আসন্ন নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে মরিয়া এখন সকলেই। দল ও মতের ভিন্নতা থাকাসত্তেও মানুষ এখন তাকিয়ে আছে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের দিকে। তবে বিএনপি জামাতের সৃষ্টি ঐক্যজোট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কিনা তা সকলেরই সন্দেহের কারনে পরিণত হয়েছে। তবে যদি এবার নির্বাচন বিমুখতায় গা ভাসায় তাহলে অস্তীত্ব বিলীনের হাত থেকে রেহাই মিলবে না। তবে তাদের অতীতের অপরিপক্ক রাজনীতির খেলা যদি এবারও চর্চায় আনে তাহলে ডুবন্ত দলের ও মতের চীর সমাধী রচিত হবে।
সমগ্র দেশের মানুষকে একসঙ্গে এই নির্বাচনী জোয়ার সামিল করানো কিন্তু বিশাল বড় এক কাজ; আর এই কাজে প্রাথমিকভাবে সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশে এবং বিদেশের সকলকে বোঝাতে এবং দেখাতে সক্ষম হয়েছেন যে, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে তার সদিচ্ছা এবং সকলের জন্য তার দরজা খোলা এমনকি সাংবিধানিক কাঠামোয় শক্ত ভিতের উপর গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে যা যা প্রয়োজন তিনি তা করেছেন এবং করবেন। অনেকদিনের অভিযোগ এবং অবিশ^াস ও ক্ষমতার দ্বন্ধ সব মিলিয়ে ভয়ঙ্কর এক বিস্ফোরন এখন বরফ গলানো পানিতে ডুবিয়ে শান্তরূপে নির্বাচনী আমেজে উদগীরণ হচ্ছে। এই উদগীরনে মাঝে মাঝে গরম হাওয়ায় দোলা দেয়া হচ্ছে ষড়যন্ত্রের ঝাল বোনা এবং বিকাশ ঘটানোর করার কাজে।
এইতো নির্বাচন কমিশন যখন ঘোষনা করলো মনোনয়ন ফরম তুলতে আসার সময় ডাক-ডোল বাজানো এমনকি মিছিল সহকারে আসা নিষেধ। কিন্তু কে শুনে কার কথা। ঐদিন আওয়ামী লীগের মিছিলে আগত দুইজন গাড়ী চাপায় প্রাণ দিলো। আর তখন নির্বাচন কমিশনের টনক নড়ে আইন জারি করে হুশিয়ারী দিলো। কিন্তু ঐ হুশারীকে তোয়াক্কা না করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র নিয়ে বিএনপি প্রার্থী নমিনেশন মিছিলে আগত দেশ বিরোধী চক্র অতর্কিত হামলা চালালো আমাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের উপর। শুধু কি তাই! ঐ হামলা চালিয়ে শান্ত হওয়ার জন্য জালাও-পোড়াও নীতির বাস্তবায়ন করে গেল রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনাশ করে। কি লাভ হলো ঐ নারকিয় হামলা করে এবং গাড়ি জ¦ালিয়ে-পুড়িয়ে। পুলিশকে ধন্যবাদ এবং প্রশংসা দেয়ার কোন ভাষা নেই আমার কাছে তবে পুলিশ ঐদিন যা দেখিয়েছে তা বিরল এবং জাতি মনে রাখার মত। সেবক এবং মনিব প্রভুর আচরণের ফারাক পাওয়া গেল ঐ হামলার স্বীকার পুলিশ সদস্যদের আচরণ থেকে। এগিয়ে যাও তোমরা, জাতি তোমাদের সঙ্গে রয়েছে। সমগ্র জাতি ঐ হামলার জন্য ঘৃণা জানিয়েছে।
একটি বিষয় স্পষ্ট যে, মিডিয়ার কল্যাণে ঐ ফুটেজের সমস্ত কিছুই এখন উন্মুক্ত। তাই ঘটনার পরে যে মিথ্যাচার বিএনপি কর্মী এবং নেতারা করে যাচ্ছেন তাতে করে তাদের অর্জীত অবশিষ্টাংশটুকু ঘৃনায় পর্যবসিত হয়েছে। তাই নিলর্জ্জ্ব বা বেহায়া মানুষের চারিত্রিক আচরণ থেকে বের হয়ে এসে সাধারণ মানুষের কাতারে সত্যের আবরণে মিথ্যার লেবাস পরিহার করে সকল ষড়যন্ত্র ত্যাগ করে মানুষের কাছে অতীতের কৃত কুকর্মগুলোর দায় মাথায় নিয়ে ক্ষমাচেয়ে আগামী দিনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া সময়ের যোগ্য দাবী। এই দাবী উপেক্ষা করে রাজনীতিকে আর বাঁচিয়ে রেখে সামনে এগিয়ে নেয়া যাবে না। সুতরাং চোখের এবং কানের পর্দা ও খড়কুটো পরিস্কার করার সময় এখনই। নয়তো জনগণ প্রত্যাখ্যান করে এর জবাব দিয়ে অপরাজনীতি থেকে রাজনীতির চিরবিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দেবে। ঐক্যফ্রান্টের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে বিএনপি এখন তাদের দলীয় আদর্শ থেকে বিচ্যুত এবং আগামী দিনে দলীয় রাজনীতি থেকে হবে নির্বাসিত। দলছুট ঘুণেধরাদের এমনকি স্বার্থপরদের দিয়ে ঘুমন্ত বিএনপিকে টেনে তুলা যাবে না বরং কুমা থেকে কবরে পাঠানোতে সহায়তা করবে মাত্র। আর এইভাবে চলতে থাকলে হয়তো বিএনপি এবং এর ফাউন্ডারকে চিরদিনের মত ধুলায় মিশিয়ে নি:শেষ করা হবে।
