প্রশান্তি নিজস্ব সংবাদদাতা॥ ড. কামাল হোসেনের মন্তব্যকে ঘিরে আইন মন্ত্রীর শ্রদ্ধাভরা উত্তর। কি ছিলো মন্তবে বা দাবীতে: “৭ দফা না মানলে বিচার হবে: কামাল; হচ্ছে টা কী আমাকে বোঝাও: আইনমন্ত্রীকে কামাল”। সংবিধান লঙ্ঘন নিয়ে কামাল হোসেন যা বলেছেন, তার ‘শক্ত জবাব’ থাকলেও তা দিলেন না আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, “আমি কিন্তু বিজ্ঞ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনকে এই ব্যাপারে অনেক শক্তভাবে জবাব দিতে পারতাম, কিন্তু আমার বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভ্যাস নাই। এজন্য আমি করব না। কিন্তু আমি অত্যন্ত সবিনয়ে বলব যে, আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করি না।”
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা কামালের চট্টগ্রামের জনসভায় দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গত রোববার ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের একথা বলেন আনিসুল হক। গত শনিবার কামাল চট্টগ্রামের জনসভায় বলেছিলন, “আমাদের ৭ দফা দাবি না মানলে এটা অমান্য করার জন্য বিচার হবে। ২০১৪ সাল থেকে সংবিধান লঙ্ঘন করার জন্য যে জবাবদিহিতা, সেটাও জনগণ আপনাদের কাছ থেকে আদায় করে ছাড়বে।”
সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়েছেন কামাল। সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আনিসুল হক পাল্টা কামালের বিরুদ্ধেই সংবিধান ‘অস্বীকারের’ অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, “ড. কামাল হোসেন যে কনস্টিটিউশন ড্রাফটিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন, তারা যে সংবিধান দিয়ে গেছেন, তার অনেক কিছুই আজকে ড. কামাল হোসেন অস্বীকার করছেন।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কামাল বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে গঠিত কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তখন তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। দুই যুগ আগে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আলাদা দল গঠন করেন।
গত বৃহস্পতিবার আরেক অনুষ্ঠআনে বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী মইনুল হোসেনকে মানহানির মামলায় গ্রেপ্তার করা নিয়ে আইনমন্ত্রীর কাছে কৈফিয়ত চেয়েছিলেন। সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে কটূক্তির ঘটনায় রংপুরের করা একটি মানহানির মামলায় ঢাকা থেকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সক্রিয় মইনুলকে। কামাল হোসেনের বক্তব্যের জবাবে আনিসুল হক বলেন, মইনুলকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি বলে তিনি মনে করেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বলেন, যদি কারও বিরুদ্ধে কোনো জেলায় মামলা থাকে, কিন্তু আসামিকে যদি অন্য জেলায় হাজির করা হয়, তাহলে যে জেলায় তাকে হাজির করা হয়েছে সেই জেলার বিচারকের কিন্তু তার মামলাটা শোনার অধিকার নাই।
“কারণ হচ্ছে, তার কাছে মামলার নথিটা নাই। সেই কারণে তিনি দুটো কাজ করতে পারেন। প্রথমটা হচ্ছে, তিনি (বিচারক) আসামিকে যে কোর্টে মামলা হয়েছে, সেখানে পাঠিয়ে দিতে পারেন অথবা তিনি (বিচারক) বলতে পারেন মামলার নথি তার কাছে পাঠানোর জন্য।
“এসব ক্ষেত্রে আসামিকে সেই কোর্টে পাঠানোটাই স্বাভাবিক। এখানে বিজ্ঞ বিচারক তার বিচারিক অধিক্ষেত্র এবং অভিজ্ঞতা ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেটি আইনসঙ্গত পদক্ষেপ বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, “বিচার বিভাগ কিন্তু স্বাধীন। আমি প্রসিকিউশনকে আমার নির্দেশনা দিতে পারি। নির্দেশনাটা সবসময়ই আইনানুগ হতে হবে। প্রসিকিউশনের আইনজীবীরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী, আইনে যা আছে সে অনুযায়ী কিন্তু কাজ করবে। এক্ষেত্রে (মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার) তার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।” বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যনালে নতুন যোগ দেওয়া বিচারকদের অরিয়েন্টেশন কোসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাতিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আনিসুল হক। ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও সাবেক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকও ছিলেন।
প্রসঙ্গ-পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘট : জনদুর্ভোগ অবসানে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে গত রোববার সকাল থেকে সারা দেশে ডাকা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট চলছে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, “তারা যে কারণে ধর্মঘট করছেন, সেটা বোধহয় আইনটা সঠিকভাবে না বোঝে করছেন। “সড়ক পরিবহন আইন যেটা হয়েছে আমার মনে হয় সেটা সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য সহায়ক হবে এবং চালকরা যদি সঠিকভাবে গাড়ি চালায়, তাহলে তাদের জন্য সহায়ক হবে। “আইনে এমন কোনো প্রবিশন (বিধান) নেই যে, তারা অন্যায় না করা সত্বেও তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। আমি তাদের আহ্বান জানাব যেন, তারা এই পথ পরিহার করে।’
প্রসঙ্গ-ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, ‘আমার মনে হয় মাননীয় সেতুমন্ত্রী তার বক্তব্যে পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আর অ্যামেন্ডমেন্ট (সংশোধন) হবে না। “আরেকটা কথা আমি সেই সাথে বলতে চাই, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ফ্রিডম অব এক্সপ্রেস, ফ্রিডম অব স্পিচ এবং অন্য কোনো স্বাধীনতায় খর্ব করার জন্য নয়। এটা শুধু সাইবার সিকিউরিটি মেইনটেইন করার জন্য।
সেই ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট যেটা হয়েছে, তাতে ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং বা ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন কোনোটাই ব্যাহত হবে না।” গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) পাস করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “প্রথম কথা হচ্ছে, আগামীকাল মন্ত্রিপরিষদ সভায় এটা যদি অ্যাপ্রুভ হয়ে যায় তাহলে এটাকে নিশ্চয়ই সংসদে পাঠানো হবে। আগামী সংসদ শেষ হবে। সেই ক্ষেত্রে এটা (আরপিও) পাস করানো সম্ভব না। “আগামীকাল মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা চাওয়া হবে, মন্ত্রিপরিষদ যে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারণ এর প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করতে হবে এবং প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করেই এটা পাস করাতে হবে।”