যুগে যুগে ১৫ই আগষ্ট ও আমরা

তাজুল ইসলাম ॥ ১৫ই আগষ্ট এর ব্যপ্তি ও কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে এর জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাংলার জনগণের যে হৃদয়ের টান তা কিন্তু ছিল, আছে এবং থাকবে চিরদিন। কথায় আছে পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা। যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা ও যমুনা ততদিন রবে বঙ্গবন্ধুর নাম বহমান। আমি একটু বাড়িয়ে বলি যতদিন রবে পৃথিবী দৃশ্যমান ততদিন রবে বঙ্গবন্ধুর নাম ও কাম চলমান। কিয়ামনের প্রলয়ংকরী মহা প্রলয়ের সহিত যখন সবই মিশে যাবে তখন বঙ্গবন্ধুর কৃতকর্মের রেশ দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান থাকবে। হয়তো আমরা দেখতে বা উপলব্দি করতে পারবো না। কিন্তু পরকালের বাসিন্দারা ঠিকই দেখতে ও বুঝতে পারবে ঐ মহৎ কাজগুলিকে যা সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে এই জাতির ভাগ্যাকাশে দৃশ্যমান করেছিলেন। আর তিনিই সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছিলেন।15 august
’৭৫ পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সরকারগুলি বঙ্গবন্ধু এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল কিছুই ধ্বংস এবং মুছে ফেলতে এমন কোন কাজ নেই যা করেননি। কিন্তু এর ফলে সৃষ্টিকর্তার সেই শক্তির ক্ষমতায় সুরক্ষার কারণে মুছা যায়নি বরং এর ব্যাপ্তি পরিপক্কতা পেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পৃথিবীর সকলের কাছে পৌঁছাতে শুরু করেছিল। আমি তখন ছোট এবং সেই ছোট বয়সে সারা বাংলার রূপ রস ও গন্ধে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় কর্মগুলির স্বাক্ষর দেখেছি এবং উপভোগও করেছি। তিনি ছিলেন এবং আছেন ও থাকবেন। ছোট ছোট পরিসরে বঙ্গবন্ধু কেন্দ্রীক দিবসগুলি এমনকি বাংলাদেশ কেন্দ্রীক দিবসগুলি উদযাপিত হয়েছিল আর সেখানে এমনিতেই অদৃশ্য বঙ্গবন্ধুকে স্বশরীরে উপস্থিত দেখতে পেয়েছিলাম এবং মানুষও দেখেছিল। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা; তাই বাংলাদেশকে নিয়ে বা বাংলার সংস্কৃতিকে নিয়ে কিছু করতে গেলেই বঙ্গবন্ধু চলে আসেন। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে এই বাংলাদেশের কোন অস্তিত্ব নেই ছিলনা এবং থাকবেও না। তাই আলাদাভাবে কোন দিবস পালন করার প্রয়োজনীয়তা ছিলনা তৎকালীন সরকারগুলোর আমলে। তারপরও বলব দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরে, বন্দরে, নগরে শত বাধা বিপত্তির মাঝেও আলাদা করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশেষ দিবসগুলি উৎযাপিত হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে আজকের এই বৃহৎ কলেবর।
তৎকালীন সরকারের চোখা রাঙ্গানী উপেক্ষা করে আমরা বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা যে কাজ অব্যাহত রেখেছিলাম সেই কাজের গতিশীলতা এবং পরিপক্কতা এনেছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যখন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন এই আওয়ামী পরিবারে ছিল ভাইয়ে ভাইয়ে সৃষ্ট বিরোধের ফাটল আর সেই ফাটল জোড়া লাগিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে দ্বিতীয়বার বাংলার আকাশে স্বাধীনতার স্বাধ আস্বাধনের সুর্য উদীত করেন এবং পাঁচটি বছর সেই পাকীপ্রীতিদের সৃষ্ট ঝঞ্জাল এবং আগাছা পরিস্কারের কাজে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু মাঝপথে আবার স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতার মসনদে আসেন এবং বিগত পাঁচ বছরের সকল ঘোছালো কাজগুলি বিনষ্ট করে তাদের দেশবিরোধী কর্মকান্ডকে নতুন মোড়কে রূপদিয়ে যাত্রা শুরু করেন। সেই থেকে আবার শুরু হয় দেশীয় আবরণে পাকি দু:শাসন এবং পৌশাচিক নারকিয় নির্যাতন।
