আমেরীকার সফলতার গল্প

প্রশান্তি ডেক্স॥ পৃথিবীর একটা বিরাট জনগোষ্ঠির কাছে অ্যামেরিকা হচ্ছে স্বপ্নের দেশ। এইদেশে আসার জন্য অনেকে জীবন বাজি পর্যন্ত রাখেন। অনেকেই বেআইনিভাবে বছরের পর বছর ধরে মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন, ইমিগ্রেশন পুলিশের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে করতে একটা জীবন কাটিয়ে দেন – তবু এদেশ ছেড়ে যান না। Amrikaer Sofoloter Golpo
সাধে কী আর অ্যামেরিকানরা বলেন ” America is the land of opportunities?”
যে মানুষ জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে এইদেশে কিছু করতে পারেনি, সে পৃথিবীর আর কোন দেশেই কিছু করতে পারবে না। এইটা মোটামুটি নিপাতনে সিদ্ধ সত্য।
দেড়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর এক নম্বর ইকোনমির এই দেশ। এখানকার দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তিও দুইবেলা রুটি-মাংস খাবার ক্ষমতা রাখেন। লজ্জা নিবারণের পোশাক তাঁর থাকে। এখন পোশাক পড়া না পড়া সেটা অবশ্য তাঁর ব্যক্তিগত নির্বাচন।
বেশিরভাগেরই মাথার উপর ছাদ থাকে। বেঁচে থাকার জন্য প্রধাণ তিন উপাদানই এই দেশে সহজলভ্য।
অলিখিতভাবে পৃথিবী নামের গ্রহটির রাজধানী হচ্ছে অ্যামেরিকা এবং এই দেশের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা সম্রাট!
কিভাবে এই দেশটি এত সফল হলো?
অনেকগুলো কারণের একটি হচ্ছে, এরা মানুষের মস্তিষ্কের মূল্য বুঝে। পড়াশোনায় মাথা আছে এমন ব্যক্তির খোঁজ পেলেই ওরা তাঁকে নিজেদের দেশে রেখে দেয়ার জন্য অস্থির হয়ে যায়। পিএইচডির ছাত্রদের তাই এই দেশে স্থায়ী হতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়না। এদেশের সরকারই নিজেদের আগ্রহে ভিসা, গ্রীন কার্ড, সিটিজেনশিপের ব্যবস্থা করে দেয়।
বেশ অনেক বছর আগে এক যুবকের জন্যও এমন সুযোগ এসেছিল। যুবক তখন মাত্রই নিজের পিএইচডি ডিফেন্ড করেছিলেন। তাঁকে তাঁর প্রফেসর অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন, “তোমার ভিসা-গ্রীনকার্ডের জন্য আমি ব্যবস্থা করতে পারি।”
যুবক তখন বলেছিলেন, “তার আর দরকার হবেনা, আমি দেশে ফিরে যাচ্ছি।”
হতভম্ব শিক্ষক কিছু বুঝতে পারলেন না। এইভাবে ” land of opportunities” কে কেউ অবহেলা করে? তিনি অন্তত জীবনেও দেখেননি।
যুবকের স্ত্রী বললেন, “দেশে গিয়ে আমরা কী করবো? ওখানে আমাদের টানাটানি করে সংসার চালাতে হবে। এদেশে থেকে গেলে কী অসুবিধা?”
যুবক তখন শান্ত গলায় বলেছিলেন, “আমার বাবা এই কারনে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হননি যাতে তাঁর সন্তানেরা বিদেশে গিয়ে বাস করতে পারে।”
স্ত্রীও কিছু বলেন নি। যে লোক টেপ রেকর্ডারে করে বাংলাদেশের বৃষ্টি এবং ব্যাঙের ডাক শোনে, তাঁর মতন পাগল দেশপ্রেমিককে কতদিনই বা তাঁর দেশ থেকে দূরে ধরে রাখা সম্ভব?
যুবক তাঁর পরিবার, একটি একশ ডলারের নোট এবং একটি ফ্রিজ সাথে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। সাতবছর প্রবাস জীবনে এই তাঁর সম্পত্তি। মাতৃভূমিতে তাঁর ভবিষ্যত কী, তিনি জানেন না। একটা পিএইচডি ডিগ্রী আছে – সেটাই ভরসা।
ডিগ্রী ছাড়াও তাঁর আরেকটি ভরসা আছে। সেটি হচ্ছে শখের লেখালেখি। কিন্তু লেখালেখি করে আমাদের মতন গরীব দেশে, তাও কিনা আবার যুদ্ধ বিদ্ধস্ত, কিই বা করা সম্ভব?প্রায় চল্লিশ বছর পর তিনি যখন শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কফিনে শুয়ে পৃথিবী থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন তাঁকে বিদায় দিতে পুরো রাষ্ট্র যেন ভেঙ্গে পড়ছিল। যারা সেদিন সেখানে যেতে পারেন নি, তাঁরা টেলিভিশনের পর্দায় তাঁদের প্রিয় মানুষটির জন্য চোখের পানি ফেলছিল। এসবই তাঁর চল্লিশ বছর ধরে কলম সেবার ফল!
কফিনে শুয়ে শুয়ে তিনি হয়তো উপলব্ধি করেছিলেন, তাঁর দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত মোটেও ভুল ছিল না।
এত মানুষের ভালবাসা পেলে এক জীবনে আর কী লাগে?
তেরই নভেম্বর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক, গল্পের জাদুকরের জন্মদিনে ক্যানভাস গ্রুপের পক্ষ্য থেকে তাঁর প্রতি রইলো অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
পরকালে তাঁকে যেন উপরওয়ালা শান্তিতে রাখেন, এই কামনা করছি।
***ছবিটি ক্যানভাস গ্রুপের ওয়ার্ল্ডফেমাস চিত্রকর  Zahedur Rahman Robin ভাইয়ের কাছ থেকে নেয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published.