ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত হাটে বাংলাদেশেও একদিনের (অতিথি পাশ) পাশ বন্ধ দেওয়ায় হাটে যেতে পারেনি দুর-দুরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা। ফলে গত রোববার একপ্রকার ক্রেতাশুন্য হিসেবে দেখা যায় হাট। ক্রেতা শুন্য হওয়ায় মালামাল বিক্রি করতে না পারায় উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। হাটের বাইরে শতশত ক্রেতার উপচেপড়া ভীড় থাকলেও ভারত এবং বাংলাদেশের হাটের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী বার্ষিক কার্ডধারীরাই প্রবেশ করতে দেখা যায়। দু’দেশের বার্ষিক কার্ডধারী প্রায় ৬০ জনের মতো ক্রেতা প্রবেশ করতে দেখা গেছে। জানা যায়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা গত ২৯ জুলাই সীমান্ত হাটে ভারতীয় কোন ক্রেতাকে প্রবেশ করতে দেয়নি। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা কোন মালামাল বিক্রি করতে পারেননি। অথচ বাংলাদেশী ক্রেতাদের ছিল উপচেপড়া ভীড়। প্রত্যেক ব্যবসায়ী কমপক্ষে ৭০থেকে ৮০ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি করতেন। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা গত ৫ আগস্ট সীমান্ত হাটে দোকান না বসিয়ে হাটের বাইরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন।
গত রোববার থেকে নিয়ম অনুযায়ী বাৎসরিক কার্ড ছাড়া কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একদিনের প্রবেশপত্র (পাস) না দেয়ায় শতশত ক্রেতা হাটে কেনা-কাটা করতে পারেনি। এতে করে ব্যবসায়ীদের মালামাল বিক্রি করতে না পেয়ে ফেরৎ আনতে বাধ্য হয়েছে। লোকসনা গুনতে হচ্ছে তাদেরকে। এর আগে প্রতি রোববার প্রতি দেশ থেকে এক হাজার ব্যক্তিকে হাটে কেনাকাটা করতে প্রবেশপত্র (পাস) দেয়া হত।
বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে; প্রত্যেক রোববার যথারীতি এ হাট বসে। বাৎসরিক কার্ডছাড়াও প্রত্যেক দেশের ১ হাজার ব্যক্তিকে একদিনের পাস দেয়া হত।
এদিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত রোববার একদিনের পাস বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এতে করে দুই দেশের বাৎসরিক কার্ড ছাড়া কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশে হাটের বাইরে শতশত ক্রেতা অপেক্ষা করলেও পাস না থাকায় হাটে যেতে পারেনি। বিজিবির হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে বাৎসরিক কার্ড নিয়ে মাত্র ৩৯ জন এবং ভারতীয় বিএসএফের হিসেব অনুযায়ী ৩০ জন ক্রেতা হাটে কেনা-কাটা করতে প্রবেশ করেছেন। এতে করে ব্যবসায়ীরা মালামাল বিক্রি করতে পারেনি। মালামাল ফেরৎ নিতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশী কাপড় ব্যবসায়ী অলিউল্লাহ সরকার বলেন; হাটে ভারত থেকে মাত্র ৩০জন ক্রেতা প্রবেশ করেছে। মাত্র ৩শ টাকা তিনি বিক্রি করেছেন। লাভ তো দূরের কথা হাটে মাল আনতে পরিবহন খরচও তুলতে পারিনি। আরেক ব্যবসায়ী পাষ্টিক সামগ্রী বিক্রেতা জমির উদ্দিন বলেন; এভাবে চলতে থাকলে এ হাট ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। কারন ক্রেতা না আসলে আমরা দোকান সাজিয়ে কি লাভ।
ভারতীয় প্রসাধনী ব্যবসায়ী মনিস চন্দ্র বলেন; প্রতি হাটেই প্রায় দেড় লাখ টাকা বিক্রি করতেন। কিন্তু হাটে একদিনের পাস বন্ধ করে দেওয়ায় দুই দেশের লোকজন আসতে পারছেন না। এ কারনে গত রোববার মাত্র ১০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। এ ভাবে চলতে থাকলে সামনে দোকান নিয়ে আসা সম্ভব হবে না। তার মতে প্রত্যেক ব্যবসায়ীই লোকসান গুনতে হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিনা ইসলাম বলেন; নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের অধিবাসীরা সেখানে কেনাকাটা করবেন। অন্য এলাকার কেউ আসতে পারবে না। ২৯ জুলাই থেকে এক দিনের অনুমতি বন্ধ করে দেয়ায় এ সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রোববার থেকে এক দিনের পাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাৎসরিক কার্ডধারীরা যেতে পারবেন। তিনি আরো বলেন; একদিনের পাসের বিষয়ে দুই দেশের হাট পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত একদিনের পাস বন্ধ থাকবে।