প্রশান্তি ডেক্স্। । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যার পরিচয় একজন তথাকথিত রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবী। নিজের প্রয়োজনে গিরগিটির মতো রং পাল্টানো একজন রাজনীতিবিদ। ড. কামাল হোসেনের খোলস পাল্টানো রাজনীতির ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত কামাল হোসেন এই পথ ধরে চলেছেন।
নিজের ব্যক্তিস্বার্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। মুখে মুখে বঙ্গবন্ধুর সেক্যলারিজমসহ অন্যান্য আদর্শ মানলেও পর্দার আড়ালে ছিল অন্য গল্প। যার প্রমাণ মিলে সংবিধান থেকে জিয়াউর রহমানের ধর্ম নিরপেক্ষতা বাদ দেয়া কার্যক্রমে কামালের সমর্থনে। কামাল তখন মুসলিম বাংলার পক্ষেই কথা বলেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে এসে বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করলেও বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর বদলে উল্টো পথে হেঁটেছিলেন ড. কামাল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে দেশে ফিরতে বাধা দিয়ে যাচ্ছিলো তৎকালীন সরকার তখন মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলেন কামাল হোসেন। এমনকি তখন কোন্দলে জর্জরিত ও নেতৃত্বহীন আওয়ামী লীগের হাল ধরতে দলের অনেকেই কামালের দিকে তাকিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী তার সাথে যোগাযোগেরও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি তখন আওয়ামী লীগের হাল ধরার বদলে যুক্তরাজ্যে বসে উল্টো পথে হাঁটছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর যখন ষড়যন্ত্রকারীরা যখন জাতীয় চার নেতা হত্যার পল্টট তৈরী করতে চলেছে তখনও তা প্রতিহত করতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি ড. কামাল। বিটিশ লেবার দলের এমপি মাইকেল বার্নস তখন জানিয়েছিলেন যে, বিটিশ গোয়েন্দা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছে যে তখন জেলে থাকা তাজউদ্দিনসহ জাতীয় নেতাদের হত্যার চেষ্টা চলছে। প্রসঙ্গত মাইকেল বার্নস বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচিত ছিলেন। তখন তিনি বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিকে এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান যাতে বিটিশ সরকার জেলে জাতীয় নেতাদের অবস্থান জানতে চেয়ে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে পারে। তখন বিটেনে ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর সরকারের মন্ত্রী এবং ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিটেনের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের কাছে বেশ পরিচিত মুখ। তখন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামালকে বিটিশ সরকারের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান। তখন কামাল ব্যাপারটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এর কিছুদিন পরই নভেম্বর মাসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় আমাদের জাতীয় চার নেতাকে। পরবর্তীতে জাতীয় চার নেতা হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত শোকসভায় যোগ দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, ড. কামাল কি পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন এই হত্যাকান্ডে? পরবর্তীতে সুইডিশ একটি টেলিভিশনে জিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করলে তার প্রতিবাদ স্বরূপ সুইডিশ ওই টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে বলা হয় কামালকে, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
বঙ্গবন্ধু ড. কামালকে অসম্ভব ভালোবাসতেন এবং বিশ্বাস করতেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকা অবস্থায়ই বঙ্গবন্ধুর সাথে চাতুরী করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের অনুগ্রহভোগী তথাকথিত এক বাঙালি বুদ্ধিজীবী ড. জি ডবল্লিউ চৌধুরী ‘লাস্ট ডেইজ অব ইউনাইটেড পাকিস্তান’ নামে একটি বই লিখেছিলেন যেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার ব্যাপারটিকে এড়িয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতিবাচক সমালোচনাই করেছেন বেশি। তার এই বইয়ের জবাবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু ড. কামালকে একটি বই লিখতে বলেন। কামাল তখন বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে তিন মাস সময় নিয়ে ইংল্যান্ড গিয়ে বইটি লিখে দিবেন বলে জানান। ড. কামালের সেই তিন মাস আজও শেষ হয়নি। এমনকি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে বইটির বিষয়ে কামালের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও কোনো লাভ হয়নি।
এরপরও শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তাকে নিজেদের পারিবারিক ও রাজনৈতিক অভিবাবক হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন দেশে ফিরে। কিন্তু ড. কামাল বিএনপির সাথে আঁতাত করে নতুন দল গঠন করে তার প্রতিদান দিয়েছেন বেঈমানীর মাধ্যমে। ইতিহাস সব সময়ই এসব বেঈমানদের আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলেছে। ড. কামালও সেই দিকেই রয়েছেন। শুধুই সময়ের অপেক্ষা।