জাতি এখন কালো মেঘঢাকা অন্ধকার থেকে বের হয়ে মুক্ত আলোতে বিচরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর তরে। শোকে মুহ্যমান জাতি শোককে শক্তিতে পরিণত করে আসছে ঈদের আনন্দে বিভোর। বঙ্গবন্ধুর শোকে কাতর জাতি এখন ধর্মীয় আবেশে মোনাজাতের মাধ্যমে আগামী দিনের আনন্দের মহা-মিলনের অপেক্ষায়। সবাই এখন ছোটা-ছোটি করে যাচ্ছে আপনজনদের কাছে যেতে। কেউ কেউ বেরিয়ে পরেছে কোরবানীর পশু ক্রয়ের উদ্দেশ্যে। কেউ কেউ আবার ব্যবসার জন্য এমনকি সারা বছরের খরচ যোগানের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত রয়েছে এই সিজনাল কোরবানীর হাট বাণিজ্যে।
এই সকল কাজের বিভিন্ন রকম চাহিদার যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে আমাদের সেবায় নিয়োজিত প্রশাসন ও সরকার। প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যানজটের নাকাল থেকে শহরবাসীকে স্বস্তী দিতে। যাত্রা পথে যেন কোন দুর্ঘটনার সুত্রপাত না হয় সেই লক্ষ্যে চোখ, কান খোলা রেখে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রাখতে। ড্রাইভার এবং লাইসেন্স এমনকি গাড়ির ফিটনেস ও ইন্সুরেন্স, রোড পারমিটসহ ইত্যাদি চেক করতে রাস্তায় দুর্বীসহ গরমে ছটফটাচ্ছে দায়িত্বরত পুলিশ বাহিনী। মাঝে মাঝে দেখা যায় অতিরিক্ত যাত্রীবাহি বাসের গতিরোধ করে ধারনক্ষমতা সম্পন্ন যাত্রী রেখে বাকি যাত্রী নামিয়ে জীবন রক্ষায় শৃঙ্খলা আনয়ন করতে বদ্ধপরিকর হয়ে দায়িত্ব পালন করতে।
লঞ্চ এবং আকাশ পথেও রয়েছে সরকারের কড়া নজর। সবদিক মিলিয়ে যে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার এবং জনগণ; উভয়ের তৎপরতার যোগসূত্রই কিন্তু নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা এবং স্থিতিশীল শান্তিপূর্ণ সহবস্থানে থেকে আগামী ঈদুল আযহার নির্মল আনন্দ উপভোগ ও তাৎপর্য উপলব্দি করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার। আমরা এখনো দেখি রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনার স্বীকারে পরিণত হয় পথচারী মানুষগুলো। কোন কোন সময় দুর্ঘটনাগুলি আমার প্রাণের সহিত সম্পদেরও ক্ষতি সাধিত করে থাকে। এতো আয়োজন এবং প্রচেষ্টার মাঝেও ঐ অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো আমাদেরকে নাড়া দেয়। তবে কি শুধু সরকারের একারই দায়িত্ব ঐ দুর্ঘটনা রোধে? না সেখানে সমন্বিত প্রচেষ্টার একটি প্রতিফলন ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি? সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে; এই প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসতে হবে সচেতন ও অসচেতন সকল জনগণকেই। কারণ আমরা জনগণকেই নিজ জীবনের দায়িত্ব নিতে হবে; অন্যের কাঁধে জীবন বাঁচানোর দায়িত্ব তুলে দিলে হবে না। যখনই অন্যের কাধে দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় তখন ঘটে বিপত্তি। পাশাপাশি যানবাহনের মালিক ও চালক উভয়ের সম্পদের প্রতি যতœশীল হতে হবে। সম্পদ রক্ষায় এমনকি অন্যের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি নিজের জীবন ও সম্পদের রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এই পরিস্থিতিতে সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল হবে সরকার + জনগণ + যানবাহন মালিক ও ড্রাইভার একত্রে মিলে একই লক্ষ্য পুরণে এগিয়ে গেলে আগামী দিনে জান মাল ও সম্পদের ক্ষতি আর প্রত্যক্ষ্য করে জাতিকে কাঁদতে হবে না।
