ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ গত ক্রেতা শুন্য ছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত হাট। বিগত প্রায় একমাস যাবত এ অবস্থা চলছে কসবা সীমান্ত হাটে। গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহার সময় প্রচুর বেচা-কেনা হলেও এ বছর কোন ঈদের বেচা-কেনা করতে পারেনি দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বেচা-কেনা না হওয়ায় কয়েকজন ব্যবসায়ী হাটে দোকান নিয়ে আসেননি। ব্যবসায়ীরা বলছেন; ক্রেতাশূণ্য হাটে বেচা-কোন যা হয়, তার চেয়ে বেশী খরচ হয়। এতে করে তাদের লোকশান গুনতে হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একদিনের প্রবেশপত্র (পাস) না দেয়ায় শতশত ক্রেতা এবার ঈদের কেনা কাটা করতে পারেনি সীমান্তা হাটে এতে করে ব্যবসায়ীদের মালামাল বিক্রি করতে না পেয়ে ফেরৎ আনতে বাধ্য হয়েছে। লোকসনা গুনতে হচ্ছে তাদেরকে। এর আগে প্রতি রোববার প্রতি দেশ থেকে এক হাজার ব্যক্তিকে হাটে কেনাকাটা করতে প্রবেশপত্র (পাস) দেয়া হত। গত ১২ আগস্ট থেকে ওই পাশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে; প্রত্যেক রোববার যথারীতি এ হাট বসে। বাৎসরিক কার্ডছাড়াও প্রত্যেক দেশের ১ হাজার ব্যক্তিকে একদিনের পাস দেয়া হত। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা গত ২৯ জুলাই সীমান্ত হাটে ভারতীয় কোন ক্রেতাকে প্রবেশ করতে দেয়নি । বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা কোন মালামাল বিক্রি করতে পারেননি। অথচয় বাংলাদেশী ক্রেতাদের ছিল উপচেপড়া ভীড়। প্রত্যেক ব্যবসায়ী কমপক্ষে ৭০থেকে ৮০ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি করেন। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা গত ৫ আগস্ট সীমান্ত হাটে দোকান না বসিয়ে হাটের বাইরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন।
এদিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১২ আগস্ট থেকে একদিনের পাস বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এতে করে দুই দেশের বাৎসরিক কার্ড ছাড়া কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশে হাটের বাইরে শতশত ক্রেতা অপেক্ষা করলেও পাস না থাকায় হাটে যেতে পারেনি। বিজিবির হিসাব অনুযায়ী গত রোববার বাংলাদেশ থেকে বাৎসরিক কার্ড নিয়ে মাত্র ৪৭ জন ক্রেতা হাটে গিয়েছেন এবং ভারতীয় বিএসএফের হিসেব অনুযায়ী ৩৯ জন ক্রেতা হাটে কেনা-কাটা করতে প্রবেশ করেছেন। এতে করে ব্যবসায়ীরা মালামাল বিক্রি করতে পারেনি। মালামাল ফেরৎ নিতে বাধ্য হয়েছে।
গত রোববার হাটে গিয়ে দেখা গেছে কোন ক্রেতা নেই। কয়েকজন ক্রেতা থাকলে ও বেচা-কোন কম। কথা হয় কয়েয়কজন ব্যবসায়ীর সাথে। তারা বলেছেন; এ ভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। প্রতি সপ্তাহই লোকসান গুনতে হচ্ছে। কাড ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি বিএসএফ। অথচ হাটের বাইরে শত শত লোক অবস্থান করে।
ভারতীয় প্রসাধনী ব্যবসায়ী সেন্টু শীল বলেন, প্রতি হাটেই প্রায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা বিক্রি করতে পারেন। গত ঈদের আগের হাটে দুই লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। কিন্তু হাটে একদিনের পাস বন্ধ করে দেওয়ায় দুই দেশের লোকজন আসতে পারছেন না। এ কারনে গত রোববার মাত্র ৮/১০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। এ ভাবে চলতে থাকলে সামনে দোকান নিয়ে আসা সম্ভব হবে না। তার মতে প্রত্যেক ব্যবসায়ীই লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ভারতীয় কাপড় ব্যবসায়ী অমর চন্দ্র সূত্রধর বলেন; আগে প্রতি হাটে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। ঈদকে সামনে রেখে ভাল বেচা-কেনা হওয়ার কথা থাকলেও গত রোববার মাত্র ৩ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।
বাংলাদেশী কাপড় ব্যবসায়ী অলিউল্লাহ সরকার বলেন; মাত্র ৬শ টাকা তিনি বিক্রি করেছেন। দোকানের মালামাল ছাড়াই হাটে মালামাল নিতে গাড়ী ভাড়া ও অন্যান্য মিলিয়ে খরচ হয় ১১শ টাকা। লাভ তো দূরের কথা প্রতি হাটে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তিনি বলেন; আগে প্রতি হাটে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারতেন। ঈদ আসলেই প্রচুর টাকা বিক্রি করতে পারতেন কিন্তু ঈদের আগের সপ্তাহ হওয়া স্বত্বেও বিক্রি করতে পারেনি।
কসবা সীমান্ত হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য ও কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিনা ইসলাম বলেন; নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের অধিবাসীরা সেখানে কেনাকাটা করবেন। অন্য এলাকার কেউ আসতে পারবে না। তবে এর আগে ৫ কিলোমিটার এলাকার অধিবাসীদের বার্ষিক কার্ড দেয়া হত এবং একদিনের জন্য এক হাজার ব্যক্তিকে হাটে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হত। ২৯ জুলাই থেকে এক দিনের অনুমতি বন্ধ করে দেয়ায় এ সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এক দিনের পাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাৎসরিক কার্ডধারীরা যেতে পারবেন। তিনি বলেন; উদ্ধর্তন কতৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
কসবা সীমান্ত হাট পরিচালন কমিটির সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অতিরিক্ত হাকিম (এডিএম) মো. সামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন; বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয়ে গত রোববার বৈঠক চলছে। আশা করছি দ্রুতই বিষয়টি সমাধান হবে।