চলমান সংলাপ থেকে জনগনের জন্য কোন অর্জন চোখে পড়ে না। অতিতেও চোখে পড়েনি এবং বর্তমানেও পড়বে বলে আশা করা যায় না। আমাদের দেশের এই সংলাপ যেন ব্যক্তি স্বার্থ হাছিলের একটি উপলক্ষ্য মাত্র। এই কয়েকদিনের সংলাপে তাই প্রতিফলিত হয়েছে। যার যত স্বার্থ আদায় হয়েছে সে ততই খুশী হয়েছে। আর এই স্বার্থ আদায়ের ক্ষেত্রে জিম্মি হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে আমাদের মত নিরিহ সাধারণ জনগণ। তবে এই জনগণের মধ্যেতো তাড়াও রয়েছেন প্রকারান্তরে। স্বার্থ আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল এবং গ্রুপ একত্রিত হয়েছে যারা নিজে ছাড়া এবং তাদের পরিবার ছাড়া কোন জনসমর্থন নেই। তবে বিএনপির জনসমর্থনে ভর করেই এগুচ্ছে এবং পাশে পাশে শক্তি হিসেবে এবং পরিকল্পক হিসেবে রেখেছে জঙ্গি সংগঠন সদ্য নিষিদ্ধ জামায়াতকে।
সংলাপ চলছিল প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় এবং দেশের উন্নয়নে সকলে মিলে একযোগে কাজ করার লক্ষ্যে। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যাঙ একপাল্লায় উঠতে অতিতে দেখিনি এবং ভবিষ্যতে দেখবো বলে আশাও করিনি। কারণ আমাদের জ্বীনগত সমস্যাতো রয়েই গেছে। এই পরিবর্তনের যদি কোন ঔষধ বা ফর্মূলা আবিস্কৃত হতো তাহলে হয়তো অদূঢ় ভবিষ্যতে জাতি দেখতে পেতো জাতিয় প্রয়োজনে ব্যাঙ একপাল্লায় উঠেছে এবং একসঙ্গে গুনগান করে সমস্বরে এগুচ্ছে। যাক সেই কথায় না গিয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কিন্তু সকলেই একই বুলি আওড়ায়। আর ঐ বুলিটাই হলো দেশের এবং জনগণের উন্নয়ন এবং তা হবে সাম্যের ভিত্তিতে। খুবই ভাল এই কথার কথা বা ফাকা বুলিগুলি এখন বাতাস বাড়ি করে ওজন স্তরে এমনকি মহাশূন্যে বা বায়ূমন্ডলে আর কোন জায়গা না থাকায় কাজে লাগছে না। আমরা যদি জনগণের সেবা বা উন্নয়নই করতে চাই তাহলে কেন আমাদের মধ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মহড়া বা মল্লযুদ্ধ চলবে। ক্ষমতা ছাড়া কি কোন উন্নয়ন বা সেবা করা যায়না? অথবা গেলেও করতে চাই না। বিষয়টি আসলে এমন যে আমার সেবা বা উন্নয়নের দোহায় দিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসতে চাই এবং নিজের ও পরিচিতজনের আখের গোছাতে চাই। তাই টার্গেট একটিই আর সেটি হলো ক্ষমতার মসনদ। এই মসনদে বসার জন্য জনগণের চোখে দোলা বা ধোকা দেয়ার যত আয়োজন তার কোনটিই বাদ দিতে চাই না। এই হলো আর কি?
দেশ যে গতিতে এগুচ্ছে তারদিকে তাকিয়ে হয়তো এখন দিশেহারা বা নিজের ভূল বুঝতে পেরে আবার ক্ষমতায়ও যেচে চায়; যাতে কিছু একটা করে অতিতের ভুলের প্রায়শ্চিত করতে পারে। তবে অবস্থাদৃষ্টে আপাতত এমনটি মনে হচ্ছে না। যারা এখন বিভিন্ন ব্যানারে লাফাচ্ছেন ও মিডিয়ায় গলা ফাটাচ্ছেন তাদের প্রত্যেককেই জনগণ জানে এবং তারা জনগণের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ এক বোঝা হিসেবে দেশ, দল এবং সমাজ সংসারে বিরাজমান। কিন্তু এই বোঝাগুলি মোক্ষম সময়ে মার চেয়ে মাসির দরদ দেখাতে প্রারঙ্গম। যে কথা জনগণ বলে না এমনকি বলার প্রয়োজনীয়তাও উপলব্দি করেনা সেই কথা বলে গলা ফাটায় এবং ফায়দা লোটার চেষ্টা তদ্বিরে গরুর রক্তচোষা আঢাইল্লার মতো লেগে থাকে। একসময় এই মানুষগুলি ছিল কাকের মত চালাক; (যেমন গ্রামে ছনের ঘরে বা রান্না ঘরের চালে কাক তার চুরি করা জিনিসটি লোকাতো এই ভেবে যে, কোন মানুষ এমনকি অন্য কাকেরাও দেখেনি)। কিন্তু লুকানোর পর যখন নিশ্চিন্ত মনে অন্যত্র গমন করতো তখন কেউ না কেউ ঐ লুকানো জিনিসটি