কসবায় বেড়ে গেছে ডাকাতের উপদ্রব ॥ আতংকিত জনগন

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবায় আবার বেড়ে গেছে ডাকাতের উপদ্রুপ । জনতা ডাকাত ধরে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করলেও প্রকৃত ঘটনার মামলা না দিয়ে অন্যমামলায় ঢুকিয়ে কোর্টে চালান দেয় পুলিশ। অপরদিকে ডাকাতিতে আক্রান্ত পরিবারগুলো থানায় মামলা দিলেও পুলিশ ওই সকল মামলা রেকর্ড না করে ভুক্তভোগীদের হয়রানী করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে জামিন পেতে আর অসুবিধা হয় না ডাকাতদের।
জানা যায়, গত ২৮ আগস্ট ৮/১০ জনের একটি ডাকাতদল কসবা উপজেলার কাঠেরপুল-পানিয়ারূপ সড়কের রানিয়ারা সেতুতে গাড়ি থামিয়ে ডাকাতিকালে যাত্রীদের আর্তচিৎকারে জনতা সাজ্জাদ ও নাজমুল নামক ২ ডাকাতকে আটক করে মরধোর করে পুলিশে সোপর্দ করে। কিন্তু পুলিশ ডাকাতদের নির্দিষ্ট মামলায় না দিয়ে অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে এদের কোর্টে চালান দেয়। এ ব্যাপারে কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ আবদুল মালেকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ওইদিন তিনি ছুটিতে ছিলেন। ও.সি’র দায়িত্বে ছিলেন পরিদর্শক মৃনাল দেবনাথ।
পরিদর্শক (তদন্ত) মৃনাল দেবনাথের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি উপ-পরিদর্শক কামাল জানেন বলে এড়িয়ে যান। দারোগা কামালের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান এ দুই ডাকাতের বিষয়ে এ.এস.আই আলিম জানেন। এ.এস.আই আলিমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান এ দু’ডাকাতের বিরুদ্ধে নিয়মিত কোনো মামলা হয়নি। পূর্বের একটি ডাকাতির প্রস্তুতি মূলক মামলায় ঢুকিয়ে তাদের চালান দেয়া হয়েছে। মামলা নং ২২/২০১৮।
গত ১১ আগস্ট উপজেলার ধর্মপুর গ্রামে অনন্তপুর-ধর্মপুর জেলা পরিষদ সড়কে পঞ্চগ্রাম ঈদগাহ মাঠের সামনে রাত সাড়ে দশটায় সড়কের দু’পাশ থেকে রশি টানা দিয়ে মোটর সাইকেল গতিরোধ করে আরোহী আলহাজ্ব কবির আহম্মেদ ও হারুনুর রশিদ মেম্বার থেকে মোটর সাইকেল, দু’টো মোবাইল, নগদ ১৮ হাজার টাকাসহ মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মালামাল ছিনিয়ে নেয়। ঘটনায় পরদিন আলহাজ্ব কবির আহাম্মদ থানায় ও.সিকে অভিযোগ দেন। কিন্তু ও.সি এই বিষয়য়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। চারদিন পর বাদী মামলার অনুলিপি চাইলে তিনি অভিযোগ পাননি বলে অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ আবদুল মালেক সাংবাদিকদের বলেন অভিযোগটি কোথায় রেখেছি, কাকে দিয়েছি সঠিক বলতে পারছি না। এ বিষয়ে এ.এস.পি (সার্কেল) আবদুল করিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে থেকে অভিযোগকারীর সেল নম্বর ০১৮০৭০০০০২৩ নিয়ে কথা বলেন এবং তাকে তাঁর অফিসে অভিযোগের একটি কপি নিয়ে আসতে বলেন।
উল্লেখ্য গত ১৫ জুলাই রাত ১১টায় তিনলাখপীর-চারগাছ সড়কে শ্যামবাড়ি সেতুর পাশে ইজিবাইক থামিয়ে ড্রাইভারকে মারধোর করে মহিলা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও গহনা ছিনিয়ে নেয়। এর এক সপ্তাহ পর একই স্থানে ডাকাতিকালে যাত্রীদের আর্তচিৎকারে জনতার হাতে ধরা পরে গণপিটুনীতে ডাকাত সেলিম (৩৫) নিহত হয়।মূলগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মইনুল হোসেন জানান নিহত সেলিম ডাকাত শ্যামবাড়ি গ্রামের পুলিশ কর্মকর্তা মৃত আবুল হোসেনের পুত্র।
গত ৩ জুন রাতে চাপিয়া-চন্ডিদ্বার সড়কে ডাকাতরা পথচারিদের গতিরোধ করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নেয়। গত ১ জুন রাতে হাজীপুর নামক স্থানে কসবা-সৈয়দাবাদ সড়কে ডাকাতেরা অটোরিক্সা গতিরোধ করে যাত্রীদের মারধোর করে তাদের সর্বস্ব লুটে নেয়।
এ সমস্ত ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে চিহ্নিত ডাকাতেরা পুনরায় এলাকায় ঢুকে পড়েছে। এজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহীনির অবহেলাই দায়ী। তারা বলেন বর্তমান সরকারের প্রায় সাড়ে চার বছর এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু হঠাৎ করে ডাকাতের উপদ্রুপ বেড়ে যাওয়ায় জনমনে আতংক সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.