চলমান
এই জেল জীবনে কত বিচিত্র অভিজ্ঞতাই না হল। আমি নিজে একদিন রাতে অসুস্থ্য হয়ে পড়ি এবং ১ম দিন জ¦র ও জ্ঞান হারনোর ঔষুধ বা কোন সেবা শুরু হয়নি। কোনরকম চিকিৎসা ছাড়াই এ যাত্রায় রক্ষা পায়। তবে খোদা রক্ষা করে এবং মোনাজাতের উত্তরও পায়। দ্বিতীয়বার আবার ষ্টোক করে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। কোন প্রতিকার নেই বরং জেলের নিয়ম ফাইল এবং গুনতি যাবতীয় নিয়ম কানুন পালন করতে হয়। বাড়ীর লোকজন খবর পেয়ে অনেক চেষ্ঠা করে কারা হাসপাতালে ভর্তি করার কিন্তু চিকিৎসার বদলে একটি বিছানা ও মশারী পেয়েছি। হাসাপাতাল সুত্রে সমাজের ধনিক শ্রেনীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে আর কি? কোন ঔষধ বা ডাক্তারের দেখা মিলে নাই। শুধু ফ্রিজ, ওভেনসহ নানা সুবিধা পাওয়া যায় টাকার বিনিময়ে এইটা বুঝতে ও জানতে সক্ষম হয়েছি। টাকা আছে জেলে সবই আছে। মেডিক্যালে থাকতে হলে একটি সিটের বিনিময়ে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। ১০ হাজার ডাক্তার ও প্রশাসন ২০০০ টাকা রাইটার ২০০০ টাকা সেবক ৫০০ টাকা। আর সেলে থাকলে হলে ৫০০০ টাকা দিয়ে যেতে হবে। যদি কেউ আমদানীতে থাকতে না চায় তাহলে টাকা দিয়ে ম্যডিক্যালে চলে আসলেই হবে। টাকার বিনিময়ে মদ, গাজা ইয়াবা, বাবা, হিরোইন, প্যাথেঢিন সহ সবই পাওয়া যায়।
কি ভাবে কাটলো জেলের দিনগুলি? প্রথমে আমি এক প্রকার ম্যান্টাল অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। বিভিন্ন মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে চিন্তা করতাম আমার পরিচিতি ও লাইফ নিয়ে ভাবতাম এই করে সৃষ্ঠিকর্তাকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। অফিস এর কাজ, স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে ভাবতাম। এইসব ভাবতে ভাবতে প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। আশার কথা শুনে আশান্বিত হতাম আর হতাশার কথা শুনে নিস্তেজ হতাম। কিন্তু সেই আশায় যখন গুড়েবালি হয় তখন বিষন্ন হয়ে সৃষ্ঠি কর্তার সান্নিধ্যে একান্তে সময় কাটাতাম। অতীতের ভুলগুলি খুজে বের করতে চেষ্ঠা করতাম। সারাদিনই প্রার্থনায় থাকতাম। আরীব, ফিউনা এবং লাকীকে খোদা তায়ালার কাছে সমর্র্পন করলাম। রাতে স্বপ্নে খোদা তায়ালা দেখা দিয়ে বললেন চিন্তা নেই অপেক্ষা কর তোমার জন্য ভাল ব্যবস্থা রয়েছে। আমার পাশেই ক্যান্ট ভাই বসা ছিল। দুইভায়ে মিলে আল্লাহর কাজ করার সুযোগ দিল। আমার অন্তরে শান্তি এলো এবং অন্যদেরকে শান্তির পক্ষে বলা শুরু হল। তারপরও বন্দি জীবন একটি দুর্বীসহ জীবন। এজীবন থেকে মুক্তির পথ দেখানো খোদার একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। প্রতিদিন এবং রাতে না ঘুমিয়ে শুধু চোখের জলে মোনাজাত এবং ক্ষমা ও অপরাধ স্বীকার করা ছিল আমার নিত্য দিনের চাওয়া। হযরত ইব্রাহিমের মত আমিও আমার স্ত্রী লাকী এবং সন্তান আরীব ও ফিউনাকে আল্লাহর কাছে তুলে দিলাম। তাদের জন্য আমার বুকটা হা হা কার করে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। কিন্তু কিছুই করার ছিলনা। জেলখানায় একটি পিপড়ার ক্ষমতা আছে কিন্তু আমার কোন ক্ষমতা নেই। তবে অসহায় হয়ে ও খোদার কাছে চাওয়ার সুযোগ ছিল এবং প্রতিটি সুযোগেই সন্তুষ্টচিত্ত্বে চেয়েছি। মা, বাবা, ভাই, বোন, শশুর-শাশুরী সহ সকলের জন্য মায়া লাগত এবং মনে পড়ত তখন আল্লাহর কাছে দোয়া ছাড়া আর কিছুই করার আমার ছিলনা। তবে সবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার একটি সুযোগ চেয়েছি সৃষ্টিকর্তার কাছে। যাতে আমাকে সবাই ক্ষমা করে দিতে পরে। সেই আশায় মোনাজাত অব্যাহত রেখেছি। চলমান