নিয়ে যেতো। আর বর্তমান সময়ে এদের অবস্থান এখন গ্রামের ঋৃষিপাড়ার মলত্যাগের দৃশ্যের মত। যেমন সবাই একসঙ্গে এসে খোলা জায়গায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিত; দেয়ার সময় মাথা নত করে নিচু হয়ে থাকত অথবা কথাও বলতো। যেন লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছে। এই দেখে আমরা পথচারিরা লজ্জায় মিয়ম্রান হয়ে যেতাম এবং একটি বাক্যে সবাই স্বীকার করতাম; (হাগুইন্না বেডি / বেডার লাজ নেই; দেখুন্না বেডির/বেডার লাজ (শরম) আছে)। বয়সের ভাড়ে নূহ্য এবং রাজনীতির চাপে বোঝা বয়ে বেড়াতে অক্ষম ঐ লোকগুলোর আজকের দশাও তাই।
সংলাপ থেকে কি পেলো?-আসলে জনগণ পেয়েছে একটি নিশ্চয়তা যে, আগামী দিনে অশান্তির আগুণ একটু কম জ¦লবে। কূটনৈতিক তৎপরতা এবং ষড়যন্ত্র আপাতত ভিন্ন আঙ্গীকে মোড় নিবে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার এবং আন্তরিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পেলো যার ফলশ্রুতিতে কিন্তু আন্দোলনকারীরা পিছু হটে একটি বর্ডার লাইন থেকে ছিটকে পড়েছে মাত্র। জনগণ চেয়েছিল যে, একটি ঐক্যমত্য পৌঁছার প্লাটফর্ম তৈরী হউক এবং আগামী দিনে আর কোন আন্দোলন ও সংগ্রামের মাহেন্দ্রক্ষণ না আসুক। যেভাবে দেশ এগুচ্ছে সেভাবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক। বর্তমান অভিভাবকই এই উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দ্বাড় করিয়ে দিয়ে যাক। নতুন প্রজন্মের জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তাসহ মৌলিক চাহিদাগুলি সকলের জন্য উন্মুক্ত দ্বারে দৃশ্যমান হউক। কিন্তু এই আশাতে গুড়েবালি হলেও মঙ্গলের ইঙ্গিতবাহীও বটে।
লাভ-লোকসানের শুন্য খাতায় এখন যোগ হয়েছে একটি আকাঙ্খার ছোবলের পরিসমাপ্তি। কিন্তু এই আকাঙ্খা কখন যে আবার নতুন মোড়কে উন্মোচিত হয় তাই দেখার বিষয়। তবে নির্বাচনী আমেজে এখন দেশ মগ্ন হতে চলেছে। সদ্য ঘোষিত হওয়া নির্বাচনের তফসিল কিন্তু সর্বসাধারণের কাছে একটি বার্তাই পৌঁছে দিয়েছে যে, আইন এবং সময় এই দু-ই-ই চলবে তা নিজস্ব গতিতে এবং সময়ের পরিক্রমায় ঘূর্ণায়মান দূরদর্শী স্বাধীন গতিতে। এখানে কারো জন্য অপেক্ষা বা সময় ক্ষেপেনের সময় নেই। পৃথিবীর গতি যেভাবে দ্রুত লয়ে এগুচ্ছে ঠিক তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই এগুচ্ছে বর্তমান সময়ের সবকিছু। কেউ মিছ করলে পিছনে পড়ে হাবুডুবু খেতে হবে। গত নির্বাচনের দৃষ্টান্ত থেকে এই দেশের সকলেরই একটি শিক্ষা নেয়া দরকার আর ঐ শিক্ষার আলোকে বর্তমান নির্বাচন অনুষ্ঠান এখন যুগের দাবি। হ্যা একটি বিষয় স্পষ্ট যে, ঐক্যমত্য প্রয়োজন। এই ঐক্যমত্য যদি হতো সবগুলি নির্বাচনমুখী দল ও মতের মানুষগুলির মধ্যে তাহলে হয়ত সময় এবং গতিকে পরাস্থ করে কিছু একটা করা যেতো। কিন্তু সেখানেও ঐ ঐক্যমত্যই বিরাট বাধা। তবে এই ঐক্যমতের বাধাতে প্রতিফলিত হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
দেখার বিষয় আগামী দিনগুলোতে সরকার এবং বিরোধীদলগুলো কিভাবে জনগণের কল্যানের কথা চিন্তা করে সামনে এগুয়। যেহেতু সকলেরই চিন্তা জনগণকে নিয়ে। তবে আশার প্রদীপ জ¦লার মত জায়গা এখনও রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তিনি তাঁর মেধা ও অভিভাবকত্ব এবং মননশীলতা দিয়ে সকল অমঙ্গলকেই যে জয় করবেন এটার নিশ্চয়তা শতভাগ। কারণ তিনি সকলেরই অভিভবাক। সকলের দেখভাল করার দায়িত্বই এখন তাঁর কাধে। তিনি কাজও করে যাচ্ছেন সকলের তরে। এখনও যেসকল অসংগতি চোখে পড়ে