…চলমান…
এবার ও চালান ঠৈকল। রাতে আমার মোনাজাত আল্লাহ শুনল। এভাবেই জেল জীবন কাটল। জেল একটি আজব জায়গা যেখানে খুব কঠিন নিয়ম যা একটি লাঠি দিয়েই নিয়ন্ত্রন করা হয়। ভোর ছয়টায় শুরু হয় ঘুমের লোক উঠ ফাইল ফাইল বলে চিৎকারে। ফাইল ফাইল বলে চিৎকার শুরু হলে এমনকি নানান অশ্রাব্য ভাষার বাহাদুরীশুলভ গালী যখন আরম্ভ হয় তখন সবাই উঠে ৪ জন করে ফাইলে বসতে হবে। জমাদার এসে ফাইল গুনতে থাকবে এবং গুনতি মিলিয়ে খাতায় সহি দিয়ে চলে যাবে। যতক্ষন গুনতি মিলের ঘন্টা না বাজবে ততক্ষন রুমের বাইরে যাওয়া যাবে না। ঠিক একই প্রক্রিয়ায় দুপুরে আরেকবার গুনতি হবে। তিনটা বাজার ঘন্টা বাজার আগ পর্যন্ত দালানের ভিতর ঘোরা যাবে এমনকি লাইব্রেরীতে বই পড়তে যাওয়া যাবে; তিনটার পর চারটা থেকে ৫টা একঘন্টার জন্য বাইরে যাওয়া যাবে। মাঠে এক ঘন্টা হাটাহাটি করে ৪.৩০ এর মধ্যে যার যার লকাপে ঢুকতে হবে। ৫ টায় লকাপ বন্ধ করে আবার গুনতি দিতে হবে; ফাইলের মাধ্যমে গ্রামের হাস মুরগী যেভাবে খোয়ারে ঢুকায়ে তালা দেয়া হয় ঠিক একই প্রক্রিয়ায় বদ্ধিদেরকেও তালা দেওয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে একবার সাহেব ফাইল হবে। তাই সব বিছানা ভেঙ্গে খালি রুমে প্লেট ও কেইস ফাইল নিয়ে ৪ জন করে লাইনে বসে থাকতে হবে। স্পেশাল ফাইল এর জন্যও একই নিয়ম; পরির্দশন ফাইলও একই কায়দায় হয়। সি আইডি চেক যে কোন দিন হতে পারে। যদি অবৈধ কোন কিছু পাওয়া যায় তাহলে ঐ চেকে জরিমানা আদায় করা হয়। জরিমানা ৫০০-১০০০ টাকা। অবৈধ বলতে নগদ টাকা, কাটনি, চা খাওয়ার হিটার, গাজা, হিরোইন, বাবা, চিরনী, আইনা কেচি, রেজার, বেল্ট ইত্যাদি। ঠিক একই কায়দার স্পেশাল চেক হয়। একই কায়দায় জরিমানা করা হয়। তাদের কাজ বিছানা ভেঙ্গে দেয়া এবং বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করা। মোট কথা জরিমানা আদায় করা। রুমে গোলস করলে জরিমানা এক প্যাকেট হলিউড সিগারেট বা নগদ ৫০ অথবা ১০০ টাকা। কোন অন্যায় করলেই জরিমানা জমাদার ও মিয়াসাহেব মিলে টাকা আদায়ের বিভিন্ন কৌশল নেয়। যেমন কোন বন্ধীকে কে টেবিলে নিয়ে বড় শাস্তি হাত পা বেধে বেতের বাড়ি এবং টাওয়ার করে দেয়া। টাওয়ার মানে দালানের ছাদে উঠিয়ে সারা রাত দাড়ানো রাখে বা টাংকির পানিতে গোছল করানো। অথবা আমদানিতে পাঠিয়ে সাজা দেয়া। মোটা অংকের টাকা জরিমানা করা। যেখানে জেলের ভিতর নগদ টাকা অবৈধ সেখানে টাকা জরিমানা বলুনতো এটা কোন শ্রেণীর বৈধ বা অবৈধ। প্রয়োজনে সুবেদার এবং জেলার পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায়। সবাই ঐ শাস্তির বয়ে আতংকে থাকে। এখানে বাদি ও বিবাদি উভয়েরই শাস্তি হবে। সচরাচর এই শাস্তির ভয়ে কেউ নালিশ করতে চায়না। কারা রক্ষিদের ধাক্কাটা সামলানো অনেক ঝামেলার এবং দুসাধ্যের যার জন্য এই বন্দি দশায় কেউ মুখ খুলে না। নালিশ করার বিধান থাকলেও নালিশ কেউ করে না। রুম ইনর্চাজ এবং রাইটারদের থাবা বা দৌরাত্ব সর্ম্পকেও কেও মুখ খুলেনা।
বিশাল এই জেলে কত কিছুই না ঘটে যা দেখতে দেখতে অনুভুতি এবং বিবেক আমার অথবা বিবেকবানদের ভোতা হওয়া ছারা আর অবশিষ্ঠ কিছু না। জেলার, সুপার, সহকারী জেলার ও সুপার, ছোবেদার, কারারক্ষী, জমাদার মিয়াসাহেব। দায়িত্বেও মাঝে নেই কোন ঈমানী আমল বা দায়িত্বেও সচেতনতা তবে সবই দুনিয়াবী কামাই ছারা আর কি? যার যার দয়িত্ব পালন কওে এবং এরই ফাকে কখনো কখনো সুবেদার ফাইল হয়। কখনো সি আইডি এসে যা আছে সবই নিয়ে যায়; কখনো স্পোশাল চেক এসে সবই কেড়ে নেই; জেল এক জন্ত্রনাময় জলন্ত অবস্থা।
চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি জেলের ভিতর আরেক জেল তার নাম হল সেল। সেল জীবন হলো ঘরের ভিতর আরেক খাচায় বন্ধ কেবিনের ভিতর জীবন যাপন করা আর ওয়ার্ড জীবন হলো ম্যাচ লাইফ বা বস্তীর জীবন যাপন করা। চোখের সামনে অনেকেই অসুস্থ হল কোন চিকিৎসা নেই বরং দেখলাম মৃত মানুষ এর নিশ্চিত মৃত্যু হলে গাড়িতে করে বাইরের নিয়ে গিয়ে রিপোর্ট লিখা হয় হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছেন। যা দেখে ও শুনে আতংকিত ও বাকরুদ্ধ হওয়া ছাড়া কোন গতি নেই। …চলমান….