আসন্ন ঈদে ঘরে ফেরা মানুষগুলো যেন শান্তিতে যেতে পারে এবং নির্মল আনন্দভোগ শেষে আবার স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরতে পারে সেই কামনাই করি। আর এই ক্ষেত্রে সকলের সজাগ দৃষ্টি এবং প্রচেষ্টাই পারে আগামীর সাফল্য বয়ে আনতে। এখানেও শয়তান ঘাপটি মেরে থাকে যেন কোন একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আনন্দ ও শুখানোভুতি নষ্ট করতে পারে। তাই শয়তান মোকাবেলায় সরকার যেমন পারদর্শী ঠিক তেমনি পারদর্শী হতে হবে আমাদের মত সাধারণ জনগণকেও। কারণ শয়তান আমাদেরকে ব্যবহার করেই তাদের ফায়দা লুটার ব্যবস্থা করে থাকে। আজ সব শয়তানগুলোই চিহ্নিত এবং তাদের চক্রান্তগুলিও প্রকাশিত। আগামীতে হয়তো আরো নতুন কোন চক্রান্ত করে জনগণের সামনে আসবে; আমাদের উচিত ঐ সকল শয়তানদেরকে মিষ্টি কথার জন্যও ঘৃণা করা। কারণ দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথায়ও বিষ মাখানো থাকে। সাবধান ! ঐ মানুষরুপী শয়তানদের কবল বা খপ্পর থেকে। যুগে যুগে এই শয়তানদ্বয় পুর্বপুরষ থেকে বংশপরম্পরায় শুধু ক্ষতিই করে যাচ্ছে কিন্তু জনগণ ঐ দুমুখো সাপরূপী শয়তানদেরকে কোন শাস্তি দিতে পারেনি। আজ সময় এসেছে সেই প্রশ্ন রেখে আগামীতে ঐ শয়তানদের শাস্তির বিধান করার।
সামনে নির্বাচন আর এই নির্বাচন কেন্দ্রীক নানান জটিলার সুত্রপাত এখন থেকেই ঘটতে পারে। কারণ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের জাল বোনা এবং সেই জালে আটকানো এমনকি লাভ লোকসানের হিসেব নিকেশ পাকা পোক্ত করার এই উর্বর সময়ে আমরা জনগণই তাদের পুজি। সুতরাং আমাদেরকে পুজি করে আমাদের জীবনের স্বাভাবিকতায় বিঘœ সৃষ্টি করে যেন কোন কুমতলব বা নতুন প্রলেপের চক্রান্ত জনসম্মুখ্যে আনতে না পারে সেই দিকে এখন থেকেই জনসচেতনতা এমনকি স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ঐক্য প্রদর্শন করতে হবে। কোনভাবেই আমাদের মধ্যে মতভেদের আগুন দাও দাও করে জ্বালানো যাবে না। এই সময়ে আমরা শান্ত থেকে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চেষ্টা করব।
ঈদ আনন্দ নিয়ে জাতি আনন্দের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাবে আগামীর সমৃদ্ধী এবং স্থিতিশীলতা এমনকি চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষাকল্পে। খোদার দেয়া শান্তি এবং আনন্দ সুপ্রতিষ্ঠিত হউক আমাদের প্রত্যেকের জীবনে। ঈদ হউক সাম্যের, ঈদ হউক আনন্দের, ঈদ হউক ভ্রাতৃত্বের, ঈদ হউক প্রশান্তির, ঈদ হউক উন্নয়ন ও অগ্রগতির, ঈদ হউক জাতির ভাগ্যাকাশে নিশ্চিত সহবস্থানের মাধ্যমে চলমান ইতিবাচক উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাওয়ার।