ইদানিং একটি শব্দ মানুষের কান ঝালাপালা করে ছাড়ছে। এই শব্দটি যদিও পুরাতন তবে নতুনভাবে আভির্ভূত হয়েছে ইদানিংকার নব্যছকে। তবে বহুল পরিচিত শব্দটি আজ বহুলাংশে পরাধিন ও পরাভূত। এই শব্দটিকে তাঁর স্ব মহিমায় ফিরিয়ে আনতে হলে আরো কত সময় ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে তার কোন হিসেব এই মুহুর্ত্বে আমার জানা নেই। তবে শব্দটির জন্য মায়া হয়। আরো ব্যাথিত হয় এইভেবে যে, শব্দটিকে কলুষিত করার জন্য কতিপয় স্বার্থান্বেষী মানুষের গোষ্ঠিবদ্ধ ষড়যন্ত্র লোকানো আছে ঐ শব্দটিকে জড়িয়ে। শব্দটির শাব্দিক অর্থও পরিবর্তন হওয়ার উপলক্ষ এবং হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
সংলাপ নিয়ে যারা উচ্ছলিত ও উদ্বেলিত তারা কিন্তু পতিত এবং জাতীর সামনে সকল পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ। তারপরও বলব সংলাপ ছিল এবং আছে ও থাকবে। তবে সংলাপে সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু অর্জন ছিল বা আছে বলে মনে হয় না এমনকি প্রমানও এযাবৎ কালে খুজে পাওয়া যায়নি। সংলাপে সমস্যার সমাধানতো হয়ইনি বরং সমাস্যা আরো ঘনীভূত হয়েছে। সমস্যার বেড়াজালে আবদ্ধ করার সুযোগ তৈরী হয়; মাঝে মাঝে সময় ক্ষেপনও হয় কোন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে।
আমাদের দেশের সংলাপকে যদিও সাধারন মানুষ স্বাগত জানায় এবং প্রয়োজনীয়তা উপলব্দির আদলে বাস্তবে প্রকাশ করার মাধ্যম উপস্থাপন করে; কিন্তু বাস্তবে অতীতের অভিজ্ঞতায় এই সংলাপ নিছক একটি সময় ক্ষেপনের উপলক্ষ মাত্র এমনকি নিজেদেরকে জাহির করার ভিন্ন মাত্রার এক সুযোগ মাত্র। তবে এবারের সংলাপ নিয়ে আমার প্রশ্ন, কিসের সংলাপ, কার সাথে সংলাপ, কেন সংলাপ, কি এমন পরিস্থিতি যে, সংলাপে বসতে হবে? এই সংলাপের উর্বরতা কিন্তু ঝোপঝাড়ে গজিয়ে উঠা আগাছার করুন পরিণতির একটি উপলক্ষ মাত্র।
সংলাপের একটি ইতিবাচকতা হচ্ছে স্বয়ং “প্রধানমন্ত্রী তার দরজা খোলা সকলের জন্য” এই জাতিয় একটি শব্দ উচ্চারণ করেছেন এবং পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সাংবিধানিক পন্থায় এবং সংবিধানসম্মত আলোচনার কথা; যেখানে সকলের ঐক্যমত্যও প্রয়োজন। এখানে নেই কোন দলীয় এবং ব্যক্তিস্বার্থের আয়োজন। আছে শুধু সামষ্টিক এবং জাতীয় স্বার্থের মহড়া। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সংলাপের চমক হলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। তিনি তার উদরতা এবং দূরদর্শীতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ব্যবহারে পারদর্শী যার প্রমান তিনি নিজেই বার বার দিয়েছেন। আজও একটি ঐতিহাসিক প্রমান ও যোগ্যতার সুউচ্চ মাপকাঠি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন এই সংলাপের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী উদার এবং তিনি সকল মঙ্গলের জন্যই ব্যতিব্যস্ত। আর সেই মঙ্গল হলো সার্বিক সুচকে দেশের এবং জনগণের উন্নয়ন। আর এই উন্নয়নের জন্যই আজ সবাই মরিয়া। তবে সেই কাঙ্খিত উন্নয়নের দৃশ্যমান অবস্থা দেখানোর কারিগর খোদ প্রধানমন্ত্রী সংলাপে তাঁর স্বাগত ভাষণে