বাআ॥ মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করে, কারও সঙ্গে আপস করে প্রধানমন্ত্রী হবেন না বলে দলের নেতাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে কোটা সমস্যার সমাধানের জন্য এক নেতার প্রস্তাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কারও সঙ্গে আপস করব না। বর্তমান আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এমন ষড়যন্ত্র পদ্মা সেতুর সময়েও হয়েছিল। বিশ্বব্যাংককে খুশি করতে আমার এক মন্ত্রী ও উপদেষ্টার পরামর্শে আমি এক সচিবকে গ্রেফতার করাতে বাধ্য হয়েছিলাম। অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে গ্রেফতার করার চাপ ছিল। কিন্তু আমি ষড়যন্ত্র টের পাই।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর কোনো ছবি না থাকায় আয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজমের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক সূত্র জানায়, কোটা সমাধানের প্রস্তাবেও ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গটি বৈঠকে উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আলম মাহমুদ স্বপন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কোটা সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানালে প্রধানমন্ত্রী কঠোরভাবে জানিয়ে দেন, যেহেতু আদালতের রায় আছে, তাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদ দেওয়া যাবে না। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে প্রয়োজনে অন্য সব কোটা বাদ দেওয়া যেতে পারে। তিনি এ সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিরোধিতাকারীদের কঠোর সমালোচনা করেন। বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা সরকারে আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ মর্যাদা দিই। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করি। এর আগে স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয় দিতে ভয় পেত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সারাদেশে এমন অবস্থা জারি হয়েছিল যে, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টাই যেন অপরাধ ছিল। এ সময় দলের অপর সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, আজ যারা কোটা সংস্কার আন্দোলন করছে এরা মূলত মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা কেন বাদ যাবে, প্রয়োজন হলে যারা রাজাকার, আলবদর ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তান, সরকারি চাকরিতে তাদের প্রবেশের বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত। তিনি বলেন, নেত্রী আমি যতটুকু বুঝি আমাদের শীথিলতার কারণে এ আন্দোলন এত লম্বা হয়েছে। আমরা উদাসীন ছিলাম। তাদের বিপরীতে আমাদের কেউ বক্তব্য-বিবৃতি দেয়নি। আমাদের পক্ষের লোকজন, রাজাকারদের পক্ষে কথা বলেছে।
খালিদের কথায় ইতিবাচক সায় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কোটা সংস্কারের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি করে দিয়েছি। ওই কমিটির প্রধান এখন অসুস্থ, চিকিৎসাধীন। তিনি সুস্থ হলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অন্যতম সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুর দিকে ছাত্রলীগের ইন্ধন ছিল। সংগঠনের জাতীয় সম্মেলন ঠেকাতে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ এ আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে আন্দোলনকে সারা দেশে চাঙ্গা করেছিল। সম্মেলনের আগমুহূর্তে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে সংগঠনের সাবেক কিছু শীর্ষ নেতার বৈঠকের বিষয়টিও তিনি জানান। আনোয়ার বলেন, যারা এমন বৈঠক করেছেন তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা এত সাহস পায় কীভাবে।
ছাত্রলীগের সম্মেলনের পর কমিটি এখনও ঘোষিত হয়নি, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান কথা তুললে প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি ব্যস্ততার কারণে বিষয়টি নিয়ে বসতে পারছেন না। সংগঠনের পদপ্রত্যাশী ৩০০ জনের বেশি। তিনি তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সময় বের করে ছাত্রলীগের সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানরে আলোকচিত্র না থাকা এবং দলের নেতাকর্মীদের এ অনুষ্ঠান আয়োজনে জড়িত না করায়, কেন্দ্রীয় সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজমের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আমাকে খুশি করতে পারবে না। বৈঠকে আওয়ামী লীগের আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক তাদের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী রিপোর্ট শুনে যেসব জায়গায় কোন্দল আছে, সেগুলো দ্রুত মিটিয়ে ফেলার তাগিদ দেন। বৈঠকে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, ঢাকা মহানগরসহ বেশ কয়েকটি জেলা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া আগামী সেপ্টেম্বরে শুরু করার কথা জানিয়েছেন দলটির মনোনয়ন বোডের সভাপতি শেখ হাসিনা। এছাড়া দলটির আগামী নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে একটি কমিটি দ্রুত ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি। চলমান তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিরপেক্ষ করার বিষয়ে আবারও তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হবে না। আমি চাই না নির্বাচনে কোথাও কোনো অনিয়ম হোক, নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারুক। আমরা চাই অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।