দলীয় ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে তা কিন্তু দলকে ডোবানোর দায়িত্বের একটি অংশ মাত্র। তবে এই বিভেদ মিমাংশায় পরিণত হওয়া দরকার। সম্মান এবং দায়িত্ব এই দুইয়েই ঐ বিভেদ অবসান করা সম্ভব। তবে প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ঐ বিভেদে পানি ঢালা এখন ফরজে আইন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই বিভেদের ক্ষেত্র কিছুটা প্রশমিত করেছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। আর এই প্রশমনে যদি বিভেদ শেষ হয় তাহলে আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনা আরো সহজ হবে তাঁর জন্য। জোটগতভাবেও ঐ দায়িত্ব এবং ক্ষমতা ও দ্বন্ধের অবসান ঘটানো এখন ফরজে আইনে পরিণত হয়েছে। তাই শেখ হাসিনা কঠোর ও প্রাজ্ঞতায় ঐ জোটগত যাবতীয় সমস্যার সমাধান করেছেন শক্তহাতে। প্রার্থী, প্রতিযোগী এবং ভোটার এই তিনের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়েছেন এমনকি স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে নিজ নিজ ভূমিকা পালনে উদ্ভুদ্ধ করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিনে এই দায়িত্ব এবং ভাগ বাটোয়ারাই অনেক পিছিয়ে বিএনপি। তাদের ছাড়ের বিষয়টি এখনও উপেক্ষীত। কারণ দলীয় প্রধান হিসাবে কে আসবে এবং কে দল চালাবে এখানেও নেই কোন সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। আর জোটের প্রধান হিসেবে কাকে সরকার প্রধান বানাবে তারও কোন সুরাহা স্পষ্ট নয়। জনে জনে কথা বলা এবং সিদ্ধান্ত নেয়া ও মিডিয়ার সামনে এসে নিজেকে জাহির করা একটি নাটকের চরিত্র ও দৃশ্যের অবতারণা মাত্র। তবে এই অবস্থা বেশীদিন স্থায়ী হওয়া সম্ভব নয়। বেঙ্গ এক পাল্লায় উঠে না এই কথাটি সত্য। তবে এখন যে, ব্যাঙ্গ এক পাল্লায় উঠেছে তা কিন্তু ঠিক নয় বরং এর ব্যতিক্রম হয়েছে কিছু সুবিধাভোগী বা সুবিদাবাদি চিহ্নিত চেহারার মাধ্যমে। ঐক্যজোট এবং দলগত আলোচনা ও সিদ্ধান্তের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে যা আগামী দিনের শৃঙ্খলা এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অন্তরায়। এখানে যদি পরিস্কারভাবে কাজ করা না হয় তাহলে আমাদের আশাহত হওয়া ছাড়া আর কোন গত্যন্তর থাকবে না।
দেশের মানুষ যে আশা ও আখাঙ্খা নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের দিকে তাকিয়ে আছে তা বিফলে যাওয়ার মত যদিনা তাদের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া পাকাপোক্ত না করা হয়। তবে সবাইতো আর তাদের (ঐক্যফ্রন্টের) সমর্থক নয় বরং সবাই যার যার মতাদর্শে বিশ^াসী কিন্তু সবাই এইজায়গায় একমত যে, কেউ আর আগুন সন্ত্রাস, জ¦ালাও-পোড়াও এবং অস্থিতিশীলতা দেখতে চায় না। সবাই চাই সকলের অংশগ্রহণে একটি উৎসবমূখর নির্বাচন হউক। আর ঐ নির্বাচন থেকে একটি সরকার বের হয়ে এসে দেশ সেবায় মনোনিবেশ করুর। দেশের যে উন্নতি এবং অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তার একটি চলমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক। দেশবাসী এবং উপকারভোগী জনগণ এই কথা মাথায় রেখেই সামনে এগুবে এবং আগামী ৩০ ডিসেম্বর তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রদর্শন করবে।
