জেলখানার দিনগুলি

jailhanar-dingolo-1[1]চলমান…
এবার আসা যাক গালী সর্ম্পকে একটু ধারনা নেয়ার। প্রত্যেকের মুখে কোন ভাল কথা নেই। আছে শুধু মা বোনকে নিয়ে খারাপ গালী; গালী হল অতি সাধারন রুটিন মাফিক ব্যাপার। আর ঐ রুটিনমাফিক গালী ও চিৎকার চ্চোমিচি শুনতে শুনতে প্রায় পাগলপ্রায় হয়ে গেলাম। গালি ছাড়াও আরও খিস্তি, খেইর এবং বিশ্রি গান শুনতে শুনতে প্রায় অর্ধমৃত বা জীবন্ত লাশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ অথবা রুপ লাভ করলাম। আমি অনুভব কয়লাম পিপড়ারও ক্ষমতা আছে এই জেলে কিন্তু আমার কোন ক্ষমতা নেই। এই জেলে কিন্তু আমার নয় কোন মানুষেরই বিন্দুমাত্র ক্ষমতা নেই। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ভিষম চিন্তার মাঝে এই জেল যন্ত্রনা আর সহ্য করতে পারি নাই। দম বন্দ হয়ে আসার উপক্রম। জেলের নিয়ম হল সব বন্দিই সমান। কোন শ্রেণীভেদ নেই। শুধু অর্থের মাপকাঠিতে শ্রেনীভেদ তৈরি হয়। জেলখানার বালিগুলোও পয়সার জন্য খাঁ খাঁ করে তাকিয়ে থাকে। পিসিতে টাকার নিয়ম আছে কিন্তু নগদ টাকার নিয়ম নেই। তবে নগদ টাকা রমরমা ব্যবসা বিরাজমান। পিসির দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেশী তাই ধনীক শ্রেণীর জন্য নগদ টাকায় লেনদেন করতে সাশ্রয়ী হয়। পরিচয় হলো এশিয়ান টিভির পরিচালক, ব্যাংকার, বুয়েট প্রফেসর, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, ব্যারিষ্টার, বি এন পির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাসহ, জামাত নেতা ও আমরী এবং বিখ্যাত সন্ত্রাসীদেও সঙ্গে। আসলাম ভাই, বিপ্লব ভাই, আকতার ভাই, খালেদ ভাইসহ আরো নামকরা অতি পরিচিতি অনেকের সঙ্গে।
সন্তান ও পরিবার এবং অফিস নিয়ে চিন্তা করতে করতে প্রায় মৃত্যুর দুয়ারে গিয়ে ঠেকলাম। একদিন হঠাৎ ষ্টোক করে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে খোদার কৃপায় অক্ষত অবস্থায় জীবন ফিরে পায় এবং ওয়ার্ডের লোকদের সেবার চেতনা পাই এমনকি ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠি। অফিস ও বাড়ির লোকদের সহযোগীতায় হাসপাতালে ভর্তি হয় ভাল চিকিৎসার আশায়। কিন্তু সবই মিথ্যা ও গুড়েবালি। ঔষধতো দুরের কথা ডাক্তারের সাক্ষ্যাৎ—ই পাইনি। খোদার উপর ভরসা নিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকি এবং হাসপাতাল নামক একধরনের বিছানা ব্যবসা আবিষ্কার করি। এখানে এসে পরিচয় হয় অভিজিত হত্যা মামলার আসামী নাহিদের সঙ্গে। লক্ষীপুরের আলোচিত বিল্পব ভাইয়ের সঙ্গে। মোট কথা জেলখানার অভ্যন্তরে যা ঘটে তা টপ টু বটম মিলেই করে থাকে। বিশেষ করে সুবেধার সাহেবগন, হেড রাইটার এবং ম্যাটগন ঐ কেনা বেচা ব্যবসার সাথে জড়িত। শুধু তাই নয় এই ব্যবসায় যা আয় হয় তা বাটোয়ারা করে সকলে মিলেমিশে খায়।
আরো দেখলাম এবং উপলব্ধি করলাম জেলখানায় এসে কারো রকম অনুশোচনা নেই। বরং কৃতকর্মের ব্যাপ্তি আরো বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখে। কি ভাবে প্রতিশোধ নেয়া যায় সেই চিন্তা ও পরিকল্পনা আটে। অনেকে এই জেল জীবনকে খুবই দাম্বিক (গর্বের) এবং আনন্দের মনে করে। অনেকের কাছে এইটা কোন বিষয়ই না। অনেক নিরীহ মানুষ চক্রান্তের ফাঁদ আটকে আছে এই নিষ্প্রাণ জেলে। আবার অনেকে বিপদের জন্য স্বইচ্ছায় এই কারাবরন গ্রহন করেছে। বেশীর ভাগ আসামী মাদক (৮০%) বাকী যৌতুক নারী ও শিশু। চেক ও বন্ড চিটারী; জমিজামা; রাজনৈতিক ব্যাংক জালিয়াতি সহ খুন ধর্ষণ ইত্যাদি (২০%) পার্সেন হবে। জেল জীবনের অল্প কয়টি দিনে আমি শিখলাম ক্ষমা করা এবং অনুশোচনা করা। পুর্বের কৃতকর্মের দায় দেনা ও দোষ ক্রটি খঁজে বের করা এবং ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছি এখন শুধু ঐ ব্যক্তিদের কাছে ক্ষমা চাওয়াই আমার শিক্ষার মুল বিষয়। যেমন আমার স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়া কারন তাকে যতেষ্ঠ সময় ও গুরুত্ব দেয়নি বা দিয়ে ফোন পযন্ত রিসিভ করা হয় নাই; কারন ছিল কাজ আর কাজ। সন্তানদের কাছে ক্ষমা চাওয়া কারন যথেষ্ঠ সময় তাদেরও দিতে না পারা। অফিস সহকর্মীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া; মা-বাবা ভাই বোন সকলের কাছে ক্ষমা চাওয়া; শশুর শাশুরীসহ সবার কাছে ক্ষমা চাওয়া । আপা দুলাভাইসহ সবার কাছে ক্ষমা চাওয়া। আরো অনেকের কাছে ক্ষমা চাওয়া এখন আমার ঈমানী দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। আমি আরো শিখেছি নিজেকে নীচু করা এবং ধৈর্য্য ও ক্ষমা এবং ভালবাসার যতœশীল দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করা। মানবিকতা প্রকাশ করা; বিপদে মানুষের পাশে থাকা। সর্বপরী সর্তকতার সহিত শুনা ও কল্যানে কাজ করে যাওয়া। আমার বিরুদ্ধে যারা এই মামলা করেছে তাদেরকে ক্ষমা করা এবং তাদের জন্য দোয়া করা এমনকি তাদের প্রয়োজনে সহযোগীতার হাত প্রসস্থ করা।
…চলমান…

Leave a Reply

Your email address will not be published.