ঐক্যফ্রন্ট: দলছুট বুড়ো খোকাদের গোল্লাছুট

প্রশান্তি ডেক্স॥ ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ : আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গঠিত, সর্বাধিক আলোচিত-সমালোচিত ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন তথাকথিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দলছুট রাজনৈতিক পল্টিবাজ বুড়ো-খোকাদের ‘গোল্লাছুট’। এই বুড়ো-খোকারা নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক আদর্শ এবং দর্শন ধারণ করেন না। সকালে এক ঘাটের পানি খেয়ে, মুহূর্তে মুখ মুছে বিকালে অন্য ঘাটে মুখ ডোবায়। অতীত বলেও এই খোকারা শতভাগ রাজনৈতিক আদর্শবিহীন। এরা সুযোগ সন্ধানি, লোভি, স্বার্থপর। যেঘাটে স্বার্থ খুঁজে পায় সে ঘাটেই নোঙ্গর ফেলে। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো পল্টিবাজ এই বুড়ো-খোকাদের রাজনৈতিক ময়দানে আদর্শ, লক্ষ্য, জাতীয় স্বার্থ গৌন, শুধু নিজেদের স্বার্থটাই শুধু মুখ্য।Yakkofont dolsot boru
তথাকথিত ‘জাতিয় ঐক্যফ্রন্ট’ বলছি একারণে যে জাতীয় ঐক্য হয় তখন, যখন একটা গোটা জাতি জাতীয় প্রয়োজনে একত্রিত হয় তখন তাকে জাতীয় ঐক্য বলে। যেমন, ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গোটা জাতি একত্রিত হয়ে দেশ স্বাধীনের লক্ষ্যে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আবার ২০১৩ সালে যুদ্ধপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে তরুণ প্রজন্ম একত্রিত হয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছিলো। এই দু’দফাতেই প্রকৃত জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিলো, সেকারণেই সফল হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামীবিরোধী আদর্শহীন বুড়ো-খোকাদের দল নিজেরা নিজেদের স্বার্থে একটি তথাকথিত ‘ঐক্যফ্রন্ট’ বানিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে যেভাবে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য (রাজনৈতিক মসনদ) স্পর্শ করার চিন্তা-ভাবনা করছে তাতে আসন্ন শীতকালীন নির্বাচনে বিনোদনের অভাব হবে বলে মনেই হচ্ছে না। এই ‘গোল্লাছুট’-এ সব রাজনৈতিক পল্টিবাজদের অংশগ্রহণ করতে দেখে আমি ভাবছি এই খেলায় কে যে কার সাথে আছে, আর কে যে কার সাথে নেই, সেটা বোঝা বড্ড মুশকিল! এমনকি পল্টিবাজ বুড়ো-খোকারা নিজেরাও নিজেদের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত নন!
এই ‘ঐক্যফ্রন্ট’-এর ঐক্য মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে তখনই পথ খুঁজে পাবে, যখন তা বাংলাদেশ-বিরোধী শক্তিকে মোকাবিলা করার সাহস রাখবে। ‘ঐক্যফ্রন্ট’ গঠনকে কেন্দ্র করে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, জামায়াত থাকলে কোনও জোট করবেন না তিনি। কিন্তু গত ২৬ অক্টোবর তারিখে একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আমরা ২০ দলীয় জোটে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপি সেখানে ২০ দলের প্রতিনিধিত্ব করছে। ২০ দলের পক্ষ থেকে তো বিএনপি নেতারা মঞ্চে গিয়ে বক্তব্য রাখছেন। তারা আমাদের হয়েই কথা বলছেন।’ তাহলে কি বিশদলীয় জোটের শরিক ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ও এই ‘ঐক্যফ্রন্ট’-এ রয়েছে? তার মানে ‘ঐক্যফ্রন্ট’ মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র চাওয়া-পাওয়া নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামছে? ‘ঐক্যফ্রন্ট’ তাহলে প্রকৃতপক্ষে ‘জামায়াতী ফ্রন্ট’-এরই আরেক নাম?
পরিচিতি: প্রসিকিউটর, মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাব্যনাল

Leave a Reply

Your email address will not be published.