নির্বাচনের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দেশ ও বিদেশে এর ব্যাপকতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ^াসযোগ্যতা এবং আশা আকাঙ্খার দোলনচাপায় নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশন এখন একটি মধ্যম অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। সরকারও এই কয়েকদিনের রুটিনমাফিক কাজের মাধ্যমে নির্বাচন কালীন সরকারের অংশই প্রকাশ করে যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত এইভাবে চললে আর প্রশ্নবৃদ্ধ শব্দটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না বরং গ্রহণযোগ্য হয়েছে এমনকি ইতিবাচক মনোভাবের জাগ্রত রূপ প্রকাশ পাবে। জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্খা এবং ঐকান্তিক কামনাও এইটিই। উঁচু-নীচু ভেদাবেদ এবং ক্ষমতা – দুর্বল এই দুইয়ের মধ্যে সাম্য বা ভারসাম্য আনয়নই এখন সময়ের দাবি। সরকার চাইলেই যে সবকিছু করা সম্ভব তা কিন্তু নয় বরং সরকারের সঙ্গে জনগণের যোগসূত্র তৈরী হলেই যা ইচ্ছা তা করা সম্ভবে পরিণত হবে। তাই আসুন আমরা দশে মিলে করি কাজ হারি যেতে নাহি লাই এই অবস্থানে এসে উপনিত হই এবং কাজের কাজটুকু সমাপ্ত করতে সাম্যের ভিত্তিতে সর্বদলীয়ভাবে এগিয়ে আসি।
নির্বাচন নিয়ে সব দলগুলিই নির্বাচন কমিশনে গিয়েছেন এবং তাদের স্ব স্ব মতামত তুলে ধরেছেন। তবে এই ক্ষেত্রে বিএনপি জামাত সৃষ্ট ঐক্যফ্রন্ট এর ব্যানারে যাওয়া স্বমহান নেতারাই একটু ব্যতিক্রম। তারা তাদের রাজনৈতিক দাম্বিকতা দেখিয়েছেন, আইন এবং বাস্তবতা এমনকি পেশীশক্তির বাচনভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। সবই যেন এক আশ্চয্য ক্ষমতাধর মহাপুরুষের হুংকার মাত্র। কিন্তু আসলে কি তাই? না খালি কলসীতে আওয়াজ বেশী হয় আর ঐ আওয়াজে সমাজ সংসার ও পরিবেশের ক্ষতি হয় মাত্র; এর বেশী কিছু নয়। তবে কমিশন এবং সরকার ও বহুজন যারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন তারা সকলেই ঐক্যমতে পৌঁছেছেন যে, সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন হবে এবং যথা সময়েই হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনও সেই সংবিধান এবং এর আলোকেই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সমাপ্ত করার লক্ষ্যে নির্বাচন দিয়েছেন। কিন্তু সেখাবে বাধ সাধেছেন বহুরূপের একরূপ ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু ঐ ঐক্যফ্রন্টের দ্বারা একটি জিনিস পরিস্কার যে, নির্বাচন কমিশন তার নিয়মানুযায়ী নির্বাচনের তারিখ পিছিয়েছেন এবং এর্ক্যফ্রন্টকে সম্মান জানিয়েছেন। এতে প্রমানিত হয় যে, নির্বাচন কমিশনও সকলের মতামতের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তারাও নিজেদেরকে আইনের আওতায় থেকে কাঠামো ঠিক রেখে স্বচ্ছতা প্রদর্শনের চেষ্টা করেন।
একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, ইতিবাচক রাজনীতির চর্চার একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেই মাত্রাটি হলো প্রধানমন্ত্রীর আসনে কোন প্রার্থী না দেয়া। এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত এবং এতে প্রমানীত হয় যে, প্রধানমন্ত্রী সকল দল ও মতের। আরো স্পষ্ট যে, সকলেই প্রধানমন্ত্রীর নের্তৃত্ব মেনে নিয়েছেন এবং আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতেও চেয়েছেন। প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রী তিনি এখন এবং আগামীতেও সকলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচনের পূর্বেই স্বীকৃতী পেয়েছেন। তাই এই ইতিবাচক দৃষ্টান্তটুকু আগামীর শান্তি, শৃঙ্খলা এবং স্থিতিশীলতা আনয়নে এক দিকনির্দেশক হিসেবে সারা পৃথিবীতে দিকপালের ভূমিকা পালন করুক। আমাদের দেশে এমনকি পৃথিবীতে এই প্রথম কোন প্রধানমন্ত্রী সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন এবং আগামী দিনে বিশ^নেতৃত্বের মাপকাঠিও বৃদ্ধি করেছেন। বিভিন্নজনে বিভিন্ন ব্যাখ্যা করলেও আমি এর ইতিবাচক দিকটুকুই দেখব এবং স্মরণে রাখব। ঐক্যের নেতা ড. কামাল হোসেন সাহেবকে ধন্যবাদ জানাই এই বিশাল মর্যাদার জায়গাটুকু তৈরী করার জন্য।