সেগুলো দুরীভূত করাও প্রধানমন্ত্রীর কাজ; আর তিনি তা করতেই আগামীবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি ও নির্বাচন কমিশন এখন দেশ পরিচালনায় পরিপূরক হয়ে জনগণের আকাঙ্খা ও অভিপ্রায় পূরণে কঠোর ও দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাবে এটাই কামনা। তবে সাধারণ জনগণকে মুক্তবিহঙ্গের ন্যায় চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখায় মনোযোগী হতে হবে। নির্বাচন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক আগামীর জন্য; এটাই আমাদের কামনা এবং অর্থবহ নির্বাচন করে দেখিয়ে দেয়া হউক ঐ দুদল্যমান দিশেহারা হতাশাগ্রস্থ মানুষগুলিকে।
সংলাপের অংশগ্রহনকারী সকলকেই ধন্যবাদ জানাই কারণ তারা এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদেরকে চিনিয়েছেন এবং আগামী দিনে তিনারা কি করবেন এই দেশবাসীর জন্য তা প্রকাশ করেছেন। আর দেশবাসী সেই প্রকাশের আলোকেই তাদের আগামীর সিদ্ধান্ত নিতে এগিয়ে যাবেন। যেহেতু নির্বাচন এবং মনোনয় ও শৃঙ্খলা এখন একসূত্রে গাথা সেহেতু এই বিষয়গুলি গুরুত্ব দিয়ে জনগুরুত্ব বুঝে অগ্রসর হতে হবে। কোনরকম ভূল করা চলবে না। সতর্কতার সহিত এগিয়ে যেতে হবে। মনোনয়ন বঞ্চিতরা মনোনীতদের পক্ষে কাজ করতে এবং আগামীর জন্য নিজের আমলনামার ঝুলি ভারী করবে এটাই কাম্য। তবে নির্বাচন বর্জন বা নির্বাচন বাধাগ্রস্থ করা কারোরই কাম্য নয় বরং এই নিব্র্াচনকে উৎসবমূখর ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা এখন সকলেরই দায়িত্ব। তাই দায়িত্ব পালনে সচেতন হই এবং ইসিকে সহযোগীতা করি তার দায়িত্ব পালনে। কোনরকম ব্যাত্যয় ঘটলে তার বিরুদ্ধে সোচ্ছার হই এবং ঐ প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবেলা করে সঠিক দৃষ্টান্তের ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শণ করি।
যারা এখন মনক্ষুন্ন তাদেরকে নিজের ভাই, বন্ধু এবং সহকর্মী ও সহযাত্রী ভেবে বুকে তুলে নেই। তাদের দু:খ ভোলাতে বা গোছাতে এমনকি নতুন করে একসঙ্গে পথ চলতে উৎসাহ যোগায়। কারণ তারা ও আমরা সকলে মিলেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে বিভক্ত করতে চাই না। দেশ এক এবং এইদেশের জনগণও এক এবং অভিন্ন। এই সত্ত্বা জাগ্রত করি। মিডিয়ার মাধ্যমে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাউকে ক্ষেয়পতিপন্ন না করি। হাম্বরা ভাব এমনকি হামছে বড়া কনহে আচরণে আড়ষ্ট না হই। নেতিবাচক আসক্তিগুলিকে বিসর্জন দিয়ে ইতিবাচক আসক্তির চর্চায় মনোনিবেশ করি। এই সংলাপে কেউ হারে নাই এবং কেউ জিতে নাই। সবাই-ই যার যার অবস্থানে অনড় এবং যার যার অবস্থান থেকে সে জয়ী বলে ভাবছে। আমরা সেই ভাবনায় শক্তি যোগাতে চাই। তবে সংলাগে হেরেছি আমরা সাধারণ জনগণ; যারা দল এবং নির্দলীয় অবস্থানে নিজেদেরকে প্রকাশ করি। একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সরকার এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সৌজন্যতা, সৌহাদ্য এবং আন্তরিক হৃদ্যতাসম্পন্ন যোগাযোগ সম্বদ্ধ স্থাপিত হয়েছে এই সংলাপের মাধ্যমে। দীর্ঘদিনের জমানো বরফ এবং গলতে শুরু করেছে। এই সম্পর্কের কারণে কিছু করার আগে বিবেক প্রসন্ন হয়ে নেতিবাচকতা পরিহার করে ইতিবাচকতার প্রকাশ ঘটার উন্মুক্ত ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয়েছে। আমরা এই দৃশ্যমান অবস্থাকে স্বাগত জানাই এবং সকলে মিলেই বাংলাদেশ এই মতাদর্শে বিশ্বাসী হই। সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।