চমক রেখেছেন। সেই চমক থেকে বের হয়ে দ্বিমত পোষণ বা অস্বীকার করে বের হয়ে আসতে পারেননি সংলাপে উপস্থিত কেউ বরং এর সাথে একমতই প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সংলাপের জন্য শুধূ ঐক্যফ্রন্টকেই ডাকেন নাই বরং ডেকেছেন সকল রাজনৈতিক দল এবং মতের মানুষগুলোকে। কারণ তিনি সকলের কথা শুনতে চান এবং সকলকেই সুযোগ দিতে চান দেশের উন্নয়নে শরীক হতে এবং তিনি তার আকাঙ্খার কথাও শোনাতে চান। বঙ্গবন্ধুর কন্য বলেই কথা; যোগ্য উত্তরসূরী হাতে এখন দেশ তাই সকলেই একবাক্যে বলতে এবং স্বীকার করতে আগ্রহী যা ড. কামাল হোসেন সাহেব বলেছেন; “ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের উর্দ্ধে থেকে দেশের /জাতিয় স্বার্থকে প্রাধান্য বা গুরুত্ব দিয়ে সংলাপকে অর্থবহ করতে হবে।” হ্যা তাই হউক, আর ইহাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আকাঙ্খা।
জনাব কামাল সাহেব এই সংলাপে নের্তৃত্ব দিয়েছেন এবং ঐক্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন, যার জন্য ওনার ধন্যবাদ পাওয়া উচিত। আর ঐ সংলাপে জনাব কামাল হোসেন সাহেব সন্তুষ্ট এবং ঐক্য প্রক্রিয়া সাংবিধানিক পন্থায় এগিয়ে নিতে একমত। তাকে ডিঙ্গিয়ে যারা বিভিন্ন কথা বলেছেন সংলাপ নিয়ে তা তাদের ব্যক্তিগত মতামতই বলে অবস্থাদৃষ্টে পরিলক্ষিত হয়। তবে তিনি যে, ঐক্যকে ঐক্যের কাতারে রাখতে পারবেন তার কোন গ্যারান্টি নেই, কারণ ওনার বক্তব্য স্পষ্ট যে, দল এবং ব্যক্তি স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে দেশের জন্য সাংবিধানিক পন্থায় এগিয়ে যাওয়া। সেই জায়গায়ই বিভিন্ন মত ও পথের দন্ধ। আর ঐ দ্বন্ধকে জিইয়ে রেখে ঐক্য ধরে রাখা বর্তমানের জন্য কষ্টকর। বিজ্ঞ ও বয়সের ভাড়ে নূহ্য মানুষটিকে ব্যবহার করে কেউ যেন জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিতে না পারে সেই দিকেও লক্ষ রাখা দরকার।
বিভিন্ন দলছুট এবং অভিভাবকহীন এমনকি দিকহারানো দলগুলির কান্ডারী হিসেবে যে গুরু দায়িত্ব নিয়েছেন জনাব কামাল হোসেন সাহেব তার জন্য দোয়া করি যেন তিনি শেষ বয়সে এসে সবকিছু সামলিয়ে নিয়ে নিজেকে ও ঐ মানুষগুলির চাহিদাকে যুগের প্রয়োজনীয়তার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন। মাঝাপথে এসে যেন থমকে না যান বা রণে ভঙ্গ না করেন। কারন পাগলের সঙ্গে বসবাসতো খুবই কঠিন; যারা গায়ে মানেনা আপনি মোড়ল তাদেরকে সামলানো যে কঠিন তা তিনি ইতোমধ্যেই উপলব্ধিও করতে পেরেছেন বটে। মুখ্য ও পাগলদের সঙ্গে বসবাস কঠিনের মধ্যেও সহজ এবং সাবলিল কিন্তু স্ব শিক্ষীতদের সঙ্গে বসবাস একেবারেই দীর্ঘসময়ের জন্য অসম্ভব। আর তাদের জন্য আমাদের শুভকামনা ও দোয়া অব্যাহত রইল।
সংলাপ যাই হউক বা এর ফলাফল যাই হউক; জাতি কিন্তু এই সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছে। জানিয়েছে উভয়েকই; এইজন্য যে, জাতীয় প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এখানে কোন স্বার্থদ্বন্ধ, গোষ্ঠীদ্বন্ধ, দলীয়দ্বন্ধ এমনকি বৈদেশীক স্বার্থের দ্বন্ধ রাখা উচিত না এমনকি রাখাও যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বার বারই সংলাপের ব্যবস্থা করেছেন এবং এই ব্যবস্থা থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতাই অর্জিত হয়েছে, তাই অন্তত এইবারের সংলাপ থেকে যেন কোন তিক্ত অভিজ্ঞতার ছাপ প্রকাশিত না হউক বরং ইতিবাচক এক দৃষ্টান্ত প্রতিফলিত হউক। ইহাই সমগ্র জাতির আখাঙ্খা ও নিত্যদিনের মোনাজাত।
