চপল, বৃটেন থেকে॥ ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলাসহ ১৭টি মামলার অভিযুক্ত আসামী হিসেবে চিকিৎসার নামে লন্ডনে পলাতক আছেন বিএনপির প্রধান নীতিনির্ধারক তারেক রহমান। তারেক একাধিক মামলায় আদালতের রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে দন্ডিত আসামী।
সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বাংলাদেশী এবং ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় বেশ কিছুদিন সরগরম ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। সরকারের পক্ষ থেকে পাসপোর্ট জমা দিয়ে তারেক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছে বলা হয়েছিল। বিএনপি সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তারেকের পাসপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে।
তারেক রহমান ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য ৬ মাসের ভিসা নিয়ে লন্ডন যান। কিন্তু বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে দেশে ফেরা থেকে বিরত থাকেন তিনি।
ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ব্রিটেনে অবস্থানের দুইটি উপায় আছে। একটি হল সেদেশের নাগরিকত্ব অর্জন করে থাকা, অন্যটি হল উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে থাকা। তবে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য পাসপোর্ট ব্রিটিশ সরকারের কাছে সমর্পণ করে আবেদন করতে হয়।
প্রায় ১০ বছর আগে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারেক রহমান কোন উপায়ে লন্ডন অবস্থান করছেন? যেহেতু বিএনপির পক্ষ থেকে তারেকের পাসপোর্ট সমর্পণ এর ব্যাপারটি অস্বীকার করা হয়েছে সেহেতু তারেকের রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসে- তারেক কি তবে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন?
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পলাতক তারেক রহমান ব্রিটেনের কোম্পানি হাউসে দেওয়া ব্যক্তিগত তথ্য বিবরণীতে নিজেকে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করেন। কোম্পানি হাউসের ওয়েবসাইটে হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কনসালট্যান্ট লিমিটেড (ব্রিটিশ কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন নম্বর-০৯৬৬৫৭৫০) নামের একটি নতুন কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে তারেক রহমান নিযুক্ত হন ২০১৫ সালের জুলাই মাসে। এই কোম্পানির অর্ধেক মালিকানা তারেকের নামে এবং বাকি অর্ধেক তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের নামে।
উল্লেখিত তথ্য থেকে পরিষ্কার যে, তারেক রহমান রাজনৈতিক আশ্রয় নয় বরং ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়েই লন্ডনে অবস্থান করছেন। তারেকের ব্রিটিশ নাগরিকত্বের বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হওয়া যায় সম্প্রতি লন্ডন বিএনপির দায়িত্বশীল এবং সিনিয়র একজন নেতার বক্তব্য থেকে। ঐ নেতা বলেন, ‘তারেক জিয়াকে সরকার আর দেশে ফেরত নিতে পারবে না। তিনি এখন ব্রিটিশ নাগরিক। নিজের নাগরিকের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকারের।’
ব্রিটিশ আইনে বিদেশীদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পাওয়ার অন্যতম এবং প্রায় একমাত্র উপায় হচ্ছে ব্রিটিশ কাউকে বিয়ে করে নাগরিকত্ব অর্জন করা। যুক্তরাজ্যে ঞবসঢ়ড়ৎধৎু সধৎৎরধমব বহুল প্রচলিত। অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধী অপরাধে দন্ডিত চৌধুরী মইনুদ্দিনদের সহায়তায় তারেক এই বিয়ে সম্পন্ন করে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অর্জন করে। নিজের স্ত্রীকে না জানিয়ে, দেশে আসা ঠেকাতে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেই তারেকের এই গোপন বিয়ে বলে নিশ্চিত করেছেন খোদ বিএনপিরই লন্ডনস্থ নেতা কর্মীরা। অপরাজনীতির খোলস হিসেবেই যেন এখন নিজের থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারেক রহমান।