প্রশান্তি ডেক্স॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বুদ্ধিজীবী চত্বর ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পশ্চিমে দীর্ঘ ৫২ বছর পর নির্মিত হয়েছে ‘জয় বাংলা’ ভাস্কর্য। এটি উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায়। এ ভাস্কর্য দৃশ্যমান দেখে আনন্দিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এরই প্রতিফলন ঘটিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন অনেকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নিয়াজ মোরশেদ রিপন ভাস্কর্যের সৌন্দর্যের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে লিখেন, নিয়ন আলোয় উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাষ্কর্য ‘জয় বাংলা।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজীব নন্দী ফেইসবুকে লিখেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য নির্মিত হলো। এটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ধন্যবাদ, আমার সরাসরি শিক্ষক ও চবি প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী স্যারকে, যার তদারকিতে সম্ভব হয়েছে এই মহান কাজটি। শিল্পীর নাম সৌরভ জাহান। এর নাম ‘স্বাধীনতা’।’
চবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন সুমন লিখেন, ‘ভাস্কর্য থেকে মানুষের মনে সংগ্রাম ও চেতনার আবির্ভাব ঘটে। এই ভাস্কর্য পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে চেতনার আবির্ভাব ঘটাবে। ধন্যবাদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য স্যার কে’।
এছাড়াও ধন্যবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লিখেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী জোবায়ের চৌধুরীও। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ভাস্কর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহরাব জাহান প্রণীত নকশার ভাস্কর্য ‘জয় বাংলা’।
জানা যায়, ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ এর আন্দোলন-সংগ্রামে মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি রক্ষার জন্য যারা নিজেদের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন, ইতিহাসের এসব দামাল শহীদদের স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অপরাজেয় বাংলা’, ‘স্বাধীন বাংলা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্ফুলিঙ্গ’, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গুচ্ছ ভাস্কর্য ’৭১ এর গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধেও প্রস্তুতি’সহ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের বিভিন্ন স্পটে ভাস্কর্যের দেদীপ্যমান উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। কিন্তু দেশের অন্যতম বৃহত্তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চবিতে স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও জাতীয় কোনো স্মারক ছিল না। অবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্মাণ করেছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য ‘জয় বাংলা’।
মূল বেদীসহ নির্মিতব্য ভাস্কর্যটির উচ্চতা ২০ ফুট, প্রস্থ ১৮ ফুট। এর মধ্যে উপরের স্তরে তিন মুক্তিযোদ্ধার উচ্চতা ১১ ফুট এবং নিচের স্তরে প্রতিটি মানব অবয়বের উচ্চতা সাড়ে ৫ থেকে ৬ ফুট। প্রকল্পটির নির্মাণে ব্যয় ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে চবির নিজস্ব তহবিল থেকে ১০ লাখ ও বাকি ১০ লাখ টাকা ব্যক্তি অনুদান।
ভাস্কর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহরাব জাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় এটি উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। লাইভ কাস্টিং মেথডে তৈরি করা হয়েছে এ ভাস্কর্যটি। যা বাংলাদেশে প্রথম। ধূসর রঙের আন্তরণে মার্বেল ডাস্ট ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে রোদ বৃষ্টিতেও ভাস্কর্য মলিন হবে না। এই ভাস্কযের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের প্রত্যক্ষ ও সমান অংশগ্রহণ বুঝানো হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়িদের ভূমিকাও উপজাতি এক নারীর অবয়বে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, চটগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬ সালের নভেম্বরে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আগেও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ‘আমরা চবিয়ান’ শীর্ষক ব্যানারে ৫২ থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত স্বাধিকার আদায় ও স্বাধীনতা সংগ্রামে গণমানুষের অংশগ্রহণের স্মৃতিস্বরূপ ক্যাম্পাসে ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি তোলেন।