প্রশান্তি প্রতিনিধি॥ পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে প্রভাবশালী ২০ দেশের তালিকায় আসছে বাংলাদেশ। ২০২২-২৩ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যেসব দেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে তার মধ্যে বাংলাদেশ থাকবে। ওই সময় বৈশ্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে এমন শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় ঢুকবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি সেখানে ১শ’ ভাগের ১ ভাগ অবদান রাখবে। ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্লুমবার্গের এক বিশ্নেষণে বাংলাদেশের অর্থনীতির এ সম্ভাবনা উঠে এসেছে।
আইএমএফ বৈশ্বিক অর্থনীতির যে প্রক্ষেপণ প্রকাশ করেছে সেই তথ্যের ভিত্তিতে ব্লুমবার্গ এ বিশ্নেষণ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নতুন চালিকাশক্তির মধ্যে ইরান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ অন্যতম।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২-২৩ সালে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে চীন। চীনের অবদান থাকবে সবচেয়ে বেশি ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এর পরই রয়েছে ভারত। ওই সময়ে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভারতের অবদান দাঁড়াবে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এর পরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষমতাধর এই দেশটির অবদান থাকবে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এর পরই রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। সমুদ্রবেষ্টিত দেশটির অবদান আশা করা হচ্ছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ব্রাজিলের অবদান থাকবে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। জার্মানি ও মেক্সিকোর ১ দশমিক ৭ শতাংশ। ১ দশমিক ৬ শতাংশ করে অবদান রাখবে রাশিয়া ও জাপান। মিসরের অবদানের সম্ভাবনা ১ দশমিক ৫ শতাংশ। ১ দশমিক ৩ শতাংশ অবদান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে তুরস্ক, ফ্রান্স, ফিলিপাইন, যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ কোরিয়ার। ১ শতাংশ করে অবদান থাকবে সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার। এ ছাড়া দশমিক ৯ শতাংশ অবদান রাখবে ভিয়েতনাম। এই ২০টি দেশ থেকে ওই সময়ের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ আসবে বলে মনে করছে ব্লুমবার্গ। অন্য দেশ থেকে আসবে বাকি ২২ দশমিক ২ শতাংশ।
ব্লুমবার্গের বিশ্নেষণে ২০১৮-১৯ সালে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে যে ২০টি দেশ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে তার মধ্যে বাংলাদেশ নেই। চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এ সময়েও প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকবে। আইএমএফ মনে করে, ২০১৮-২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হবে। ২০২১ থেকে ২৩ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল সমকালকে বলেন, দেশের এই সম্ভাবনার কথা সরকার ১০ বছর আগে থেকেই বলে আসছে। ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে এশিয়ান টাইগার। এ দেশের অর্থনীতি আরও অনেক মজবুত হবে, আরও শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তা ২০৫০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কারণ বাংলাদেশের রয়েছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। কর্মক্ষম জনসংখ্যার এই সুফল ২০৬১ সাল পর্যন্ত থাকবে। এ ছাড়া আগে প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা কম ছিল। এখন প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা বেড়েছে। বর্তমানে শিক্ষিত তরুণদের ১০ শতাংশ প্রযুক্তিতে দক্ষতাসম্পন্ন। এখন ইংরেজি শিক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনার দিক থেকেও এগিয়ে। দেশের মানুষও বুদ্ধিদীপ্ত ও পরিশ্রমী। এ ছাড়া এতদিন ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল উত্তর-দক্ষিণ, এখন তা দক্ষিণ-দক্ষিণ হচ্ছে। বিশ্বের বড় অর্থনীতি চীন, ভারত, জাপান, ইন্দোনেশিয়া- সবই এ অঞ্চলের। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এ সুবিধা পাচ্ছে। সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবদান নিয়মিত বাড়তে থাকবে।
বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ওপর তৈরি এ প্রতিবেদনে আইএমএফ বলেছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। আরও কয়েকটি বৈশ্বিক সংস্থার চোখেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অনেক বড় সম্ভাবনা উঠে এসেছে। সম্প্রতি এইচএসবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ যেসব দেশের অর্থনীতির আকার দ্রুত বাড়বে, সেই তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে সবার ওপরে।
এইচএসবিসি বলেছে, বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল ও উদীয়মান ৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি সবচেয়ে বেশি হারে বাড়বে। জিডিপির আকার বিবেচনায় বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৪২তম। ২০৩০ সালে ১৬ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ উঠে আসবে ২৬তম অবস্থানে। ফিলিপাইন, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশকে ২০৩০ সালে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ।