প্রশান্তি ডেক্স রিপোর্ট॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাস্টের নামে কেনা ৪২ কাঠা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। গত সোমবার পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অস্থায়ী আদালতের বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শুরু করে সাড়ে ১২টার দিকে এ রায় ঘোষণা শেষ করেন। মামলার অপর তিন আসামিকেও একই দন্ড দিয়েছেন আদালত।
রায় ঘোষণার আগে আদালত ১৫টি বিষয় বিবেচ্য নিয়ে রায় ঘোষণা করেন। আদালত বলেন, আসামি খালেদা জিয়া সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ভবিষৎতে যেন এ পদে থেকে কেউ এমন অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য এ আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হলো। বিষয়গুলো হলো-
১. আসামি বেগম খালেদা জিয়া ২০০১- থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ‘শহীদ জিউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করেছেন কি না? এবং উক্ত ট্রাস্টের দাপ্তরিক ঠিকানা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ৬, শহীদ মইনুল রোড, ঢাকা সেনানিবাস হিসেবে উল্লেখ করেন কি না?
২. বর্ণিত ট্রাস্টে আসামি বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁর দুই পুত্র ট্রাস্টি ছিলেন কি না?
৩. বর্ণিত ট্রাস্টের নামে আসামি বেগম খালেদা জিয়া ম্যানেজিং ট্রাস্টি হিসেবে সোনালী ব্যাংক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শাখা, ঢাকায় ৯/০১/২০০৫ তালিকে সঞ্চয়ী হিসাব নং ৩৪০৭৬১৬৫ খুলেছিলেন কি না?
৪. মেট্টো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের নাম ব্যবহার করে ১৬/০১/২০০৫ তারিখে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ধানমন্ডি শাখায় চারটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা বর্ণিত ট্রাস্টের ৩৪০৭৬১৬৫ নং হিসেবে জমা হয়েছে কি না?
৫. আসামি বেগম খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা পে-আর্ডরের মাধ্যমে ট্রাস্টে জমা দেওয়ার জন্য ওই টাকা তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব আসামি মনিরুল ইসলাম খানকে দিয়েছিলেন কি না? এবং এই আসামি মেট্টো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের নাম ব্যবহার করে পূর্বে বর্ণিত পাঁচটি পে-আর্ডারের মাধ্যমে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা ট্রাস্টের নামে জমা করেছিল কি না?
৬. হারিছ চৌধুরী ২৭ লাখ টাকা উক্ত ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার জন্য সহকারী একান্ত সচিব আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নাকে দিয়েছিল কি না? এবং ওই টাকা চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দিয়েছেন কি না?
৭. আসামি খালেদা জিয়া অপরাপর আসামিগণের যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রী পদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিএনপির বিভিন্ন দলীয় ব্যাংক হিসাব হতে দলীয় সিদ্বান্ত ছাড়াই অনিয়মিতভাবে ছয় কোটি ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ টাকা ট্রাস্টে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন কি না?
৮. টাস্টের অর্থ ব্যয় করে ট্রাস্টের নামে ছয় কোটি ৫২ লাখ সাত হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে কি না? এবং ক্রয়কৃত ৪২ কাঠা জমি দলিলমূল্যের চেয়ে এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বেশি দেওয়া হয়েছে কি না?
৯. ট্রাস্টের তহবিল থেকে তোলা টাকা চ্যারিটেবল কাজে ব্যয় করা হয়েছে কি না?
১০. ২০০১-২০০৬ মেয়াদের পরবর্তী সময়ে বর্ণিত ট্রাস্টে ব্যাংক হিসাবে আর কোনো অর্থ জমা হয়ছে কি না?
১১. আসামি বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর পদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাপর আসামিদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধভাবে মোট তিন কোটি টাকা সংগ্রহ, জমা ও খরচ করেন কি না?
১২. আসামি আবুল হারিছ চৌধুরী, জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইাসলাম খান তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা সংগ্রহ জমা ও খরচ করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আসামি খালেদা জিয়াকে সহযোগিতা করেছেন কি না?
১৩. আসামিরা ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দন্ড বিধির ১০৯ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন কি না?
১৪. প্রসিকিউশনপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন কি না?
১৫. আসামিগণ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য কি না?