মো: শাহজালাল॥ “বারো বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিলো আমার। ৪ বছর পর স্বামী মারা যায় মুক্তিযুদ্ধে। তখন আমি তিন মাসের পোয়াতি। অনেকে সরাসরি প্রস্তাব দিয়েছে আমাকে বিয়ে করতে। অনেক আত্মীয়-স্বজন দ্বিতীয় বিয়ে করতে বলেছে আমাকে, রাজী হইনি কখনও। নিজের জীবনের ভার নিজেই বয়ে চলেছি ৪৭ বছর ধরে।”
বলেছিলেন হাজেরা বেগম। যিনি জীবন যুদ্ধে আজ ক্লান্ত। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, কিডনীতে পাথরসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগে এখন মৃত্যুর অপেক্ষায় আছেন। তিনি এসেছেন স্বামীর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়ার স্বীকৃতি আদায়ে। কিন্তু শরীরে আর কুলায় না। তাই বসেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। ক্লান্তময় জীবনে সামান্য প্রশান্তি খুঁজতে এসে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে একটু ঝিমিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
১৯৭১ সাল, ০৯ ডিসেম্বর। স্বামী পুলিশ কনস্টেবল আঃ সাত্তার। কর্মরত কুষ্টিয়া থানায়। পাক বাহিনীর আক্রমনে নিজেদের থানা রক্ষা করতে ব্যাংকারে আরও দুই মুক্তিযোদ্ধাসহ থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। পাক বাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় ব্যাংকারে থাকা তিনজন মুক্তিযোদ্ধার বুক। তারপর যুদ্ধ শেষে তাদের তিনজনকেই সেই ব্যাংকারের মধ্যে রেখেই দেয়া হয় চাঁপা মাটি।
হাজেরা বেগমের গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ট হয়ে কখনও দেখতে পায়নি তার বাবাকে। চরম অভাব আর কষ্টের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কনস্টেবল আঃ সাত্তারের স্ত্রী দুই কন্যা সন্তান নিয়ে ৪৭ বছর ধরে স্বামীর স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ বিভাগ থেকে পাননি কোন পেনশন সুবিধা বা পাননি মুক্তিযোদ্ধার কোন স্বীকৃতি। সরকারীভাবে পাননি কোন সুযোগ সুবিধা। জীবনের শেষ বেলায় এসেও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বামীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে ঘুরছেন বিভিন্ন দ্বারে।
ঔষুধ খাওয়ার টাকা নেই, ডাক্তার দেখানোর ফি নেই, তিন বেলা পেট পুরে খাবার খাওয়ার সামর্থ নেই এই বৃদ্ধা মহিলার। “স্বামী মরে বেঁচেছে, আর আমি বেঁচে আছি অর্ধমৃত অবস্থায়”। বললেন এই অসহায় বৃদ্ধা। আমরা কি শুধু দেখেই যাবো এমন অসহায় মানুষের চোখের জল? নাকি আমাদেরও কিছু করার আছে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতেই এই অসহায় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর সম্মান ও অধিকার এবং নিশ্চয়তা মিলবে।