ক্ষমতা এবং দেশ সেবা

Vector-Smart-Objectক্ষমতা এবং দেশ সেবা এই শব্দদুটি এখন দৃশ্যত বিপরীতমূখী। এই শব্দদুটিকে একত্রিত করে কিছু বলা এবং লিখার সুযোগ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে। ক্ষমতাকে পাওয়ার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে। কিন্তু ক্ষমতা পাওয়ার পর আরো কতকিছুই না করে নিজেকে ক্ষমতাসীন রেখে নিজের এবং নিজের লোকদের ক্ষমতার বাহাদুরী প্রদর্শন এবং এই ক্ষমতার আবরণে সকলকিছু ভোগ দখল এমনকি করায়ত্ত্ব করার শেষ চেষ্টাটুকু চালিয়ে যেখানে সম্ভব নয় সেখানে পেরেক ঠুকে দিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। আমারা ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতার বাইরে দৃষ্টান্তবহুল অনেককেই দেখেছি এবং ক্ষমতার বাইরে থেকে বঙ্গবন্ধু যা করেছেন তার লেশমাত্রও করতে পারেননি অনেকেই ক্ষমতার মসনদে থেকে। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশাই ক্ষমতা এবং ক্ষমতার বাইরে থেকে যা করেছিলেন এবং আগামীর জন্য রেখেছিলেন তার বাস্তবায়ন যদি হতো তাহলে আজ আর ক্ষমতা নিয়ে এত ষড়যন্ত্রের মহড়া হতো না বরং মানুষ দেশ সেবার মহড়াই নিজেদেরকে প্রতিনিয়ত নিয়োজিত রাখত।
বর্তমানে আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কত কিই না দেখছি। ঐক্য অনেক্য এবং ষড়যন্ত্র। কি নিমর্ম এই মহড়া এবং পথচলা। এই ক্ষমতার মোহে এখন অন্ধ হয়ে বসেছেন আমাদের জাতির বিবেকখ্যাত মানুষগুলোও। কিন্তু বর্তমানে কাকের বুদ্ধি প্রদর্শনে যে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তার হিসেব নিকেশ কি কেউ কষছেন; না কষছেন না বরং দুর্বার গতিতে দুর্নামের ঝান্ডা হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্চেন। এক্য প্রক্রিয়ার থলের বিড়াল বেড় হয়ে আসার পর এখন ঐ ঐক্যের রথি এবং মহারথিরাই দ্বিধাবিভক্ত এবং বিভিন্ন দন্ধে আচ্ছন্ন। এতে করে জনগনের সুবিধা হয়েছে তাদের মনোবাসনা এবং খায়েস জানার এমনকি তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করার অনেক সুনির্দ্দিষ্ট কারণের জন্য। এই দ্বন্ধের রেশ এখন ঢাকা থেকে সিলেটেও গিয়ে পৌঁছেছে মাত্র। তবে এর অগ্রসরতা যেন বেশীদূর না যায় তার জন্য সরকারকে সহযোগীতা করে যাচ্ছে এই ঐক্য এবং অনৈক্য সৃষ্টিকারীরাই। সরকার তার অবস্থান থেকে ঐ ঐক্য এবং অনৈক্যের জ¦ালা ও যন্ত্রনা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে মাত্র। তবে মাত্রাতিরিক্ত কোনকিছুই ভাল নয় এই কথা মনে রেখে শত্রুকে ছোট না ভেবে সুকৌশলে এগুলো মোকাবেলা করা সরকারের জন্য মঙ্গলই বয়ে আনবে। তবে কথার ফুলঝুড়ি এবং অতিরঞ্জিত যেন কিছু না হয় সেইদিকে খেয়াল রাখা আবর্শ্যকীয়।
ক্ষমতা হতে পারতো দেশ সেবার একটি হাতিয়ার বা অঙ্গ। কিন্তু কালের পরিক্রমাই দেখা যাচ্ছে কোন কোন সময় হয়েছেও আবার বেশীর ভাগ সময় হয়েছে বিপরীতমুখী। তাই ক্ষমতাকে সেবার হাতিয়ার বা অঙ্গ হিসেবে ব্যবহারের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হউক। আমাদের বিরোধী শিবীরে বা ক্ষমতাঅন্ধ মানুষগুলোর জীবনে ফিরে আসুক দেশ সেবার মানবিক মানুষীকতা এবং সৃষ্টিকর্তার সেবার ব্রতী ও সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত গুণ, জ্ঞান, ক্ষমা, ভালবাসা। দেশসেবায় যারা রয়েছে তাদেরকে কিভাবে সহযোগীতা করে দেশ সেবা করা যায় সেই দিকে মনোনিবেশ করাটা বর্তমান সময়ের অন্যতম দাবী। কারণ দেশবাসী আর কোন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এমনকি অস্থিতিশীল অরাজগ পরিস্থিতি চায় না। বরং চায় উন্নয়ন ধারাবাহিকতা এবং শান্তি, সহাবস্থান ও স্থিতিশীলতা। তাই সরকারের ভালদিকগুলির প্রশংসা এবং যেদিকগুলি নিয়ে জনমনে এমনকি কারো ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে বা ভবিষ্যতে হতে পারে সেই দিকগুলিকে গঠনমূলক ইতিবাচক পরিবর্তন ও পরিমার্জনে ভূমিকা রাখার মাধ্যমে দেশ সেবায় মনোনিবেশ করাটাই এখন সময়ের অন্যতম দাবি।
