২১ আগষ্টের ঘৃণ্য ও ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ডের ১৪ বছর পর ধারাবাহিক আইনের শাসন ও বিচারের চর্চায় রায় ঘোষনার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে আরেকটি মাইল ফলক। সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচারের মাধ্যমে; তারপর জেল হত্যা (জাতীয় চার নেতা) এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ও বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। দেশে যে বিচারহীনতা এবং আইনের শাসনের অভাব বা দূরবস্থা বিরাজমান ছিল তার অবসান ঘটিয়ে এখন একটি পক্রিয়ার মাধ্যমে ধারাবাহিক চর্চাটুকু দৃশ্যমান রয়েছে। তবে দীর্ঘ সময় পার হয়ে এসে একটি সমাপ্তির প্রক্রিয়া জাতি প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছে। আশা করি এই চলমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অচিরেই দীর্ঘসূত্রীতা দূরীভূত হবে বলে আমার মত আশাবাদী সকল মানুষেরই বিশ্বাস।
বিচার প্রক্রিয়ার শেষে সবাই যে খুশী বা সন্তুষ্ট হবে তা কিন্তু নয়; বরং পক্ষে এবং বিপক্ষে অবস্থান সবসময় ছিল এবং থাকবে। কিন্তু দেখার বিষয় হলো বিচারে অন্তত ঐ ঘৃণ্য সুপরিকল্পিত ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডে মানুষের অংশগ্রহন কমানো এবং জনসম্মুখ্যে এর নেতিবাচকতা প্রকাশ ও সচেতনতা এমনকি বিচারের মাধ্যমে আগামী দিনে এই ধরণের হীণ কুকর্ম বন্ধের একটি সুচিন্তিত দিকনির্দেশনা বা নজির জাতির সামনে দৃশ্যমান আছে কিনা। এর ফলে আগামী দিনে ঐ ধরণের ষড়যন্ত্রের জাল বোনা এবং বাস্তবায়নে এই রায়গুলি প্রাচীর বা বাধা অথবা দেয়াল হিসেবে সুরক্ষা কবজের ন্যায় ব্যবহৃত হবে কিনা। তবে পাপ বাপকেও ছাড়েনা। এই কথাটি সত্য এবং পাপি যত শক্তিশালীই হউক না কেন তাকে শাস্তি পেতেই হবে। তবে পৃথিবীতে যদিও কোন কারণে মাফ বা পরিত্রান পেয়ে যায় কিন্তু শেষ বিচারের দিনে তার প্রাপ্য শাস্তি পাবেই। বর্তমান অবস্থায় যা উপলব্দি ও অনুধাবন এবং বোঝা যাচ্ছে তা হলো এই যে, অন্যায় করে আর পার পাওয়া যাবে না। পৃথিবীতে জীবদ্ধশায়ই এর সাজা ভোগ করতে হবে। এটাই এখন নিয়তির নিয়মে রূপান্তরিত হচ্ছে।
আসা যাক সদ্য প্রকাশিত রায়ে সন্তুষ্টির/ তৃপ্তির পাশাপাশি অসন্তুষ্টির কথামালার সঙ্গে আবার প্রত্যাখান শব্দগুলি মিলে যাচ্ছে। তবে বিএনপি বা এর সমমনা দলগুলোতো এই রায় মেনে নিতে পারে না। কারণ এই হত্যাযঞ্জ যেহেতু প্রমানিত হয়েছে বিএনপি দ্বারা সংঘটিত এবং কুটবুদ্ধী ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির উর্বর বিকৃত মস্তিঙ্কের ফসল; সেহেতু সংগত কারণেই এই রায়ে সন্তুষ্টি বা মেনে নেয়া ঐ দলটির পক্ষে সম্ভব নয়। তবে মনে বা আত্মার দিকে যদি ফিরে তাকানোর সুযোগ পায় তাহলে নিরবে মেনে নিবে এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থার উপর মনের অজান্তে শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হবে। এই ২১ আগষ্টের ঘটনার এমন কোন প্রমান নেই অথবা সুযোগ নেই যে, বিএনপি বা এর অংগসংগঠনগুলো রেহাই পেতে পারে। বরং সর্বাঙ্গে ব্যাথা ঔষধ দিব কোথা এর সঙ্গে মিল রেখে প্রত্যাখান বাক্যের অবতারনা করা ছাড়া বিএনপির কোন বিকল্প নেই বর্তমানে। হ্যা তবে যদি ইতিবাচক রাজনীতির সঙ্গে বিএনপি যুক্ত হয়ে আগামীর জন্য কিছু শিক্ষনীয় এবং দৃষ্টান্তনির্ভর স্বচ্ছ পরিকল্পনা প্রকাশ করতো তাহলে হয়তো এই রায় মেনে নিয়ে আইনি মোকাবেলার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে নমনিয় মনোভাব প্রকাশ করতে পারতো। এই রায় মেনে আবোল-তাবোল না বকে বরং দল হিসেবে বিএনপির দায় মোচনেরও একটি সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। জনগণ নির্ভরতায় শুন্যের কোটায় পৌঁছার এটিও একটি কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
