আসন্ন নির্বাচণকে ঘীরে এখন শুরু হয়েছে নানান কর্মকান্ড, অলোচনা, সমালোচনা, প্রকাশ্যে ও গোপনে চলছে ষড়যন্ত্র। এই সবেরই মূলে রয়েছে সরকার এর পতন বা যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া। এতে বিরোধী শক্তির সঙ্গে আবার বিদেশী শক্তিরও যোগসাজস লক্ষ্যকরা যাচ্ছে। প্রকারান্তরে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই চক্রান্তের জাল উন্মোচিত হচ্ছে এবং কিছু কিছু চক্রান্ত আবার গভীরে দানা বাধছে। কখনো এই চক্রান্তের স্বীকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ আবার কখনো ঐ খেলায় দেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন ও স্থীতিশীলতা বিনষ্ট হচ্ছে। কখনো এই চক্রান্ত হাড় কাপানো জ্বরের ন্যায় দোলা দেয় আবার কখনো এই চক্রান্ত টর্নেডু আকারে প্রকাশ পায়; কখনো আবার প্রকাশিত হয় সাইক্লোন বা ঘুর্ণীঝড়ের ন্যায়।
এই সবের ফলে আগ্নেয়গীরির অগ্নুৎপাতের লাভার উদগীরন প্রতিয়মান হয় হঠাৎ আভির্ভূত ভূকম্পনের মাধ্যমে। যা জাতীকে এক ঝাকুনিতে ধরাশায়ী করে আষ্টে পিষ্টে বাধতে জোড়ালো প্রচেষ্টা চালায় ঐ রক্তচোষা ভূভুক্ত নরপিচাষ মানুষগুলো। এই জাতীর সামনে একটি দুর্দশা ঘূর্ণায়মান বৃত্তের সার্কেল আবদ্ধ হয়ে মঝে মাঝে প্রকাশীত হয়। আর তা হয় বিশেষ করে ক্ষমতার পালাবদলকে কেন্দ্র করে। কখনো কখনো এই পালাবদলের উপকরণ হিসেবে নির্বাচন নামক পক্রিয়ার ছোবল দ্বারা আক্রান্ত হয় এই বীরবেশী বাঙ্গালী জাতী। কখনো এই ছোবলে জাতীর ভাগ্যাকাশে কালো মেঘ নেমে এসেছিল; যার খেসারত জাতিকেই বছরের পর বছর দিতে হয়েছিল। আবার কখনো ঐ ছোবলে মঙ্গলের আলীঙ্গনে মিলেমিশে উন্নতির শিখরের ছোয়া অনুভূত হতে সুযোগ পেয়েছিল হতভাগা এই জাতি। সুযোগের সৎব্যবহার করে যখনই এগিয়ে যাচ্ছিল অগ্রগতির দিকে ঠিক তখনই আবার নতুন মোড়কে ছোবলাক্রান্ত হয় এই জাতি।
জাতির ভাগ্যাকাশে প্রশান্তির ছোয়া দোলাদিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছে স্থায়ী এক নতুন সোনার বাংলার রূপ, লাভন্য নির্ভর দিগন্ত উন্মোচনের মহাকাব্যিক বিশালায়তন শ্যামলিমায় ছায়াসুনিবীর চিরঅমলিন উপভোগ্য এবং জ্যুতিময় আশ্চয্য নক্ষত্রের নীলিমায় ভরপুর অগ্রসরমান আলোকবর্তিকার দৃষ্টান্তনির্ভর পরিপূর্ণ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশের। এই বাংলাদেশকে দেখতে কার মন না চয়… সবারই চায় আর সেই চাওয়ার বাস্তব রূপদান এখন মাঝামাঝিতে পৌঁছেছে। শেষের জন্য প্রয়োজন চলমান ধারাবাহিকতা। কিন্তু হায়েনারা ছোবল মারতে এখন মরিয়া যাতে সকল কিছু তছনছ করে আবার কালো মেঘে আচ্ছাদিত করতে পারে। আমরা জনগণই পারি এই ছোবল থেকে এমনকি কালমেঘের আচ্ছাদন মুক্ত থেকে লক্ষ্যের শেষ সীমায় পৌঁছাতে। তাই ভেজালের সকল ঐক্যকে প্রতিহত করতে এবং লোভের বেড়াজাল থেকে মুক্ত থাকতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে কবুতরের মতো সড়ল ও সাপের মত সতর্ক হয়ে।