নিজেকে ক্ষমতার বাইরে রেখে উজার করে দেশ সেবার কাজ স্ব স্ব অবস্থান থেকে চালিয়ে গেলে হয়ত সৃষ্টিকর্তা এবং দেশবাসীর পক্ষ থেকে একটি রিওয়ার্ড আসবে যা ক্ষমতার মসনদে বসে আরো গভীরভাবে সেবার দায়িত্ব পালন করা যায়। সেই সুযোগ গ্রহণ করার মানসিকতায় আমরা প্রস্তুতি নিই আগামীর প্রয়োজনে। রাজনীতির নোংরা খেলায় না মেতে বরং রাজনীতিকে জনগণের কাছে আরো স্বচ্ছকরে গুরুত্বের ও মর্যাদার আসনে আসীন করানোর সময় এখনই। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজনামচা থেকে এই শিক্ষাই আমাদের অগ্রসর হওয়ার তাগিদ দেয়। ক্ষমতা নয় এমনকি ক্ষমতার চেয়ারও নয় বরং ক্ষমতার বাইরে থেকে ক্ষমতাকে দেশ সেবার অঙ্গ হিসেবে সু প্রতিষ্ঠিত করি। কে ক্ষমতায় বা কে সেবকের ভুমিকায় তার বিচার না করে বরং ক্ষমতা ও সেবা এই দুটিকে একত্রিত করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ক্ষমতা ও সেবাকে একত্রিত করে ব্যবহার করি।
ক্ষমতা ও সেবার মধ্যে ভারসাম্য বা ঐক্যের মেলবন্ধন স্থাপন করি। ন্যায়ের দন্ড এবং সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতা ও সেবাকে অনুসরণ করি যাতে করে আমরা আশরাফুল মাকলুকাত হিসেবে আমাদের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারি। আর বিভেদ নয় বরং যারা বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন ব্যানারে তাদেরকে একত্রিত করি এবং অবিচ্ছিন্ন না রেখে সেবা এবং ক্ষমতার যোগসূত্রে গেঁথে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কে প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট অথবা আগামীতে কে হচ্ছেন বা হবেন সেই ভাবনায় না গিয়ে দেশ যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রত্যেকে নিজেদেরকে নিয়োজিত করি। যারা এই অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাদেরকে সহায়তা করাই হলো ক্ষমতার স্বাদ এবং সেবার আনন্দ উপভোগ করার সামিল; পাশাপাশি নিজের বিবেকের কাছে আত্মতৃপ্তি নিয়ে পরিচ্ছন্ন থাকার একটি ব্যবস্থাও।
যারা ক্ষমতায় থেকে সেবকের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তাদেরও আরো সহনশীল হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ছুটে বেড়ানো লোকদেরকে একত্রিত করার দায়িত্ব রয়েছে। যেহেতু রাখাল হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সেহেতু সকলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রচেষ্টাও আপনাদেরকেই করতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে, ধৈয্য ও সহ্য করে এগিয়ে যেতে হবে। অবুঝ ও বেবুঝদের অথবা বুলবুঝা লোকদের ভ্রান্তি দূর করে সেবার দায়িত্বে অংশীদ্বার করাতে হবে। সকলে মিলেই বাংলাদেশ এবং সকলে মিলেই উন্নয়ন। সামনে নির্বাচন তাই এই নির্বাচন হউক উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতার এবং ক্রমন্নোতির শিখরের নির্ভরযোগ্যতার নিশ্চয়তা। আর পিছনে ফেরর সময় নেই এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে সাতার কাটারও সময় শেষ। তাই ক্ষমতা নিয়ে চিৎকার চেচামেছি এবং নেতিবাচকতা থেকে বের হয়ে নতুন আঙ্গীকে নতুন ইতিহাসের সামনে নিজেকে দাঁড় করার সময় এখন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.