জেলখানার দিনগুলি

jailhanar-dingolo-1[1]চলমান…
পথিমধ্যে খাবার দেয়া হয় যা খাওয়ার কোন রুচিই আমার ছিলনা। বরং তাদের আশ্বাস ছিল যে সন্ধায় আমাকে নিতে আসবে। জামিন কনফ্রাম। কিন্তু নিয়তির নির্মন পরিহাস হলো; পর্যালোচনা শেষে বিচারক আমাকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আর তাও জানতে পারি দুইদিন পর। আমাকে শান্তনা দিয়ে বলা হয় কোন সমস্যা নেই পুলিশ আসবে এবং রিমান্ডে নিবে কিন্তু ভয়ে যেন মিথ্যাকে সত্য না বলি। সত্য টুকুই যেন বলি। তবে আমি মিথ্যা বলিনি এবং বলবও না। মিথ্যা বলা আমার স্বাভাব এবং ঈমানে নেই। সেই আশ্বাসের পর আমি বিষন্ন হয়ে যায়। রুমে ফিরে আসি এবং রিমান্ডে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেই। ২৮/৪/১৮ তারিখ দুপুরে রিমান্ডে যাওয়ার ডাক আসে। দারোগা ছাদেক সাহেব যথারীতি আসেন এবং আমাকে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যান আবার সেই গুলশান থানায়। থানা হাজতে একটি তোয়ালে এবং পানির বোতল বালিশ হিসাবে ব্যবহার করে দুই রাত পার করে আবার র্কোট ও গারদ হয়ে জেলখনায় ফিরে আসি। ফিরে আসার পর আবার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আবার সেই প্রথম দিনের মত করে জেলের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষে আবার আমদানীতে নেয়া হয়। তখন দুইশত প্রয়ত্রিশ টাকায় এক প্যকেট সিগারেট দিয়ে আমার ওয়ার্ডে যায়। সিগারেট দিনে আমার বিবেক ও রুচিতে বাধে কিন্তু বিবেক ও রুচির বিরুদ্ধে গিয়ে ঐ গুষটুকু দিলাম। যা জীবনের প্রথম ঘুষ হিসেবে গুড এবং বেডবুকে স্থান হল। ওয়ার্ডে গিয়ে যথারীতি নুতন বন্দীদের সঙ্গে পরিচয় হয়। একজন তানজিল ও অন্যজন মাসুদ রানা ছবি। ওরা আমাকে সাদরে গ্রহন করে। সেই পুরোনো রুটিন; রাতের খাবার ঝাল এবং তৈলাক্ত। এভাবেই ২য় সপ্তাহ কেটে গেল এবং দুই সপ্তাহে ৪০০০ টাকা দিয়ে আমি ঐ চক্র থেকে বের হলাম।
আর তখনই শুরু হল আরেক খেলা। চালান নামক নিরব ঘাতকের আক্রমন। ওয়ার্ডের লোকজন যখন জানতে পারে আমি একজন সম্পাদক ও প্রকাশক। তখন আমার জন্য ভাল ব্যবস্থা করা হয়। দুই জনের সিট একজনকে দেয়া এবং ঐ রুমের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে জুলফিকার ও রানা ভাইয়ের সঙ্গে এক নিরিব বন্ধুপূর্ন সর্ম্পক হয়। তখন আমি তাদের সহচর্যে একটু জেলাশ্রয় নিয়ে থাকতে শুরু করি। এভাবেই দু:খের স্মৃতিকে সুখের আবরনে পার করতে চেষ্টা করি। দুু:সহ যন্তনার মাঝে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়। ১২ মে ১৮ রাতে জানতে পারি আমার চালান হয়েছে কাশিমপুরে। আমি তখন জুলফিকার ভাই ও রানা ভাইকে খবর দেয়। তখন তারা বৃষ্টির জন্য আসতে পারেনি। রাতে দোয়া করি; ফরিয়াদ করি সম্মান ও বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য। তখন নির্ঘুম রাত কাটাই। হয়ত কশিমপুর যাব কিন্তু ধৈর্য্য ও শক্তি যাচনা করি। তখন সকাল হলে আমাকে ও ছবিকে নিচে নামিয়ে নেয়া হয়। তখন খোলা মাঠে জোরে চোখের জলে মোনাজাত করি এবং পরক্ষনে রানা ভাই ও জুলফিকার ভাই এসে বলে আপনের চালান হবে না। গেইট থেকে আপনাকে ছেড়ে দিবে। ছবির চালান হবে।
কিন্তু তাদের বক্তব্যে জানতে পারি ৩০০০টাকা দিয়ে ছবির চালান ঠেকানো হল। মাবুদ এই যাত্রায় রক্ষা করল। তারপর এক সপ্তাহে পরিচয় হলো চালান রাইটার মিলন ও বিনয়ের সঙ্গে। বিনয় খগড়াছরির আর মিলন কসবার ছতুরা গ্রামের । তারা বলল আপনার আর চালান হবে না। এই আশ্বাস এবং কতিপয় জেলের বন্ধি ও প্রশাসনিক ক্ষমতাধর বন্ধুদের আশ্বাসে বিশ্বাস নিয়ে আরো একটি সপ্তাহ পাড় করি। আবারো ফিরে এলো নতুন আর এক হতাশার রাত। ২১/৫/২০১৮ রাতে আবার জানানো হলো আপনার চালান আছে। আমি প্রস্তুত কাশিমপুর যাওয়ার জন্য। কিন্তু সবাই বলল আপনার চালাল হবে না। মজার ব্যাপার হল ওয়ার্ডের ৪০ জনই আমার চালান ঠেকানোর জন্য ঐক্যবদ্য হয়ে কথা বলল। সকাল বেলা রুমে আটকানো অবস্থায় বিনয় এবং মিলন আসল এবং আমার নাম ডাকল আমি সমানে গিয়ে পরিচয় দিতেই নাম ডেকে চলে গেল। এবার ও চালান ঠৈকল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.