সেই নির্যাতনের মধ্যে দিয়েই জাতিকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করেন মাননীয় নেত্রী এবং আমাদের অভিভাবক ও জাতির বিভেক এবং রক্ষক আর নবদিগন্ত উন্মোচনের ধারক ও বাহক চলমান উন্নয়নের বাস্তব রূপদানকারী আজকের বিশ^ মানবতার মা বঙ্গবন্ধু তনয়া যোগ্য উত্তরসূরী শেখ হাসিনা। সেই ঐক্যবদ্ধতা এবং পরিপক্কতার ফসল হলো বিশ^কে চমকিয়ে এবং বিশ^ মোড়লদের সকল পরিকল্পনা নস্যাৎ করে নতুন উদ্যমে আবার ক্ষমতায় আসেন এবং দেশকে পৌঁছে দেন এক নতুন উচ্চতায়। জাতিকে দেখতে দেন নতুন এক উচ্চাকাংখা ও উন্নত জীবনের সুখ স্বপ্ন। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি এবং বাংলাদেশ সফল। সকল অপ রাজনীতি এবং বিশ^ সন্ত্রাসের কু প্রভাবগুলি আজ বাংলার সিংহাসন আরোহী নারীর কাছে পরাভূত। দেশীয় কুচিন্তার মানুষগুলি এমনকি ক্ষমতালিপ্সু মানুষগুলিও তাদের চক্রান্ত নিয়ে পরাভূত। তবে এই ধারাবাহিকতার ক্রমোন্নতি এবং ধারাবাহিকতা অব্যাহতের জন্য যে চলমান প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে তার সঙ্গে এই বাংলার জনগণ পুরোপুরি সম্পৃক্ত থেকে একসাথে এগিয়ে যাচ্ছে।
আজকের এই দু:খের দিনের ভার বহিবার শক্তি যদিও নেই এই জাতির তারপরও শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যেতে পালিত হচ্ছে সারা দেশে দোয়া ও মিলাদ এবং তাবারুক বিতরণ। তবে যে শুধু দলীয় আবেশেই হচ্ছে তা কিন্তু নয় বরং জনগণ যার যা আছে তা দিয়েই বঙ্গবন্ধু তথা কালো রাতের স্বীকারে পরিণত হওয়াদের জন্য দোয়া ও মিলাদ এবং কোরান খনম পালন করছে। রাস্তা-ঘাটে, অলিতে-গলিতে, গ্রামে গঞ্জে, স্কুল-কলেজে, পার্টি অফিসে, মসজিদ ও মাদরাসায় এমনকি কুড়ে ঘড়েও পালিত হচ্ছে এই দিবসটির তাৎপর্য মন্ডীত ফলিজত নির্ভর কর্মকান্ড।
আজ আমার ৪৭ বছরের জীবনের পরিপূর্ণতা এই ভেবে যে, শৈশবে ছোট পরিসরে মায়ের কোরান খতম এবং পরিবারের ছোট মিলাদ এবং পার্টি অফিসের এমনকি স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বিত পদক্ষেপের ব্যপ্তি এখন দেশ বিদেশের সর্বত্রই বিরাজমান দেখে। আমার পাঁচ বছরের মেয়েটির চিন্তা ও চেতনায় বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা ও রেহানা এমনকি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীক কার্যক্রম দেখে। আমি আজ স্বার্থক এবং পরিণত তৃপ্তিতে আগামীর উন্নত ও সম্বৃদ্দির বাংলাদেশ স্বপ্নে বিভোর। আমার সরকারের আমলের এক মাস পনের দিনের জেল জীবনের কষ্ট দূরীভূত করেছি আমার নেতার বিশাল অনুসারী তৈরী এবং এর ঐক্য দেখে। আজ বলতে ইচ্ছে করে শকুনের দল, হায়েনার দল, শয়তানের দোসররা আর লোভ-লালসায় নিজেদের ক্ষতি করিও না। তোমার সন্তানদের কাছে কি জবাবদিহী করবা। তোমাদের চরিত্র আজ উন্মোচিত এবং পরিকল্পনা আজ নির্বাসিত তাই জীবনের পড়ন্ত বেলায় আরো কোন ষড়যন্ত্রে নিজেদেরকে জড়াইয়ো না। যেমনিরূপে খুনি মোস্তাক-জিয়া বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদেরকে পুরস্কারে পুরস্কৃত করেছিল। তোমরা আর সেই তালিকায় যুক্ত হয়ে বংশ পরম্পরায় নি:শেষ হইয়ো না। এই নি¤েœর তালিকায় যারা রয়েছে তারা ঘৃণীত এবং একটি পশুর চেয়েও অধম। তাদেরকে আমি মানুষ বলি না। তাদের ঔরষজাত সন্তানদেরকেও সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানিনা।
