা ক্রসিং, ফুটওভারবীজ, আন্ডার পাস দিয়ে রাস্তা পার হউন ও মোবাইল ফোনে কথা বলা অবস্থায় রাস্তা পারাপার হবেন না। চালকের প্রতি- সিট বেল্ট ব্যবহার করা, মোবাইল ফোনে কথা না বলা, বেপরোয়া গাড়ি না চালানো, যত্রতত্র পার্কিং না করা, বাস স্টপেজে যাত্রী উঠা-নামা করা ও বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স সাথে রাখা। মালিকের প্রতি- গাড়ির সকল ডকুমেন্ট আপডেট রাখা, গাড়ির ফিটনেস ঠিক রাখা, বৈধ ও দক্ষ ড্রাইভার নিয়োগ দেয়া, চুক্তিতে গাড়ি না চালিয়ে ড্রাইভারকে বেতনভূক্ত করা, চালককে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে পুলিশকে সহায়তা করার আহবান জানান তিনি।