নজরুল, কক্সবাজার প্রতিনিধি॥ বহুল প্রতীক্ষিত সম্ভাবনাময়ী বাংলাদেশ-মিয়ানমার চার লেনের মৈত্রী সড়ক ক্রমে দৃশ্যমান হয়েছে। এ সড়কটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সড়কটি নির্মাণকাজ শেষ হলে অর্থনৈতিক করিডরের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা। দুই কিলোমিটার দৈঘ্যের চার লেনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত দুই দেশের মধ্যকার মৈত্রী সড়কটি আগামী ২০১৯ সালের শুরুর দিকে উদ্বোধন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে বাংলাদেশ অংশে সড়ক নির্মাণকাজ সম্পন্নের পথে হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা উভয় দেশের মধ্যে চালু করা নিয়ে সংশয় কাটছে না।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমার বা বিসিআইএমের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর বিনির্মাণে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে বাংলাদেশ এ চার দেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, চীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কথা বলা হয়। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ২০১৫ সাল থেকে বিসিআইএমের অর্থনৈতিক করিডর নির্মাণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চার লেনের মৈত্রী সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করে। প্রকল্পের আওতায় ২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের লক্ষ্য ছিল। এর মধ্যে ২৫০ মিটার মিয়ানমার অংশে এবং বাকি এক হাজার ৭০০ মিটার বাংলাদেশ অংশে। বাংলাদেশ অংশের এক হাজার ৭০০ মিটার সড়কের নির্মাণকাজ এরই মধ্যে প্রায় শেষ পর্যায়ে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুরু হওয়া এ মৈত্রী সড়কটির নির্মাণকাজ নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশন-এসডাব্লিউও এসএ অধীন কক্সবাজার-১৬ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটলিয়ন-ইসিবি। উখিয়ার বালুখালী থেকে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের জিরোলাইন পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক বা বর্ডার রোড নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ সড়ক নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্নের পথে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের ঘুমধুম ও মিয়ানমারের তুমব ঢেকিবনিয়া এলাকার ভূমি কাঠামো প্রায় একই ধরনের।
প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার রোড নির্মাণে প্রায় ১২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তিন লাখ ঘনমিটার মাটি ও দেড় লাখ ঘনমিটার বালি ভরাটের প্রাক্কলন রয়েছে। দুই কিলোমিটার ফেক্রিবল পেভমেট নির্মাণের মধ্যে উভয় দেশের সীমানা তুমব খাল পর্যন্ত প্রায় ১০০ মিটার কাজ বাকি রয়েছে। উভয় দেশের জিরোলাইন বিভেদকারী তুমব খালের ওপর ৫৬ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজও বাকি রয়েছে। ২৪ মিটার দৈর্ঘ্যের চারটি কালভার্ট নির্মাণ শেষ হয়েছে। প্রায় ১২২ মিটার সাইড ড্রেন নির্মাণ, ৪০ মিটার আরসিসি রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ, ৫৪ মিটার ব্রিক মেশনারি রিটেনিং ওয়াল নির্মাণকাজও শেষের দিকে। কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, সড়কটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন নির্মাণ ও তদারক করছে। এখানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, সড়কটি প্রাক্কলনের প্রথম দিকে দুই লেনের ডিজাইন করা হলেও পরে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ ও নির্দেশে এটি সংশোধন করে চার লেনে উন্নীত করা হয়। চার লেনের দুপাশে সার্ভিস লেন, ফুটপাতসহ হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধাসংবলিত আধুনিক ডিজাইনের সড়কটি অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ও সময়ও বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।