সামনের দিনগুলিতে আরো যারা সংলাপে অংশগ্রহন করবেন এবং সংলাপ পরবর্তী যে ফল প্রকাশিত হবে তার জন্য আমরা আশাবাদি যে, জনগণের অভিপ্রায় ও জনআকাঙ্খা একমাত্র বিশে^র বিবেক ও মানবতার মা, বাংলাদেশের দৃশ্যমান উন্নয়নের কান্ডারী, বর্তমান সময়ের বাঙ্গালী জাতির অভিভাবক বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার হাত ধরেই আসবে এবং এসেছেও । তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই বরং সামনে আশা ও আকাঙ্খা পুরণের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ায় নিজেকে শরীক করতে প্রস্তুতির সময় এখন। ডান-বাম, উপর-নীচ এই নীতি পরিহার এবং সাম্যের তালে ডিজিটাল নীতির বাস্তবায়নে শরীক হওয়ার সময়। এই যুগের চাহিদাগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে আবেগ এবং ক্ষুদ্র স্বার্থকে জলাঞ্জলী দেয়ার সময় এখন।
দেশের সকল মানুষের জন্যই একটি শিক্ষা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেখানো ইচ্ছা ও পথ। জনাব ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথার উদৃত্তি দিয়ে বলতে চাই যে, “এই সংলাপ আহবানে বা আয়োজনে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের কোন ইচ্ছা বা আকাঙ্খা ছিল না, এটা শুধু প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছা, আর এই কারণে আমরা রাজি হয়েছি।” হ্যা প্রধানমন্ত্রী সকলেরই অভিভাবক এবং সেই অভিভাবকত্তটুকুই তিনি করেছেন। এই দেশ একটি পরিবার আর এই পরিবারকে বিভক্ত করে রেখেছি আমরা বিভিন্ন দল, মত ও পথের অনুসারী হয়ে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দল, মত ও পথের মানুষগুলিও এক এবং তার পরিবারেরই অংশ। তাই তিনি সকলকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চান এবং সকলেরই মঙ্গল ও উন্নয়ন সাধন করতে চান। তিনিতো মা- তাই সংমায়ের ভুমিকা তিনি নিতে পারেন না। এখান থেকেই আমাদের রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নিতে হবে আগামীর রাজনীতির জন্য।
বিচার ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন সবাই কিন্তু এই দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিয়ে স্ব স্ব কাজে মনোনিবেশ করে দেশের সেবার মান ও স্ব স্ব দায়িত্বের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি সাধন করে জনসম্পৃক্ততা ও আস্থা এবং বিশ্বাস সুদৃঢ় করতে পারি। সামনে নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনে স্ব স্ব ভুমিকা যেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষার আলোকে আলোকিত হউক এবং আগামী দিনের সকল ভেদাভেদ এর অবসান ঘটুক। দেশের কল্যাণের জন্য সকলেই মিলেমিশে সামনের দিকে এগিয়ে যাক এই আশাই করি এবং আশাবাদি মানুষ হিসেবে বিশ্বাস করি।