প্রশান্তি ডেক্স॥ তিনটি নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। প্রথমত: সাংবাদিক সম্মেলনে ডক্টর কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আমি ক্ষমতা চাইনা এমনকি নির্বাচনেও অংশ নিবনা। দ্বিতীয়ত: ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ফোনালাপ ফাস যেখানে তিনি দম্ভ ভরে বলছেন, ঐ মহিলা সাংবাদিকের (মাসুদা ভাট্টি) পক্ষে মাত্র ৫% মানুষ, আমার পক্ষে আছে ৯৫%। তাছাড়া তারেক রহমানের নেতৃত্ব ধ্বংস করতেই ডক্টর কামাল হোসেনকে আমরা ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে এনেছি’।
তৃতীয়ত: ঐ ফোনালাপ ফাসের কিছুক্ষণ পরেই আসম রবের উত্তরার বাসভবন থেকে গ্রেফতার হোন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। উপরের তিনটি ঘটনা একজন মানুষকে ঘিরে হলেও ঐ তিন ঘটনা বর্তমান রাজনীতির সামগ্রিক চেহারাই আমাদের সম্মুখে উপস্থাপিত করে যা খুবই ভয়ঙ্কর। ২০০৬ সালে মেয়াদ শেষ হলেও ক্ষমতা ছাড়তে গড়িমসি করে তৎকালীন চারদলীয়জোট সরকার। আন্দোলনে রাজপথ উত্তপ্ত করে আওয়ামী লীগ এবং সেই টানাপড়েন কাজে লাগিয়ে ডক্টর কামাল, ব্যারিস্টার মইনুলরা কলকাঠি নাড়তে থাকে। ফলে জাতির কাঁধে চেপে বসে ফখর-মইনের দু’বছরের অনির্বাচিত সেনাশাসন। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ যে মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্তরীন এটি তাঁর (ব্যারিস্টার মইনুল) আমলে দায়েরকৃত মামলা। অথচ কি আশ্চর্য, ব্যারিস্টার মইনুল ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে এখন সেই মামলা থেকেই বেগম জিয়ার মুক্তি দাবি করছেন। তাহলে সেদিন কোন বিবেচনায় এই মামলা হয়েছিল? আর ডক্টর কামাল হোসেন তো মইনুলের চেয়ে আরো এক কাঠি সরেষ, তিনি তো সেদিন রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দুই নেত্রীকেই সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। বিশেষ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন ডক্টর কামালের প্রধান টার্গেট। কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারনে সম্ভব হয়নি। কিন্তু ডক্টর কামাল হাল ছাড়েননি। তিনি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন এবং বিএনপির বর্তমান দৈন্যদশা তাঁকে সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি এটাকে শেখ হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার মোক্ষম সুযোগ বলেই বিবেচনা করছেন। মইনুল, রব, মান্নারা সেই খেলাতেই সামিল এখন।
কেউ উদরপূর্তি করে ভাবে এটাই তৃপ্তি, কেউ অভুক্ত থেকে অন্যকে খাইয়ে ভাবে প্রকৃত শান্তি এখানেই। দৃষ্টিভঙ্গির কত বৈপরীত্য। একই কাজ মানুষ ভেদে একেবারে একশো আশি ডিগ্রী এঙ্গেলে চিন্তা করে। অধিকাংশ রাতেই নন্দিনী তার বরাদ্দের মাছ এনি-মিনিকে খাইয়ে তৃপ্তিবোধ করে। চার টুকরো মাছ, সংসারে সদস্য তিনজন, এনি-মিনি-নন্দিনী। অতএব, এনি-মিনির মাছ এবং নন্দিনীর ভাগ্যে ঝোল। অথচ ওর কোনোই খেদ নেই, বরং পরম তৃপ্তি। রাজনীতিকরা এভাবে ভাবতে ভুলে গেছে। ডক্টর কামাল হোসেন মুখে বলছেন, ক্ষমতা চাইনা কিন্তু অন্তরের চাওয়া কি সত্যিই তাই? তাঁর মতো বিখ্যাত উকিল আইন পেশা ছেড়ে জামায়াত-বিএনপির রাজনীতিতে আসবেন বিনা লাভে? এতো ফেরেশতার চরিত্র ডক্টর কামালের নয়। মহান মুক্তিযদ্ধে বাংলার মানুষ যখন রক্ত দিচ্ছে তখন এই আইনবিদ পাকিস্তানে নিরাপদে স্ব-পেশায় নিবেদিত ছিলেন।
আমি একটা জিনিস বুঝতে পারিনা, কামাল-মান্না-রবেরা নাহয় স্বার্থের কারনে বিএনপির কাঁধে চড়েছে কিন্তু বিএনপি ওদের জায়গা দিল কেন? কামাল গংদের লাভ এই যে, এঁরা বিএনপির টিকেটে এমপি হতে পারবে। তবে বিএনপিরও লাভ আছে বটে, বেগম সাব ও তাঁর কুপুত্রের ঘৃণ্য নেতৃত্ব থেকে আপাতত দলকে রক্ষা। টেলিফোনে মইনুল হোসেন পরিষ্কার করেই বলেছেন, তারেকের নেতৃত্ব ধ্বংস করাই তাঁর ও ডক্টর কামালের উদ্দেশ্য। ভাবুন একবার কি ভয়ানক ছক কামাল-মইনুলের!? এঁদের হাত থেকে দেশ ও মানুষকে রক্ষা করতে হবে।
লেখক : উপ-সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রেস।