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, কিছু মানুষের জন্মই হয় মোসাহেবী করার জন্য; আর কিছু মানুষের জন্ম হয় শয়তানের কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য। আর কিছু মানুষের জন্ম হয় শয়তানকে পরাভূত করে সত্যকে প্রতিষ্ঠীত করার জন্য। সত্যের সন্ধানে এগিয়ে গিয়ে সত্যের দিশারী হিসেবে জাতিকে পথ দেখাতে সক্রিয় কাজ চালিয়ে যাওয়া হলো এক শ্রেণীর নিস্বার্থ ও স্বষ্টবাদী মানুষের স্বভাবসুলব বাস্তবতা। আর সেই বাস্তবতাকে পথরুদ্ধ করাই হলো শয়তানের কাজ। শয়তানের একটা ইচ্ছা হলো সত্যকে মিথ্যা প্রলেপে আটকানো। আর মিথ্যাকে সথ্যের প্রলেপে চালিয়ে দিয়ে প্রতারণা এবং অন্ধকারকে বিরাজমান রাখা। কিন্তু সত্যের ধর্ম হলো ঐ মিথ্যাকে পরাজিত করে প্রজ্জ্বলিত হয়ে দৃশ্যমান থাকা।
আসন্ন নির্বাচন ঘীরে ঘনীভুত হওয়া চক্রান্ত এখন জনগণের দৌঁড়ঘোড়ায়। কিন্তু এখান থেকে জনগণকে রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। চলমান সরকারের বিরুদ্ধে যে চক্রান্ত হচ্ছে তা স্বয়ং বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে; কৃষ্টি কালচারের বিরুদ্ধে, সংস্কৃতি এবং মুল্যবোধের বিরুদ্ধে; স্ব স্ব অবস্থান থেকে ধর্মীয় ঈমান ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে; চলমান ঈর্ষনীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। তাই জাতিকে বিভক্ত এমনকি চক্রান্তকারীদের হাত থেকে মুক্ত রাখতে যে যে পদক্ষেপগুলো নিতে হবে সেগুলো সচেতনতার সহিত চালিয়ে যাওয়া উচিত। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যা যা করার তাই করতে কার্পন্য করা বাঞ্চনীয় নয়। কর্মকৌশল, চিন্তা এবং কাজের সমন্বয় সাধণ অতিব জরুরী। মিডিয়া এবং কাজের সমন্বয়ের বাস্তবসম্মত প্রচারণার গুরুত্ব বাড়াতে হবে। সমালোচনার মাত্রা কমাতে হবে। উৎসাহের মাত্রা বাড়াতে হবে। ঐক্যের সমন্বয় বাড়াতে হবে। মামলা হামলা এমনকি নেতিবাচক প্রচারণা ও গুজব এবং মিথ্যা আশ্বাস বন্ধ করতে হবে। দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের উজ্জ্বীবিত করে মাঠে নামাতে হবে। ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে সকল ফলপ্রসু ইতিবাচক উন্নয়ন নির্ভর কর্মকান্ড। আগামীর শেষ ঠিকানা বা লক্ষ্যের শেষ প্রান্তে পৌছাতে এমনকি পৌছার পরের দৃশ্য এখনই জাতির সামনে তুলে ধরে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হবে। অবুঝ-বেবুঝ এমনকি ঘুমন্তদেরকে জাগিয়ে তুলতে হবে। ঐ চক্রান্তকারীদেরকে বা মুখোশধারীদেরকে অথবা ষড়যন্ত্রকারীদেরকে আর কোন সুযোগ দেয়া যাবে না; কারন সুযোগ পেলেই তারা ছোবল মারবে; মিথ্যা বলবে, নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টিতে কাজ করবে; গুজব রটাবে। সবই করতে জনঅসন্তোষ সৃষ্টি করে আশান্তিময় পরিবেশ তৈরী করে উদ্দেশ্য হাসিল করতে।
