ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা ( ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ভোল্লাবাড়িতে আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আজিজুল হক ও রিজিক মিয়ার সমর্থিত দুই পক্ষের কমপক্ষে ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। আজিজুল হকের সমর্থিত ৬টি পরিবার গ্রাম ছাড়া। বসত ঘরে ঝুলছে তালা, আসতে পারছে না তাদের কেউ ভিটে-বাড়িতে। অপরদিকে রিজিক মিয়ার সমর্থিত লোকজন হুমায়ুন মিয়ার নেতৃত্বে লাঠি হাতে নিয়ে মহড়া দিচ্ছে এলাকায়। এ নিয়ে যেকোন সময় ঘটতে পারে খুন জখমের মতো ঘটনা।
খোজঁ নিয়ে জানা যায়, কসবা এবং আখাউড়া উপজেলার শেষ সিমান্তে অবস্থিত প্রত্যন্ত এলাকা ভোল্লাবাড়ি । গ্রামের কিছু অংশ আখাউড়া উপজেলায় রয়েছে। কসবা উপজেলা সদর থেকে ১২ কি:মি: দুরে। যে কোন বিশৃঙ্খলায় কসবা থানা পুলিশকে খবর দিলেও পুলিশ নানা অজুহাতে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে। ওই গ্রামের রিজিক মিয়া সমর্থিত হুমায়ুন মিয়া ও আজিজুল হকের লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তাছাড়া আজিজুল হকের আতœীয় জিয়াসমিন নামের এক মেয়ের সাথে একই গ্রামের আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েকদিন পরই সংসার ভেঙে যায়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ আরো বাড়তে থাকে এবং এ ঘটনা নিয়েও চলছে মামলা। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে রিজিক মিয়া সমর্থিত হুমায়ুন মিয়াদের বিরুদ্ধে ৭টি এবং এবং আজিজুল হকের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা চলছে। এ ছাড়া ভূমি সংক্রান্ত মামলাও আদালতে চলমান রয়েছে। আজিজুল হককে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মারধোর করে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। বর্তমানে বাড়ি-ঘর তালা দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।সেখানে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। তাদের দায়ের করা মামলায় স্বাক্ষী হাসান মিয়া, মানিক মিয়া, আবু জামাল, জমির আলী ও সামসু মিয়া নামের আরো ৬টি পরিবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের অভিযোগ প্রতিপক্ষের লোকজনের ভয়ে বাড়িতে আসতে পারছেন না তারা।
গত শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ভোল্লাবাড়ি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় একদল যুবক লাঠি হাতে মহড়া দিচ্ছে। আজিজুল হকের বাড়িতে গিয়েও ভুল্লাবাড়ি গ্রামের রিজিক মিয়া, সবুজ মিয়া, দেলোয়ারসহ ৮/১০জন যুবক মহড়া দিচ্ছিলেন। এ সময় মুঠোফোনে আজিজুল হকের ছোট ভাই গোপিনাথপুর কলেজের রসায়নের অধ্যাপক তাজুল ইসলামের মেয়ে তাদের ছবি তুলেছেন। ক্ষুব্দ ওই যুবকরা মুঠোফোনটি কেড়ে নেয়। তাদেরকে কথা বলার জন্য ডাকলেও এরা কোন কথা শুনে নাই। পরে সাংবাদিকদের সহযোগীতায় মুঠোফোনটি ফেরত পায়। এ সময় কথা হয় আজিজুল হকের ছোট ভাই তাজুল ইসলামের স্ত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শামীমা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, রিজিক মিয়া ও হুমায়ুন মিয়ার লোকজন তাদের বাড়িতে গিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। মহড়া দিতে গিয়ে তারা বলেছেন, তার বাসুর আজিজুল হকের বাড়িতে থাকা অসহায় দুটি পরিবারের লোকজন ৫টার মধ্যে যেন বাড়ি ছেড়ে দেন, নতুবা বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, তাদের পক্ষের স্বাক্ষী হওয়ায় একই গ্রামের ৬টি পরিবার এখন গ্রাম ছাড়া। তাদের বাড়িতে তালা দেয়া রয়েছে। থমথমে ভাব বিরাজ ওই এলাকায়।
হুমায়ুন মিয়া বলেন, আজিজুল হক খারাপ প্রকৃতির লোক এবং মামলাবাজ। তাঁর দলে না গেলেই মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে। জায়গা নিয়ে গোপীনাথপুর গ্রামের লোকজনের সাথে দ্বন্ধ। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে গিয়ে তিনি আমাদেরও আসামী করে। তিনি বলেন, রমজান মাসে মসজীদে নামাজ পড়তে গেলে তাদের লোকজন আমাদের লোকজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এখনো একজন পঙ্গু হয়ে পড়েছে। গ্রামে আসতে কাউকে বাঁধা দেয়া হয়নি। পাগলা কুকুড় তাড়াতে লাঠি মহড়া দেয়া হয়েছিল।
আজিজুল হক মুঠোফোনে বলেন, হুমায়ুনের সাথে আমার কোন ব্যক্তিগত দ্বন্ধ নেই। পূর্বের কিছু বিরোধ নিয়েই সংঘর্ষগুলো হচ্ছে। তিনি বলেন; হুমায়ুনদের লোকজন ইউপি চেয়ারম্যান মান্নান জাহাঙ্গীরের সমর্থন নিয়ে গ্রামে পাহাড়া দিচ্ছেন। তাদের ভয়ে বর্তমানে তিনিসহ ৭টি পরিবার এখন গ্রাম ছাড়া। গ্রামে আসলেই তাদের উপর আক্রমন ও মারধোর করবে।
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান এস.এম. মান্নান জাহাঙ্গীর বলেন, আজিজুল হক মামলাবাজ লোক। এলাকার সাধারণ লোকজনকে মামলা দেয়াই তার কাজ। রমজান মাসে মসজিদের ভিতর সাধারণ লোকজনদের উপর হামলা করেছে। আখাউড়া উপজেলায় তাঁর চাচা রিজিক মিয়ার মালিকানাধীন জায়গা আজিজুল হক জোরপূর্বক দখল করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে জায়গার মালিক তাঁর চাচাই। রিজিক মিয়ার পুত্র আনিসুল আলম (৩০) জানান,দীর্ঘ বছর যাবত এ মামলা চলমান । যখন ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে পড়তাম তখনই আসামী হয়েছিলাম। আমরা বার বার মিমাংসা চেয়েছি। কিন্তু আজিজুল হক কিছুতেই সামাজিক বিচার মানেন না। কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মালেক বলেন, কসবা থানায় যোগদানের পর কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়াও পূর্বের মামলাগুলির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ দিকে আজিজুল হকের পুত্র জাহাংগীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ছাত্র জিয়াউল হক জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে হামলার বিষয়ে কসবা থানা ওসিকে লিখিত অভিযোগ ই-মেইলে পাঠিয়েছি এবং ফোনে কথা বলেছি। কিন্তুু তাৎক্ষনিক থানা কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেননি।
কসবা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুল করিম বলেন, আজিজুল হককে মারধোরের কারণে আখাউড়া থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ৬/৭টি পরিবার গ্রামে থাকতে পারছেন না বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।