যাদের ফাসি হয়েছে এবং যাদের যাবৎজীবন সাজা হয়েছে তাদের কেউই ধোয়া তুলসিপাতা নয় বরং চৌদ্দকোটি শয়তানের দাদার দাদা সেজে নিজেদেরকে শয়তানীতে এখও নিমজ্জিত রেখেছে। সুতরাং এই রায়ে যারা খুশী হয়েছে আর যারা হতাশ হয়েছে এবং যারা আরো সাজা কামনা করে কোন ব্যক্তির যাবজ্জ্বীন এর স্থলে ফাসী আশা করে তারা সবাই কিন্তু সাধারণ মানুষ। আর সাধারণ মানুষ এবং আইন ও যুক্তি এমনকি বিচার ও বিশ্লেষণ না করেই মাঠে ময়দানে, যেখানে সুযোগ হচ্ছে সেখানেই ফাকা বুলি আওড়াচ্ছে। সুতরাং কারো কথা না শুনে বিচারকের বিচার এবং যুক্তি ও ব্যাখ্যা এমনকি স্বাক্ষ্য প্রমানাদি সংগ্রহ করে পড়–ন ও নিজের বুদ্ধি বিবেচনার সহিত বিশ্লেষণ করে নিজের মতামত ব্যক্ত করুন। রায়কে সাধুবাদ জানিয়ে বিচারিক আদালতকে উৎসাহিক করুন যেন প্রতিটি মামলার বিচার ও রায় প্রকাশিত এবং কার্যকর হয়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধশীল হলে আইনিভাবে সকলকিছু মোকাবেলা করতে পারেন এবং সর্বশেষ আশ্রয়টুকু অবলম্বন করে আইনের শেষ দেখুন। আশাকরি একটি একটি করে সকলেই সুফল ভোগ করতে পারবেন।
নিজের মেধা ও বিবেক বোধ বিকৃত করে বা বিলুপ্ত কওে অন্যের উকালতি করতে যেয়ে নিজের শেষটুকু আর বিসর্জন দিয়েন না। এমনিতেই আমাদের অবশিষ্টাংশ খুবই সীমিত। জনগণকে জিম্মী করে কোন পরিকল্পনা গ্রহন থেকে বিরত থাকুন। কারণ জনগণ এখন স্বচ্ছতা ও জবাবদীহিতা এবং ইতিবাচক রাজনীতি দেখতে চায়। কারো হুমকী ও ধমকীতে জনগণ আর আগের মত বিচলিত হয় না এমনকি কারো মায়াকান্নায় জনগণ এখন আর কাতর হয়ে আবেগী আচরণ দিয়ে জনঅসন্তোষ অথবা ধ্বংসাত্মক কাজে নেমে পড়েন না। কারো ব্যক্তি স্বার্থ অথবা কোন ব্যক্তির অন্যায়, দুষ্টমি এমনকি ঘৃণ্য কাজের দায়ভার বহন করেন না বরং এর বিপরীতটুকুই করে থাকেন। সুতরাং এই রায় নিয়ে আর নেতিবাচক বক্তব্য বা দুদল্যমান কথাবার্তা বন্ধ করুন।
জনগণ ও ভোক্তভোগীরা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে এবং সাধারণ মানুষ এই রায়ের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সুতরাং সময় থাকতে সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে শিখুন ও এর চর্চা করুন। সকলের অন্তজ্বালা বন্ধ করুন এবং ফাকা মাঠে বুলি আওড়াতে আওড়াতে দিন যাপন বা সময় পার করার সময় শেষ; এখন কাজ, চিন্তা ও এর বাস্তবায়নের সমন্বয় সাধনই গুরুত্বপূর্ণ। এই রায় নিয়ে উচ্চসীতও হওয়ার কিছু নেই বরং ধৈর্য্যধরে অপেক্ষা করতে হবে যেন রায় বাস্তবায়িত হয়। টিভিতে গঠনমূলক কিছু অনুষ্ঠান তৈরীতে মনোনিবেশ করতে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি এবং আক্রমনাত্মক ভাবে অহেতুক এই রায় নিয়ে কোন অনুষ্ঠান না করাই ভাল কারণ এই রায়ের পক্ষে ও বিপক্ষে কিছু বলে অথবা না বলে কোন ফায়দা হাছিল হবে না; কারন বিচারিক বিষয় আইনি মোকাবেলায়ই ফয়সালা হওয়া দরকার। যাতে আইনের প্রতি এবং বিচারকের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এখানে যেসকল অনুষ্ঠান দেখানো হচ্ছে তার থেকে জাতি বিভক্তি হওয়া ছারা আর কোন উপকারে উপকারী হচ্ছে বলে মনে হয় না। আশা করি অর্থ কামানোর হাতিয়ার হিসেবে এইসকল জাতিয় অর্জন এবং বিচারিক বিষয়গুলোকে ব্যতিরেখে অনুষ্ঠান তৈরীতে মনোনিবেশ করার এখনই সময়। নতুবা অন্তজ্বালার ঘূর্ণায়মান ঘুর্নীবার্তায় হিতে বিপরীতই হবে।