ইদানিং কতগুলো ঘুণেধরা মানুষ একত্রিত হয়ে ক্ষমতার মসনদে বসার পায়তারা করে যাচ্ছে। বিভিন্ন কলকাঠি নাড়ছে। মোট কথা একটার পর একটা খেলা খেলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে বৃহত্তর ঐক্য করে সর্বদলীয় ঐক্যের সরকারের চিন্তা ভাবনাও করছে। তবে ঐ ঐক্য কিন্তু এই দেশের সফল একটি দলকে বাদ দিয়ে। যে দলের হাত ধরে স্বাধীনতা এসেছিল, উন্নয়ন স্বীকৃতি এবং মর্যাদার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল সেই দলটিকে বাদ দিয়ে কিভাবে বৃহত্তর ঐক্য হয় তা বোধগম্য নয। কারণ ঐ পাগলের দলগুলোর পায়ের নিচে মাটি নেই এবং আকাশের উপর তাদের জন্য ছাঁদ নেই। শুধু সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদ আত্মসাৎ করে নিজের জন্য যা জমায়েত করেছেন তা দিয়েই কিছু একটা করতে ব্যতিব্যস্ত। কথায় আছে ঘাধা পানি খায় আওড়াইয়া (ঘোলা করে)। আমাদের দেশের ঐ জ্ঞানপাপীরাও তা করছে। তাদের সামনে সবই মজুত রয়েছে কিন্তু তারা বিনামূল্যে পাওয়া আশির্বাদ নিবে না বরং অর্থ ও সময় দন্ড দিয়ে কিছু একটা করতে এগিয়ে যাচ্ছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে, এটা আমাদের জন্য আশির্বাদ। আইন প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন একসুত্রে গাঁথা। নতুবা অসম্পূর্ণতা থেকে যায়। যে আইনটি পাস হয়েছে তার যথাযথ আশু বাঞ্চনীয়। কারণ পুর্বের আইনটি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সহজ এবং বর্তমানের টিরও আর জটিল তবে এর ব্যবহারের স্বচ্ছতাই সদ্য পাস হওয়া আইনটিকে স্বীকৃতি দিবে এবং এর যথার্থতা পুরণে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। আইনটির যেমন সুফল রয়েছে তেমনি কুফলও রয়েছে তাই এর কুফল থেকে রক্ষা করাই এখন মুখ্য বিষয় সংশ্লিষ্ট সকলের।
নির্বাচনী মহড়া চলছে এবং চলবে তবে এই মহড়ায় ১ম এবং অগ্রজে রয়েছে সরকারী দল। দলীয় কর্মী সমর্থক ও নেতাদের কর্মকান্ড, গণসংযোগ, মিটিং মিছিলে ছয়লাভ হচ্ছে মাঠ, ঘাট, হাট-বাজার, স্কুল কলেজ, পাড়া মহল্লা এমনকি নির্মল বায়ূতেও। বিরোধী শিবীরের মধ্যে তেমন কোন নির্বাচনী আমেজ বা জনগণ নির্ভর কর্মকান্ড নেই বললেই চলে, তবে মিডিয়ায় এমনকি কূটনৈতিক আলাপচারিতায় এবং গোপন ষড়যন্ত্রে মঝে মধ্যে পাওয়া যায় কল্প কাহীনির বাকোয়াজ। তবে এই ধারার মধ্যে নিহীত রয়েছে নির্বাচন বানচাল বা বয়কট করার চাতুরীনির্ভর খেলা। চতূস্কুণ কোন বস্তুর দ্বারা বা মাঙ্গলীক শত্রুর দ্বারা অথবা কোন শয়তানের শয়তানির দ্বারা ক্ষমতার মসনদ পাকাপোক্তোর গোপন মহড়া প্রতিনিয়তই হচ্ছে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ বিরোধী শিবীরে। তাই সজাগ থেকে ঐ মহড়ার বাস্তবায়ন বন্ধ করতে হবে। সরকার এবং জনগণ একসূত্রে মিলে মিশে কাজ করে যেতে হবে। জনগণের সঙ্গে কোনভাবেই সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না। দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের ন্যায় জনগণকেও একই কাতারে নিয়ে আসতে হবে। দলীয় প্রধানের ক্যারেশমেটিক গুনাগুনগুলির দ্বারা আকৃষ্ট জনগণকে নির্বাচনী মহড়ায় সার্বিকভাবে নিয়োজিত করে জয়ের স্বাদ আহরণ করতে হবে। দেশের গতিশীল ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রশাসনের গতিশীলতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লোভাতুর শ্রেণীর মানুষগুলিতো সব জায়গায়ই রয়েছে। তাই সজাগ থাকতে হবে যাতে ঐ লোভাতুর শ্রেণীর দ্বারা দেশ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। সমাজ ধ্বংসের গহবরে তলিয়ে না যায়।