প্রশান্তি ডেক্স॥ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল সরকারকে হুঁশিয়ারি করে বলেছেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন, অসুস্থ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসের পাওনা হিসাব নেয়ার সময় এসেছে। অবশ্যই হিসাব নেয়া হবে। গত শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছি। অথচ আমাদের চেয়ারপারসন আমাদের মাঝে উপস্থিত নেই, উনি জেলখানায় আছেন। বিষয়টি আমাদের জন্য যন্ত্রণার, দুঃখ ও লজ্জাজনক।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রীকে জেলে রেখে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী আপনি সেজেগুজে পারফিউম মেখে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াবেন? এইভাবে কি দেশ চলবে? এভাবে দেশ চলতে পারে না। আওয়াজ কি শুনতে পাচ্ছেন? শেখ হাসিনা- আপনার পতনের আওয়াজ কি শুনতে পাচ্ছেন?
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ স্লোগান দিয়েছিলো আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র। বাস্তবে কি উন্নয়ন দেখা যায়? উন্নয়নের চিহ্ন নাই, গণতন্ত্র তো মরেই গেছে।’নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রামগঞ্জে পাড়ায়-মহল্লায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ, দেশকে পরিষ্কার করতে হবে। এই আওয়ামী লীগের যতো নির্যাতনকারী হেলমেটবাহিনী-চাপাতিবাহিনী আছে সব পরিষ্কার করতে হবে। গত ১০ বছরে দেশের জনগণের ওপর যে নির্যাতন অত্যাচার করা হয়েছে তার থেকে স্কুল-কলেজের বাচ্চারাও রেহাই পায়নি। তাই এই কালনাগিনীর অত্যাচারের বিষদাঁত ভেঙে দেয়া হবে। এসময় পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের বেতন কিন্তু আওয়ামী লীগ দেয় না, দেশের জনগণ দেয়। তাই জনগণের পক্ষে কাজ করুন, আওয়ামী লীগের পক্ষে নয়। কিছু পুলিশের কার্যক্রম দেখে লজ্জা লাগে, এতো দল করার ইচ্ছা থাকে তাহলে পুলিশের পোশাক বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের কোর্ট পরিধান করুন, নইলে পরিস্থিতি কিন্তু ভালো না।’ দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে সোহেল দীর্ঘদিন অন্তরালে থাকার পর জনসভায় যোগদানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে এলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল।
বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ জনসভার আয়োজন করা হয়। বিএনপি আয়োজিত সমাবেশের অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয় ট্রাকের ওপর। বিকেল ৩টায় মঞ্চে আসেন হাবিব উন নবী খান সোহেল। বক্তব্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো নির্বাচন হবে না। আমার নেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সর্বশেষ দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেন হাবিব উন খান সোহেল। এর পর থেকে আর দলের কোনো কর্মসূচিতে প্রাকাশ্যে দেখা যায়নি তাকে। নেতাকর্মীদে উদ্দেশ্যে সোহেল বলেন, পাড়ায় পাড়ায় প্রতিরোধের জন্য কমিটি গঠন করুন।
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বেতন কিন্তু আওয়ামী লীগ দেয় না। আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করবেন না। সময় কিন্তু ভালো নয়। ছাত্র ও জনতা প্রস্তুতি নিয়েছে। জনসভা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় দুপুর ২টায়। এতে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এতে আরো বক্তব্য দেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব ও আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হল মিলন, ঢাকা মহনগর দক্ষিণ বিএনপি সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম।
এর আগে সকাল থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ দলের নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলে জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে নেতাকর্মীদের নয়াপল্টনমুখী স্রোত তৈরি হয়েছে। ‘খালেদা জিয়া ভয় নেই রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই ‘আজকের এই দিনে জিয়া তোমায় মনে,’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত করে তোলে নয়াপল্টনের আশপাশ এলাকা।
জনসভায় যোগ দিতে আসা গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সায়্যেদুল আলম বাবুল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আজকের এই জনসভা জনসমূদ্রে পরিণত হয়েছে। আমাদের একটাই দাবি দেশনেত্রীর মুক্ত চাই।