* লে. কর্নেল শরিফুল হককে (ডালিম) চীনে প্রথম সচিব, * লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব, * মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব, * মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব, * মেজর শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব, * মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব,
* মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব, * মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব, * কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব, * লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব, * লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব, * লে. আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োাগ দেওয়া হয়েছিল।
আমরা জানি এখনো সেই রক্তের উত্তসূরীরা তাদের চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে। সুতরাং ঘৃণায় নয় বরং সেই ঘৃনাকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য যার যার অবস্থান থেকে দৃশ্যমান কাজ করে যেতে হবে। এবং তাদের সঙ্গে নব্য যে দুষিত রক্তের উদ্ভ্যব হয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। আজকে যে ঐক্যের মহামিলন দৃশ্যমান তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। কোন আবরণে এই ঐক্যকে বিনষ্ট করতে দেয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাতে কোন আবরণ নেই। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ যুক্ত আর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ। নির্ভয়ে নিসংকোচে এমনকি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে পাশাপাশি প্রচারনা অব্যাহত রাখতে হবে। কাউকে ছোট না ভেবে সম্মান ও ¯েœহ ভালবাসা দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আগামীর উন্নততর স্বপ্নের ঠিকানায় আরোহন করার লক্ষ্যে। এই ক্ষেত্রে ভাটা পড়ার যে সমুহ সম্ভাবনা উকি দেয় এবং দিবে তা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সকলে মিলেমিশেই মোকাবেলা করতে হবে।
আল্লাহ বাংলার মানুষের এই ত্যাগ ও ভালবাসা এবং দোয়া মাহফিল কবুল করুন। ধনী ও গরীবের সম্মিলন এবং হৃদয়ের ভালবাসা প্রকাশের মাত্রা ভিন্ন হলেও কিন্তু ইচ্ছাশক্তি ও ভালবাসা এক। আর এই সবই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিখানো ও দেখানো পথেই। তাঁর অবদান এবং ভালবাসার কাছে এই জাতি ঋণী এবং সেই ঋণ শোধ নয় বরং দ্বিগুন গতিতে বাড়িয়েই যাচ্ছে দিনকি দিন। আমাদের যা আছে সবই তোমার তরে উজার করে দিয়েছি এবং দিয়ে যাবে। তোমার সন্তানরা, ভাইয়েরা ও বোনেরা এখনও জীবিত এবং তোমার দেখনো পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। নুতনরুপে যুক্ত হয়েছে এই মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন যা তুমি বিহনেই হয়। তুমিই শিখিয়েছো মৃতদের এবং গায়েব বা নিখোঁজ হওয়াদের জন্য ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করার কথা। আজ সেই পথে তোমাকে নিয়ে এগুচ্ছে তোমার এই বিশাল পরিবার। এই পরিবারের ব্যাপ্তী শুধু বৃদ্ধিই পাচ্ছে না বরং এগিয়ে যাচ্ছে তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলার স্বপ্ন পুরণে। জয় হউক সকল ইতিবাচক এবং কল্যাণকর সকল পদক্ষেপের।
লেখক: তাজুল ইসলাম, প্রযুক্তিবিদ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা পরামর্শক, সম্পাদক ও প্রকাশক, একজন ক্ষুদ্র সমাজসেবক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.